যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে তার বিশাল রাজপরিবার থেকে আলাদা করে চিহ্নিত করার জন্য সউদীরা এবং সউদী পর্যবেক্ষকরা তার নামের অদ্যাক্ষর ‘এমবিএস’ ব্যবহার করেন। তিনি এক বিশালকায় মানুষ যার উপস্থিতিতে স্থান সঙ্কুলান কমে যায়। সরকারি ও বেসরকারিভাবে তিনি আরব নেতাদের মধ্যে প্রচলিত আরবি প্রথা চালু করেছিলেন এবং তিনি তার বিশাল হাতগুলো নাড়িয়ে গভীর কন্ঠে উপভাষায় দ্রুত বক্তৃতা দিতেন যা চাপা গর্জনের মতো শোনা যেত। তিনি প্রায়শই এতটা প্রাণশক্তিতে উপচে পড়তেন যে, তার ভাবনাগুলো খুব দ্রুতগতিতে উদয় হতো এবং তার বাক্য শেষ করতে বাধা দিত। বিদেশি কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার সময় তিনি মাঝে মাঝে প্রশ্নোত্তর বিরতি না দিয়েই এক ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় ধরে ভবিষ্যত বিষয়ে বক্তৃতা চালিয়ে যেতেন। একজন বিদেশি কর্মকর্তা স্মরণ করেন যে, তাদের সাথে বৈঠকে কখনো যুবরাজের পা নাচানো বন্ধ হতে দেখা যায়নি। এতে কর্মকর্তাটি ভাবতেন যে, রাজকুমার নার্ভাস বা এটা হয়তো এক ধরনের উদ্দীপক হিসেবে তার কাজে দেয়।
সেদিন মঞ্চে এমবিএস তার বিদেশি সভাপতিকে ইংরেজি পারদর্শিতা দেখাতে তাকে ইংরেজিতে সম্বোধন করেছিলেন। তারপর ‘নিওম’ নামের আরো একটি উচ্চাভিলাষী প্রকল্প উন্মোচন করতে আরবী ভাষাতে ফিরে যান। নিওম এমন একটি শহর যা লোহিত সাগরের কাছে এক বিচ্ছিন্ন মরুভ‚মিতে গড়ে উঠবে। ব্যবসায়ীরা সেখানে আইন প্রণয়ন করবেন এবং সউদী মাটিতে থেকে উদ্ভাবনের জন্য বিশ্বসেরা চিন্তাবিদদের আকৃষ্ট করবেন। জ্বালানীবিহীন ভবিষ্যত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সূর্যকে কাজে লাগিয়ে শহরটি সৌরশক্তি দ্বারা চালিত হবে এবং বহু রোবট কর্মচারী থাকবে যেগুলো মানব বাসিন্দাদের তুলনায় সংখ্যায় অনেক বেশি হতে পারে। এমবিএস বলেছিলেন, নিওম নির্মাণে ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে এবং এটি হবে স্বপ্নবাজদের জায়গা। তিনি এটিকে কোনো অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্প নয়, বরং ‘মানবজাতির জন্য সভ্যতার এক ধাপ’ বলে অভিহিত করেন।
আলো কমিয়ে দিয়ে দর্শকদের প্রস্তাবিত শহর সম্পর্কে একটি চটকদার ভিডিও দেখানো হয়েছিল। এরপর অনুষ্ঠানের সভাপতিকে এক বিদেশি মহিলা সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, দেশটির ধর্মীয় রক্ষণশীলতা ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রকল্পে বাধা সৃষ্টি করবে কি না। এমবিএস এই ধারণাটিকে প্রত্যাখ্যান করে জোর দিয়ে বলেছিলেন, অসহিষ্ণুতা সউদী ইতিহাসের অঙ্গ ছিল। কিন্তু এখন এই দেশ সকলের কল্যাণের জন্য বাকি বিশ্বের সাথে মেলবন্ধনের চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, অতীতে আমরা এমন ধারায় ছিলাম না। আমরা যা ছিলাম কেবলমাত্র সেদিকেই ফিরে আসছি, একটি সহনীয়, ভারসাম্যপূর্ণ ইসলামের কাছে যা বিশ্বের জন্য, সমস্ত ধর্ম এবং সমস্ত ঐতিহ্য ও মানুষের জন্য উন্মুক্ত।
সউদী জনগণের ৭০ শতাংশই ৩০ বছরের কম বয়সী। সত্য কথা হলো, আমরা কোনও উগ্রবাদী ধারণা নিয়ে আমাদের জীবনের ত্রিশ বছর অপচয় করব না। আমরা আজ এখনই সেই মনোভাবকে ধ্বংস করে দেব। আমরা এমন একটি স্বাভাবিক জীবন নিয়ে বাঁচতে চাই যা আমাদের ধর্ম এবং আমাদের ইতিবাচক রীতিনীতি ও ঐতিহ্যকে সহনশীল হিসেবে প্রতিফলিত করে এবং আমরা বিশ্বের সাথে থাকতে চাই এবং সমগ্র বিশ্বের উন্নয়নে অবদান রাখতে চাই।
এরআগে কখনো কোনো সউদী নেতা প্রকাশ্যে এ ধরনের সংকল্প করেননি। এতে দর্শকরা করতালিতে ফেটে পড়েছিল। (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন