বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সোনালি আসর

ঠকবাজ নানা

প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বা তে ন বা হা র

পরশু ফজল মিয়া এসেছিলেন সেন্টুর দোকানে। ১২ ইঞ্চি বাই ১৫ ইঞ্চি একখানা কাঠের ইলেকট্রিক বোর্ড কেনার জন্য। ফজল মিয়া ও সেন্টুর সম্পর্ক নানা-নাতির। নানা-নাতি প্রায়ই হাস্যরসে মেতে উঠেন। তাই নাতি নানাকে বলেছিল ওটা সে জোগাড় করে রাখবে। তবে তা যথাসময়ে ডেলিভারি না নিলে জরিমানা গুনতে হবে।
আজ ফজল মিয়া নাতির দোকানে ঢুকে জিজ্ঞেস করলেন দামি বোর্ড এনে রেখেছিস? নাতি বলল, কম দামি বেশি দামি সবই আছে। কোনটা নেবেন? ফজল মিয়া বললেন- সেগুন কাঠের হলে ভালো হয়। দেখি তোর বোর্ডগুলো। নাতি সাদামাটা একখানা বোর্ড দেখিয়ে বললÑ এর দাম সাড়ে চার টাকা। আর ওই যে বার্নিশ করা বোর্ডখানা দেখছেনÑ ওটার দাম সাড়ে বার টাকা। ফজল মিয়া বললেন- ভালোটাই নেবো।
নানা বোর্ডখানা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখে ১০ টাকার এক খানা নোট নাতি সেন্টুর হাতে গুঁজে দিয়ে বললেন- এর দাম ১০ টাকায় বেশি হতে পারে না। তাই ১০ টাকাই দিলাম। আর কোন কথা না বাড়িয়ে ফজল মিয়া দ্রুত চলে যাচ্ছিলেন। নাতি পিছনে থেকে ডেকে বললোÑ নানা বাকি আড়াই টাকা দেবেন না? নানা বললেন- না। নাতি হাসতে হাসতে বললো ঠিক আছে। টাকা না থাকলে পরে দেবেন। কিন্তু চা-পান না খেয়ে যেতে পারবেন না। ফজল মিয়ার কথা সন্দেহ জাগলো। চা-পান খাইয়ে নাতি টাকার কথা তুলে কি না। তাই বললেন- এখন না পরে এসে খেয়ে যাবো। নাতি বললো- সে কি হয়? মাল কিনলেন আজকে আর চা-পান খাবেন পরে তা হবে না।
নানা, আসুন এ চেয়ারটায় আরাম করে বসুন। চা-পান আনতে গেছে। এক্ষুনি এসে পড়বে। নানা নাতিকে উদ্দেশ্য করে বললেন- কী দরকার ছিল চা-পান আনার? শুধু শুধু টাকা খরচ করো না। নাতি বললো- শুধু শুধু টাকা খরচ করতে যাবো কেন? আপনি তো সম্পর্কে আমার নানা। তাছাড়া খরচ তো করছি নানার টাকা। নানার টাকা নাতি খরচ করছি, নানার জন্য। বরং তাতে আনন্দই পাচ্ছি। চা-পান খেয়ে নানা চলে যাবেন এ সময় নানার হাতে একটা দামি জর্দার ফোটা আর কিছু পান ধরিয়ে দিয়ে নাতি বললো- নানা এসব খরচ তো আপনার সৌজন্যেই। নানা বললেন- কী রকম? নাতি বললো- তবে শুনুন- গত দুই বৎসর ধরে আপনি আমার দোকানে থেকে যে বৈদ্যুতিক বাল্ব নিয়েছেন, তাতে আমার বেশ লোকসান হয়েছে। আজ সুদে আসলে সব কেটে রেখেছি। গত দুই বৎসর আপনি ২ টাকা ১০ পয়সা দামে কেনা বাল্ব প্রতিটি ২ টাকা করে দাম দিয়েছেন। তাতে আমার যে ক্ষতি হয়েছে আজ তার দ্বিগুণ টাকা বেশি রেখেছি। আপনি আমাকে যে পরিমাণ ঠকিয়েছেন আজ তার দ্বিগুণ ঠকেছেন। আর আপনার কাছ থেকে রাখা বেশি টাকা দিয়েই আপনাকে আপ্যায়ন করছি। মনে রাখবেন পরকে ঠকালে নিজেকেও ঠকতে হয়। আজ তাই হয়েছে। এতদিন নানা নাতিকে ঠকাতো আজ নাতি নানাকে ঠকিয়েছে। আজ যা যা খরচ করেছি তা বাদ দিয়ে নিন আপনার পাও না টাকা। আজ থেকে মানুষকে বিশ্বাস করতে শিখুন। মন থেকে ঠকানোর চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন। আর কখনো মানুষকে ঠকানোর চিন্তা মনে পুষবেন না। কারণ আপনি যে চালাক তা সবাই জানে। কিন্তু আপনাকে ছাড়া পৃথিবীর সবাই বোকা তা কি করে ভাবেন?
নানার মুখ থেকে কোনো কথা বেরোল না। শুধু একটা মুচকি হাসি দিয়ে পথ চলতে শুরু করলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন