শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রকৃতিতে বসন্তের ছোঁয়া

রাজধানীতে দূষণ নেই

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০০ এএম

বসন্ত আজ আসলো ধরায়,/ ফুল ফুটেছে বনে বনে,/ শীতের হাওয়া পালিয়ে বেড়ায় ফাল্গুনী মোর মন বনে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় বাংলাদেশের ঋতুরাজ বসন্তকে এভাবেই তুলে ধরা হয়েছে। বসন্তের এই রূপ- এই সৌন্দর্য্য রাজধানীবাসীর মনে দোলা দেবে এটা কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে সেই কল্পনা এবার সত্যি হয়ে দেখা দিয়েছে ঢাকাবাসীর কাছে। বহুদিন পর ঢাকাবাসীও এবার বুঝতে পারলো, বসন্ত আজ আসলো ধরায়, ফুল ফুটেছে বনে বনে।

রাজধানীর বিভিন্ন পার্কে ও রাস্তার পাশে বিভিন্ন গাছে চিক চিক করছে সবুজ কচিপাতা। ঝিরি ঝিরি বাতাসে সবুজ পাতা তিরতির করে উড়ছে। কুঁড়ি থেকে ফুটছে ফুল। লাল-সাদা-হলুদ আর বেগুনি। দেখতে কি সুন্দর, কত রঙিন, অন্যরকম এক আবেশ ছড়াচ্ছে প্রকৃতি।

পুরান ঢাকা ওয়ারীর বাসিন্দা সুলতান আহমেদ বললেন, এই নগরীতে ঋতুরাজ বসন্তের এমন উপস্থিতি এর আগে দেখিনি। এবার কি সুন্দর সবুজ হয়ে আছে নতুন পাতা। রোদে কি চমৎকার ঝিকমিক করে। অন্যান্যবার এসব গাছের পাতায় ধুলায় ধূসর থাকে। এবার গাছে গাছে কি সুন্দর ফুল ফুটেছে। এই যে বলধা গার্ডেনের পাশ দিয়ে আমি সকাল বিকাল হাঁটি। এর রূপ দেখে সত্যি প্রাণ জুড়িয়ে যায়। মাঝে মাঝে প্রজাপতিও উড়ছে দেখি। কোকিলের ডাক শুনে থমকে দাঁড়িয়ে যাই। আসলে বায়ু দূষণ না থাকায় ঢাকার প্রকৃতি সজীব হয়ে উঠেছে। গাছ-পালা সব কিছু প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশও করোনায় আক্রান্ত। প্রাণঘাতী এই করোনার সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে দেশজুড়ে চলছে সাধারণ ছুটি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত। স্থলপথ, জলপথ এবং আকাশ পথের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। খুলছে না দোকান পাট, বড় বড় শপিংমল। শহরের মানুষ এখন ঘরবন্দি। গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম দফা ছুটি চলছিল। এ ছুটি ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।

রাজধানীতে বন্ধ রয়েছে ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের কল-কারখানা। চলছে না কোন গণপরিবহন। এতে করে ঢাকার বায়ুদূষণ অনেক কমে গেছে। গত কয়েকমাস বিশ্বের মধ্যে বায়ুদূষণ নগরীর শীর্ষে ছিল ঢাকা। সেই ঢাকা এখন আর দূষণের নগরী নয়। নেই কলকারখানা বা গাড়ির ধোঁয়া। বাতাসে নেই ভারি শিশা। উন্নয়ন কাজ বন্ধ। এজন্য বাতাসে ধুলোর ওড়াওড়িও নেই। সজীব-সতেজ ফুরফুরে বাতাসে তরতর করে বেড়ে উঠছে সড়কদ্বীপের গাছ। পথ বিভাজনে বেড়ে ওঠা গাছে ফুটছে ফুল। সারা বছরের মলিন-ধূসরতা কেটে গেছে এ কদিনেই। এক সবুজ স্নিগ্ধরূপে ফিরে পেয়েছে রাজধানীর প্রকৃতি।

রাজধানী ঢাকা গতমাসের প্রথম দিকেও বিশ্বের বায়ুদূষণের শহরগুলোর মধ্যে শীর্ষে ছিল। এখন দেখে হয়তো কারো বিশ্বাস হবে না। আন্তর্জাতিক মানদন্ডের নিরিখে এই কদিনেই ঢাকার সার্বিক পরিবেশের এত উন্নতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজুয়্যালের বায়ুমান অনুসারে গত মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকার বায়ুমান ছিল ২৩৪। সেই ঢাকায় গতকাল সন্ধ্যায় বায়ুমান ১৩০।

ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউ, ধানমন্ডি, বিজয়সরণি, মহাখালী, বনানী এবং বিমানবন্দর সড়ক ঘুরে দেখা গেছে পথের দু’পাশে লাগানো গাছগুলোতে নতুন সবুজপাতায় রোদ পড়ে চিকচিক করছে। পথবিভাজনের ফুল গাছ, লতাগুল্মগুলোও সতেজ হয়ে উঠেছে। কোথাও কোনো কোলাহল নেই। বাতাসে নেই ধুলোর ঝড়।
এই ফাঁকা ঢাকাতেও দু’একটি ছোট ছোট পরিবহন চলছে। সিএনজি অটোরিকশাও দেখা যায় দু’একটি। কোনোটায় যাত্রী আছে। কোনোটা খালি। অটোরিকশা চালক জাকির হোসেনের কাছে ফাঁকা ঢাকাকে বিষাদের নগরী মনে হচ্ছে। তিনি বললেন, রাস্তা ফাঁকা পাইলে তো ভালো লাগে। কিন্তু এইরকম ফাঁকা তো ভালো না। লোকজন নাই। যাত্রী নাই। সারা দিনে তিন চারশ’ টাকাও আয় করতে পারি না। মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। তিনি কেন বের হয়েছেন? জানতে চাইলে বলেন, না বাইর হইলে খামু কী বলেন? পেটের দায়ে বাইর হইছি। তাও তো কপাল খারাপ। বেলা বাজে বারোটা। একটা ট্রিপ দিছি মাত্র।

তবে যানহীন ঢাকায় খোলা নিঃশ্বাস নিতে ভালো লাগছে তার। কোথাও কোনো দূষণ নেই। কিন্তু কোথাও করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি আছেন কি না, এ নিয়েও শঙ্কা আছে মনে। তবে যেতে যেতে তিনি বললেন, আমরা যদি একটু সচেতন হয়ে দূষণ বন্ধ করতে পারি, তাহলে ঢাকাকে অনেকটাই সুন্দর রাখতে পারব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন