‘আল্লাহ মেঘ দে পানি দে ছায়া দে...’। না। কৃষক-কিষানিদের খালি কলসি জগ হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমে মেঘ-বাদলের জন্য প্রার্থনার গান গাইতে হয়নি। না চাইতেই মেঘ। শীতল বৃষ্টির ধারা। সিক্ত বাংলাদেশের জমিন। বৈশাখের খরার দহন উধাও। বরং মাটির তলায় পানির যে রিজার্ভ দরকার তা রিচার্জ বা পুনর্ভরণ হচ্ছে।
আল্লাহর অপারদান-মহিমায় প্রকৃতির আপন নিয়মেই তা হচ্ছে। বৈশাখে ফল-ফসল, শাক-সবজি থেকে শুরু করে বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় বৃক্ষরাজি এমনকি ক্ষুদ্র লতা-পাতা, ঘাষ-গুল্ম সবকিছুই এখন সবুজ সতেজ। পিঁপড়া কীটপতঙ্গ থেকে শুরু করে বৃহাদাকার প্রাণি হাতি জলহস্তি সিংহ সব প্রাণিকুল বৃষ্টির শীতল পরশে চাঙ্গা এবং জীবনীশক্তিতে উজ্জীবিত।
পঞ্জিকার পাতায় বৈশাখ মানেই গ্রীস্ম ঋতু। খরতাপ আর লু-হাওয়ার দাপটে ফল-ফসল, গাছপালা এমনকি মানুষের শরীরে জ্বালা ধরিয়ে তামাটে বর্ণ করিয়ে দেয়া রুদ্র-রুক্ষ-বৈরী বৈশাখ।
এবার অন্যরকম। ব্যতিক্রম। আবহাওয়া বিভাগের সর্বশেষ পূর্বাভাসে জানা গেছে, আরও কয়েকদিন চলবে এ ধরনের মেঘ, বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টি, হিমেল দমকা হাওয়া।
তাছাড়া সর্বশেষ পূর্বাভাসে বঙ্গোপসাগরে কোনো লঘুচাপ কিংবা সতর্ক সঙ্কেত নেই। দেশের অভ্যন্তরে কালবৈশাখী ঝড়ের সতর্কতাও নেই আপাতত।
আজ রোববার ১৩ বৈশাখও পার হলো খরতাপ-বিহীন। মেঘের ছায়ায় স্বস্তির বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। করোনা সঙ্কটকালেও ঘরবন্দি মানুষ। কারও মনে নেই শান্তি। শুধুই আতঙ্ক-শঙ্কা আর অস্থির মন। তবুও তো রোজাদারদের দিনমান কাটছে আবহাওয়া-প্রকৃতির সহনীয় আচরণে অন্যরকম প্রশান্তিতে।
আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত গেল ২৪ ঘণ্টায় দেশের বেশিরভাগ জেলা-উপজেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টি, কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ হয়েছে। এ সময় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় কুমিলায় ৮১ মিলিমিটার। ঢাকায় ৪০, চট্টগ্রামে ২৮ মি.মি. সহ দেশের অধিকাংশ জায়গায় কমবেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবার কোথাও ঝরেছে গুঁড়ি গুঁড়ি সাময়িক বারিধারা। থামিয়ে দিয়েছে বৈশাখী খরার লাগাম।
গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল মংলায় ৩৩.৩ এবং সর্বনিম্ন কুমিল্লায় ১৭.৯ ডিগ্রি সে.। ঢাকায় পারদ সর্বোচ্চ ৩০.৭ এবং সর্বনিম্ন ২২.৯ ডিগ্রি সে.। সারাদেশে তাপমাত্রা বৈশাখে এ সময়ের স্বাভাবিকের লেভেলের তুলনায় গত কয়েকদিন ধরেই স্থানভেদে ২ থেকে ১০ ডিগ্রি সে. পর্যন্ত কম রয়েছে।
আগামীকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের সবক’টি বিভাগের অনেক অথবা কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার সাথে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ এবং কোথাও কোথাও এ সময় বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা থাকতে পারে প্রায় অপরিবর্তিত।
পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায়ও বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টির প্রবণতা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, লঘুচাপের একটি বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ বিরাজ করছে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন