সম্মেলনের দু’সপ্তাহ পর, কয়েক দিনের মধ্যে রয়্যাল কোর্ট এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তারা রাজপরিবারের বেশ কিছু সদস্য এবং সম্মেলনে উপস্থিত কয়েকজনসহ সউদী আরবের কয়েকশ’ ধনী এবং সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে আটক করে। তাদের সেলফোন, প্রহরী এবং গাড়ীচালকদেরও আটক করা হয়েছিল এবং রিয়াদের রিৎজ-কার্লটনে তাদের বন্দি করে রাখা হয়েছিল। বিলাসবহুল হোটেল পাঁচতারা কারাগারে পরিণত হয়। সউদী আরবের ভবিষ্যতে একটি নতুন অধ্যায় যোগ হওয়ার পথে ছিল যার সাথে রোবট এবং মহিলাদের গাড়ি চালানোর চেয়ে আরও গভীর কিছু বিষয় জড়িত ছিল।
সরকার বলেছিল যে, এটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার অংশ এবং অনেক সউদী এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছিল। তারা দীর্ঘদিন লাভজনক চুক্তি হাতাতে যুবরাজ এবং ব্যবসায়ীদের পেশীশক্তির ব্যবহার বা ভাগ্য সুপ্রসন্ন করতে নানাভাবে সরকারের ভান্ডার ব্যবহার করতে দেখেছে। রিৎজে যারা বন্দি ছিল তাদের মধ্যে কয়েকজন ছিল অপরাধীদের মধ্যে সবচেয়ে অধম।
তবে বাদশাহ সালমানের নিকটতম ভাতিজাসহ কিছু কুখ্যাত অপরাধী মুক্ত থাকায় দুর্নীতি দমন অভিযানের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। অভিযানের অন্যান্য বিষয়গুলিও অদ্ভূত ছিল। গ্রেফতার চলাকালে অভিযানে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তদন্ত কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এটিও করেছিলেন এমবিএস -যার নিজস্ব সম্পদ কখনও অনুসন্ধান করা হয়নি। যুবরাজ নিজেও কি বিলাসবহুল ইয়ট কিনতে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয় করেননি? বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বাড়ি হিসাবে একটি ম্যাগাজিনে প্রশংসিত তার সেই ফরাসী স্যাঁতোর ব্যাপারে কী বলা যেতে পারে? পরে, ৪৫ কোটি ৩ লাখ টাকা মূল্যের লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি চিত্রকর্মের ক্রেতা বলেছিলেন যে, তিনি সেটি এমবিএসের প্রতিনিধি হয়ে কিনেছিলেন। কোথা থেকে এল এসব টাকা?
রিৎজ-এ আটককৃতদের বলা হয়েছিল যে, তারা বাদশাহর অতিথি। কিন্তু তাদের সাথে যথাযোগ্য আচরণ করা হয়নি। তাদের ওপর কঠোর পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হতে থাকলে তাদের প্রিয়জনরা উদ্বেগ নিয়ে আমার (বেন হুবার্ড) কাছে আসতেন এবং এমবিএসকে অভিশাপ দিতেন। তাদের মধ্যে এক সউদী ব্যবসায়ী পরিবারের সদস্যদের একজনের স্ত্রী বলেছিলেন, হঠাৎ ফোন না করা পর্যন্ত তিনি কয়েক সপ্তাহ যাবৎ তার আটক আত্মীয়ের কাছ থেকে কিছুই জানতে পারেননি।
‘আমি ভাল আছি’, যদিও তিনি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন কিন্তু তেমনটা ছিলেন না। কলটি ৩ মিনিটের মধ্যে শেষ হয়েছিল।
ভদ্রমহিলা বলেছিলেন, এমবিএসের রাজত্বকালীন তার সাথে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে পারে এমন সবার মানহানি করার জন্য দুর্নীতি দমন অভিযানটি কেবলমাত্র একটি ষড়যন্ত্র ছিল। ‘সে একজন বিকারগ্রস্ত। তার মধ্যে বিদ্বেষ কাজ করে। সে মানুষকে ভাঙতে চায়। সে চায় না যে, সে ব্যতীত অন্য কারোর প্রশংসা করা হোক’।
তিনি বলেন, ‘সে একটা শয়তান এবং শয়তান তার কাছ থেকে শিখছে।’
মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে মোহাম্মদ বিন সালমান সউদী আরবের প্রভাবশালী শক্তি এবং বিশ্বের সব থেকে প্রগতিশীল এবং বাছাইকৃত নেতাদের অন্যতম হয়ে ওঠেন। তার এই বৈশিষ্ট পূর্বনির্ধারিত ছিল না। তার জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি তার থেকেও ধনী ও অভিজ্ঞ যুবরাজদের ভিড়ে হারিয়ে ছিলেন। তিনি এমন একটি পরিবারের বংশলতিকার একেবারে নিচের দিকে ছিলেন যেখানে জ্যেষ্ঠতা অনুসারে রাষ্ট্র শাসন করা হয়েছে। তাহলে তিনি এটা কীভাবে সম্ভব করলেন? বইটি সেই গল্পটিই বলে। (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন