বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহিলা

বর্ষার বিড়ম্বনা

প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আখতার হামিদ খান ও ছালেহা খানম জুবিলী

রোদের মুখে ছাই ছিটিয়ে মেঘের ঘনঘটা। কবিরা বলেন বেশ রসিয়ে। বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে জুঁই এর বোটায়, লাউ এর ডগায়। নয়া বউটির পার আলতা ভিজে ভিজে লাজনম্্র। ফুলবয়েযীর নরোম গালে চিমটি দেয়া মুক্তোমতো জলের ছাট। রিকশায় জড়াজড়ি করে একালের দেবদাস-পার্বতী বিধুর উপন্যাসে চোখ রেখেছে এর বিরহিনী। পাশের জানালায় লাগাতার শাওনের কান্না। কেউ লিখছে নীল প্যাডে লম্বা চিঠি। তার প্রতি ছত্রে বিলাপের বুনট। বর্ষা নাকি কবিদের ঋতু। বৃষ্টি পেলে তারা বিরহের ঝাঁপি খুলে দেন। কবিমনা বাংলাদেশীরা বৃষ্টির ঝমঝম শুনতেই জলভেজা শব্দ খুঁজে পদ্য করতে ভালো বাসেন। আষাঢ়ের কদম আর ভেজা ভেজা বন বাগিচা তাদের মনে করিয়ে দেয় বৃন্দাবন দুহুর কূজন। বর্ষার ধারা মানে বাঙ্গালীর নূপুর নিক্কন, আধো আধো বোল ফুলে কামিনী কাবার। এ মরসুমে গীত পদ্যের মা-বাপ নেই। যারা অকবি গোছের কিংবা কাজকাম নিয়ে ব্যস্ত তারা কবিদের মতো গজগজ হতে পারেন না। অতো কল্পনার নাও চালানোর ফুরসত তাদের নেই। গদ্যময় জীবনে বর্ষা ¯্রফে যন্ত্রণা। যারা প্রায় দু’মাস এর ধাক্কা পোহান তারা জানেন এটা শুধু ভুনা খিচুড়ি, গরম কাবাব, তাস পেটানো আর বাকবাকুম করার সরস সময় নয়। হাজিরা না দিলে চাকরি থাকবে না। কোদাল না দিলে চারা গজাবে না। স্কুলে না গেলে কাটা যাবে নাম। অন্নশূন্য থাকতে হবে অসংখ্য লোকের। কাজেই বৃষ্টির মতো বৃষ্টি ঝরবে, কষ্টে-শিষ্টে এগিয়েই যাবে মানুষের মিছিল। রোগী-ভোগী, গৃহত্যাগী সকলকেই ছুটতে হবে বাইরে। ঘরে কাব্যি করে কাটবে না।
এক ফাঁকে নগরে বরষার শোভা নিয়ে কিঞ্চিৎ কচকচানো থাক। কবিদের মিছে কথার ধারে কাছেও যাবো না। বাস্তব ছবি দেখবো। ঢাকার কথাই বলি।
তিলোত্তমা এই মরসুমে জ্যাবজ্যাবে হয়ে থাকবে। সময়ে লাবণ্য জিয়ে পুঁজ-পিকও বের হবে। ঘণ্টা খানেক বর্ষণ হলেই হাঁটুতক পানি।
এ সময়ে শিশুর পরিচর্যা
এখন বর্ষাকাল। চারধারে পানি থৈ থৈ। শুধু তাই নয় অনেক এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। দেখা দিয়েছে নানা রকম পেটের সমস্যা, খাবার পানির সংকট। তাই এ সময়ে শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। অত্যন্ত সর্তকতার সাথে এদের পরিচর্যা করতে হবে। তা ছাড়া শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম। তাই শিশুদের প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি
খাবার পানিসহ সব পানি যেন বিশুদ্ধ হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
ডাইরিয়াসহ শিশুর যে কোন রোগে দ্রুত হাসপাতালে অথবা নিকটস্থ চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
শিশু যাতে বদ্ধ পানিতে খেলাধুলা না করে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। কারণ সাঁতার না জানা শিশুদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে বন্যার পানি।
বৃষ্টি বাদলে ভিজে শিশুরা যাতে জ্বর, ঠা-া, কাশি না লাগায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
খাবার আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পরে ভাল করে হাত ধোয়ানোর অভ্যাস শিশুদের মাঝে গড়ে তুলতে হবে।
শিশু ঘেমে গেলে সাথে সাথে জামা পালটে দিতে হবে।
রাতে অবশ্যই মশারি টানিয়ে শুতে হবে।
বর্ষা মৌসুম যা করণীয়
বর্ষা মানেই বৃষ্টি, ভিজে স্যাঁতসেঁতে ভাব, কখনও ভ্যাপসা গরম, কখনও সামান্য ঠা-া, ফলে এ মৌসুমে কিছুটা সাবধানে থাকলে শারীরিক বিভিন্ন উপসর্গ থেকে সহজেই আরামে থাকা যায়। কিছু টিপস দেয়া হলো পরিবারের সবাই মেনে চলুন
যেহেতু সারাক্ষণ বৃষ্টি-বাদলা লেগেই থাকে তাই বাইরে বেড় হবার আগে অবশ্যই ছাতা সাথে রাখুন।
কর্মস্থলে যাবার পূর্বে রেইন কোটটি ভাঁজ করে ব্যাগে তুলে নিন।
প্রচুর বৃষ্টি বা কর্দমাক্ত রাস্তায় চলতে হলে অবশ্যই প্লাস্টিকের জুতা বা প্লাস্টিকের স্যান্ডেল ব্যবহার করুন।
খাবার ঢেকে রাখুন। টাটকা খাবার খান। বাইরে থেকে এসে হাত-পা সবান দিয়ে ধুয়ে নিন।
অনেক এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। ফলে খাবার পানি বিশুদ্ধ কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হউন।
খাবার পানি ফুটিয়ে ছেকে নিন। খাবার ছাড়াও গোসল, অজু এবং রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য পানি ফিটকিরি দিয়ে বিশুদ্ধ করে নিলে ভাল।
এ মৌসুমে যে সব ফলমূল পাওয়া যাচ্ছে তার মধ্যে ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফলই প্রচুর। যেমন-লটকন, জাম্বুরা, আমড়া, লেবু ইত্যাদি। খেতে পারে প্রচুর পরিমাণে। পেয়ারা পাওয়া যায় খেতে পারেন।
বর্ষায় বাজারে রয়েছে নানা রকম শাক। এসব বাহারী শাক দেখতেও সুন্দর, খেতেও মজা। যেমন-কলমি শাক, পুঁই শাক, শাপলা, হেলেঞ্চা এসব শাক দেহের নানারকম চাহিদা মেটায়। তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসব শাক- সবজি খাওয়া উচিত।
বদ্ধপানির কারণে মশার উৎপাত থাকে। তাই রাতে মশারি টানিয়ে শোয়া ভাল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন