শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভারতের পেঁয়াজে উদ্বিগ্ন চাষিরা

রফতানি নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে কাল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

দেশে পেঁয়াজের দাম নাগালের মধ্যে এসে গেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বাজারগুলোতে এখন ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদনও হয়েছে প্রচুর। কিন্তু এর মধ্যে ভারত কাল (১৫ মার্চ) থেকে পেঁয়াজ রফতানি করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত না নিলেও কৃষকদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়ে গেছে। কৃষকদের শঙ্কা ভারত কম দামে পেঁয়াজ রফতানি শুরু করলে বৈধ-অবৈধ পথে ভারতীয় পেঁয়াজে বাংলাদেশের বাজার ছয়লাব হয়ে যাবে। যে স্বপ্ন নিয়ে কৃষকরা পেঁয়াজ উৎপাদন করছেন তা পাবেন না।

ভারত গত ২৬ ফেব্রæয়ারি পেঁয়াজ রফতানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয়; যা কার্যকর হবে ১৫ মার্চ রোববার। এ ঘোষণার পর থেকেই বাংলাদেশে পণ্যটির দাম কমতে থাকে।
গত বুধবার (১১ মার্চ) ভারতীয় পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক খবরে বলা হয়, দেশটির মহারাষ্ট্রের নাসিকে গ্রীষ্ম মৌসুমের পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। নাসিকের পেঁয়াজের বড় পাইকারি বাজার লাসালগাঁওয়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ সর্বনিম্ন ১০ রুপি ও সর্বোচ্চ ১৯ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গসহ অন্যান্য রাজ্যে পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যাপক। পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ায় ভারত রফতানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে। পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ায় কৃষকেরা দাম কমে যাওয়ার বিক্ষোভও করেছেন। এ অবস্থায় ভারত চায় দেশটির পেঁয়াজ বিদেশে রফতানি করতে। বিশেষ করে তাদের পেঁয়াজের রফতানির বড় বাজার বাংলাদেশে পাঠাতে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে সীমান্ত বন্ধ থাকায় পেঁয়াজের চালান বাংলাদেশে আসা দূরহ। তবুও কৃষকদের শঙ্কা ভারত পেঁয়াজ বাংলাদেশে পাঠালে কৃষকদের পেঁয়াজ উৎপাদন খরচ নিয়ে ঝুকির মুখে পড়তে হবে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে সরকারের উচিত কঠোর পদক্ষেপ নেয়া।

এর আগে ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার নিজেদের বাজার সামাল দিতে পেঁয়াজের রফতানিমূল্য টনপ্রতি ৮৫০ ডলার বেঁধে দেয়। এতে করে ১৫ টাকা রুপির পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৬৫-৭০ রুপি হয়। এরপর ওই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। আর তখন থেকেই বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে বিমানে করে আমদানি করা হলেও পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ২৫০ টাকায় উন্নীত হয়।

এখন কার্যত পেঁয়াজের ভরা মৌসুুম। সেই সঙ্গে শুরু হয় ক্রেতাদের অস্বস্তি। কিন্তু ভারতের পেঁয়াজ রফতানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার খবরে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন বাংলাদেশের পেঁয়াজ চাষিরা। তারা বলছেন, এখন নতুন মৌসুমের হালি পেঁয়াজ (সংরক্ষণ করা যায়) উঠতে শুরু করেছে। এই সময়ে দেশে ভারতীয় পেঁয়াজ আসলে দাম একেবারেই পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। রাজশাহীর পবা উপজেলার এক চরের কৃষক বলেন, এবার দেশে যে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে তা চাহিদা মেটাতে পারবে না ঠিকই। কিন্তু কৃষক যাতে পণ্যের মূল্য পায় সে জন্য সরকারের উচিত ভারতের পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশে বাধা দেয়া। কারণ ভারত গত বছর হঠাৎ করে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি করে যে বন্ধুত্বের পরিচয় দিয়েছে তার উচিত জবাব হবে ভারতীয় পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ফরিদপুর জেলায়। জেলার একাধিক কৃষক জানান, এবার চাষিরা প্রচুর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। যখন তারা আবাদ শুরু করেন, দাম অনেক চড়া ছিল। এখন যখন পেঁয়াজ উঠছে, তখন দাম কমে গেছে। এ অবস্থায় ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি করা হলে কৃষকদের দুর্দশা আরো বাড়বে।

অবশ্য ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ার পর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি একাধিকবার কৃষককে সুরক্ষা দেয়ার কথা বলেছিলেন। কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক কয়েকদিন আগে বলেছেন, কৃষকরা যাতে ন্যায্য মূল্য পায় সে দিকে লক্ষ্য রেখে পেঁয়াজ আমদানির বিপক্ষে সরকার।
দেশে পেঁয়াজ চাষ করেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা ধানের মতোই পেঁয়াজেও দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে পারেন সরকারি সহায়তা পেলে। ভারতীয় পেঁয়াজ বৈধ-অবৈধ পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে সরকারকে কঠোর হওয়ার অনুরোধ জানান ওই চাষিরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
GM Herok ১৪ মার্চ, ২০২০, ১:০১ এএম says : 0
শুধুমাত্র বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দামকে সারাবছর নাগালে রাখার জন্য এখানে যারা বাংলাদেশে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানিকে সাধুবাদ জানানোর মাধ্যমে বাংলাদেশি পেঁয়াজচাষী কৃষকদেরকে পেঁয়াজের পড়তি দামের ক্ষতি গছিয়ে সর্বশান্ত করার জন্য মুখিয়ে আছেন তাদের এই চরম আত্মঘাতী মনোভাব দেখলে আড়ালে মুখ টিপে টিপে হাসবে কেবল বাংলাদেশের বাজারলিপ্সু ভারত এবং বাংলাদেশের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মহলের গলাকাটা মুনাফালোভী আড়তদার সিন্ডিকেট চক্র। ভারতীয় পেঁয়াজ এবং বাংলাদেশের গলাকাটা মুনাফালোভী পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্র যে একে অন্যের জন্য "দুই দেহ এক প্রাণ" তা বুঝার মতো এলেম মনে হয় বাস্তবতাবিমুখ বাংলাদেশিদের এখনো হয়ে ওঠে নি। বছরের যেকোন সময়েই চালান বন্ধের আশঙ্কায় থাকা চরম অনিশচয়তাপূর্ণ এই ভারতীয় পেঁয়াজের বাজারে "উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতিই" যে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির আবহ তৈরি করে বাংলাদেশের বাজারে যেকোন মূহুর্তে পেঁয়াজের গলাকাটা মূল্যবৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্রের মূল "হাতিয়ার" তা এখনো বোকা বাংলাদেশিরা হাতেনাতে ধরতেই পারছে না। সব নষ্টের গোড়া হচ্ছে বাংলাদেশের বাজারে চাহিদার মাত্র ২০% যোগানদাতা এই ভারতীয় পেঁয়াজ, তাই বাংলাদেশের বাজারে সর্বনষ্টের মূল এই ভারতীয় পেঁয়াজের স্থানকে যখন থেকে বাড়তি দেশজ পেঁয়াজ উৎপাদন এবং সেই সাথে মিশর-তুরস্ক-পাকিস্তান-চীন এর মতো স্থিতিশীল সুনিশ্চয়তাপূর্ণ নব্য আমদানি রুটের পেঁয়াজ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যাবে তখন থেকেই গলাকাটা মুনাফালিপ্সু বাংলাদেশি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্রের পুরনো সেই হাতিয়ার তথা "বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতির" হাতিয়ারটা চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে। এই নিদারুণ সত্যটা বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হাড়ে হাড়ে বুঝতে পেরেছে বলেই ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির প্রতি বাড়তি শুল্কারোপ ও মৌসুমভেদে আমদানি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের দিকে ঝুঁকছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আর এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আমাদের দেশীয় পেঁয়াজচাষী কৃষকদেরকে বাড়তি পেঁয়াজচাষ ও বাড়তি পেঁয়াজ উৎপাদনে উৎসাহ দেয়ার জন্য তাদের উৎপাদিত পেঁয়াজের মূল্য নিশ্চয়তা দানও অত্যন্ত জরুরী। আমাদের মনে রাখা উচিত, পেঁয়াজের বাজারের চিরবন্ধু হচ্ছে আমাদের দেশীয় পেঁয়াজচাষী কৃষক ভাইয়েরা, আর পেঁয়াজের বাজারের চিরশত্রু হচ্ছে দেশীয় পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্র।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ১৪ মার্চ, ২০২০, ১:০১ এএম says : 0
কৃষক সুরক্ষার নাম করে জনগনের গলায় ফাস দিলে তো হবেনা, এতদিন পেয়াজের দাম ছিল চড়া, দাম যেন কোনোভাবেই আর না বাড়ে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে, প্রয়োজনে সেটা ভারত থেকে আমদানী করে হলেও। কৃষক সুরক্ষার নাম করে ভারত থেকে পেয়াজ আনা বন্ধ করে আবার পেয়াজের কেজি ১৫০ টাকায় উঠালে জনগন সেটা মেনে নিবেনা। পেয়াজের দাম যেন কোনো ভাবে ৪০ টাকা কেজি অতিক্রম না করে
Total Reply(0)
মেহেদী ১৪ মার্চ, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
পিয়াজের ব্যাপারে "স্বদেশপ্রেম" গত বছরই উবে গেছে। আমাদের "্বদেশি" ভাইদের আচরন তো এক বছর ধরে দেখলাম। পাব্লিককে অসহায় পেলে তারা কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে, সেটা তো একেবারে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। জাহান্নামে যাও "স্বদেশি" ভাইয়েরা, যেখানে সস্তা পেয়াজ পাবো, সেখানেই যাবো। আমাদের বিপদে তো তোমরা পাশে দাড়াওনি, আজ আমাদের কেন পাশে চাইছ?
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৪ মার্চ, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
কে উদ্বিগ্ন তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে কিন্তু ৩০০ টাকা কেজি পেঁয়াজ মনে করিয়ে দেয় এখন সময় হয়েছে ৩০/৩৫ টাকা কেজি পেঁয়াজ খাওয়ার। দেশি পেঁয়াজের নামে উচ্চ মূল্যে পেঁয়াজ খেয়ে নিজের ক্ষতি হয়ত কেউ করতে চাইবে না।
Total Reply(0)
সত্য হক ১৪ মার্চ, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
ভারতীয় পেয়াজ আমদানি ঘোষণার সাথেসাথেই পেয়াজের দাম পড়ে গেলো বুঝলাম না৷ ...?
Total Reply(0)
মশিউর ইসলাম ১৪ মার্চ, ২০২০, ১:০৩ এএম says : 0
ভারত ঘোষণা না দিলে, কখনো দাম কমতো না, তাই যারা মজুত করেছিল তারা এখন বুঝুক।
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৪ মার্চ, ২০২০, ১:০৩ এএম says : 0
Bangladesh Should STOP or LIMIT the import of Indian onions to encourage our Farmers and to be self sufficient . Keep the Price of Onion at around TK70-80 per KG , it's lot better than TK250 per KG .
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ১৪ মার্চ, ২০২০, ৬:০৯ এএম says : 0
আমি একান্ত ভাবে বাংলাদেশের সকল নাগরিকদেরকে অনুরোধ করিবো ভারতীয় পেয়াজ সহ সব কিচু বরজন করে ইমানের পরিচয় দিন। ভারতীয় পণ্য ঘৃণা ভরে পরিহার করুন। ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)
jack ali ১৪ মার্চ, ২০২০, ১২:১১ পিএম says : 0
They are the enemy of Bangladesh who wanted to import Onion from Indai.. We must stop importing Onion... We need to save our farmer... They work so hard but they are leading poor life.. In Europe, America the farmers are leading a dignified life.. google it you will see how beautiful their village is where farmers are living..
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন