স্টাফ রিপোর্টার : গুলশান দুই নম্বর সড়কের এলাকা থেকে দলের চেয়ারপার্সনের কার্যালয় সরিয়ে দেয়ার সরকারি উদ্যোগের বৈধ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। ওই কার্যালয় সরে গেলে পুরো এলাকা নিরাপদ হবে এমন কোনো চুক্তি সরকারের সঙ্গে জঙ্গিদের হয়েছে কিনা এটা আমাদের জানা দরকার।
গতকাল বুধবার বিকালে এক অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এসব কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, গুলশানের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অফিস সেখান থেকে সরিয়ে দেয়ার কথা কিছুক্ষণ আগে শুনলাম। তা-ই যদি হয়, তাহলে আমার প্রশ্ন থাকে, শোলাকিয়া যে ঘটনা ঘটলো, ওখান থেকে কী বিএনপি অফিস সরিয়ে নেবেন কিংবা সারা দেশে বিএনপি অফিস আছে, ওইগুলো কী সরিয়ে নেবেন?
মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশের প্রতিটি কার্যালয় হলো দেশনেত্রীর কার্যালয়। সেটা কোথায়ও কমার্শিয়াল এরিয়াতে আছে, কোথায়ও আবাসিক এলাকায় আছে। কারণ কোনো দলের পলিটিক্যাল অফিস কোন এলাকায় থাকবে, সরকার এমন কোনো দিক-নির্দেশনা কখনো দেয় নাই, পার্লামেন্ট থেকে এমন কোনো আইন পাস হয় নাই।
সরকারের এহেন উদ্যোগের সমালোচনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা বলতে চাই, গুলশানে দলের ওই একটা অফিস সরিয়ে দিয়ে বিএনপিকে স্তব্ধ করা যাবে না। তখন ঢাকায় এবং বাংলাদেশের ঘরে ঘরে দেশনেত্রীর কার্যালয় তৈরি হবে।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, গুরুতর অসুস্থ যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের ছেলে আরাফাত আব্দুল্লাহ চঞ্চলের আশু সুস্থতা কামনায় এই দোয়া মাহফিলের অনুষ্ঠান হয়। গুরুতর অসুস্থ চঞ্চলকে বুধবার সকলে ব্যাংকক নেয়া হয়েছে।
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে একটা পত্রিকায় দেখলাম- জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে। এখনো যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, আওয়ামী লীগের জামানত থাকবে না নির্বাচনে। এক্ষেত্রে এতো বৃহত্তর জনগোষ্ঠির প্রতিনিধিত্ব করে যে দল, সেই দলকে বাদ দিয়ে কে কারা কোথায় ঐক্য করলো, এটা তো বুঝতে পারলাম না। সেই ঐক্য কী দেশ বাঁচানের জন্য না দেশ ধবংস করার জন্য। সেই ঐক্য কী বিরোধী দল দমানোর জন্য নাকী দেশ বাঁচানোর জন্য। বিরোধী মত দমন করার চেষ্টা পৃথিবীর ইতিহাসে বহু আছে, বহু নজির আছে। বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের গুম করা হয়েছে, খুন করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো দেশে বিরোধী দলকে স্তব্ধ করা যায়নি।
তিনি বলেন, এখন জাতির একটা দুঃসময়। এই সময়ে শুধু ব্লেম দেয়া হচ্ছে। ধান বানতে শিবের গীত গেয়ে লাভ নাই। আমি মনে করি যে এখনো সরকারের মন্ত্রীদের ক্ষমতার দাপট না দেখিয়ে, উল্টা-পাল্টা কথা না বলে সহজ পথে দেশনেত্রী যে আহ্বান করেছেন, সেভাবে জাতীয় ঐক্য করে দেশের জাতীয় সমস্যার সমাধান করুন।
নয়া পল্টনে মহানগর কার্যালয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর জন্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার টেলিফোন আসার প্রসঙ্গ তুলে ধরে মহানগর আহ্বায়ক বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) আমার বাসায় সরকারের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনের কাছ থেকে ফোন গেছে। মহানগর অফিসে ক্যামেরা লাগানো হবে। আমার প্রশ্ন হলো- এই ক্যামেরাটা কিজন্য লাগানো হবে? আমাদের নিরাপত্তার জন্য? ঘটনা যাই হউক, এটা ব্যক্তিসভাতে সরাসরি হস্তক্ষেপ। আমার অফিসে ক্যামেরা লাগাবো কী না, এটা আমার ব্যাপার। খুব বেশি হলে এই ব্যাপারে সরকার আমাকে উপদেশ দিতে পারে।
স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অভিযোগ করে বলেন, খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যের আহ্বানে সরকার সাড়া দিচ্ছে না। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো ইচ্ছা বা আন্তরিকতা নেই।
বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে নিঃশেষ করার জন্য তারা (সরকার) এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গুলশান থেকে বিএনপির অফিস সরাতে চায়। জঙ্গিরা কী সরকারকে জানাইছে যে আমরা গুলশান কূটনৈতিক পাড়া ছাড়া অন্য কোথাও হামলা করবো না?
তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি অঞ্চলই আজ হুমকির সম্মুখীন। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ে যারা জড়িত, তারা যেকোনো স্থানে যেকোনো সময়ে যেকোনো ব্যক্তির ওপর ঘটনা ঘটনাতে পারে। শুধুমাত্র পার্টিকুলার গুলশান থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয় সরে গেলে সেই এলাকা নিরাপদ হবে সেই গ্যারেন্টিটা সরকার কোথায় থেকে পেলো? এমন কোনো চুক্তি সরকারের সঙ্গে জঙ্গিদের হয়েছে কিনা, এটা আমাদের জানা দরকার। সুতরাং আমাদের বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না, গণতান্ত্রিক পথরুদ্ধ করা এবং ভিন্নমতের কোন লোক, আওয়ামী লীগ ব্যতীত এদেশে থাকতে পারবে না। এটাই তাদের লক্ষ্য।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন