বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

কুষ্টিয়া চাষিদের লোকসান ঠেকাতে ক্ষেত থেকে সবজি কিনছে সেনাবাহিনী

কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০২০, ১১:৪৫ এএম

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে প্রান্তিক চাষিরা সবজি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। প্রচুর সবজি আবাদ হলেও কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না তারা। করোনার প্রভাবে এক প্রকার পানির দরেই পাইকারদের কাছে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। চাষিদের উৎপাদন খরচ তোলাই যেন দায় হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় চাষিদের লোকসান কিছুটা হলেও লাঘব করতে এগিয়ে এসেছে সেনাবাহিনী। সেনা সদস্যরা মাঠে মাঠে গিয়ে চাষিদের কাছ থেকে সবজি কিনছেন।

তবে প্রান্তিক চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লাভবান হচ্ছেন পাইকাররা। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার অন্তর্গত বিত্তিপাড়া, লক্ষ্মীপুর ও শেখপাড়া পাইকারি সবজি বাজারে ঢাকা থেকে আসেন ব্যাপারীরা। তারা হাজার হাজার মণ বেগুন, শসা, কাঁচা মরিচসহ অন্যান্য সবজি কিনে নিয়ে যান ঢাকার পাইকারি মোকামে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়ার পাইকারি এসব সবজি বাজারে প্রতিদিন দুইশ থেকে আড়াইশ মণ বেগুন আসে। স্থানীয় আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এ সবজির একটি অংশ ক্রয় করে থাকেন। তবে উৎপাদিত এসব সবজির সিংহভাগই চলে যায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে।

কুষ্টিয়ায় পাইকারি বাজারে সর্বোচ্চ ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি বেগুন। অথচ সেই একই বেগুন জেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। এখন বাজারে প্রচুর নতুন বেগুনও উঠেছে। পাইকারি বাজারে লম্বা জাতের এই নতুন বেগুন ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি হলেও শহরের বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা কেজি। ফলে হাত বদল হতে হতে পাইকার ও মধ্যসত্বভোগীরা লাভবান হলেও প্রান্তিক চাষিরা দেখছেন না লাভের মুখ। করেনার প্রভাবের আগে চাষিরা বেগুনের দাম পেয়েছেন কেজি প্রতি ৩০ টাকা। এখন বাজারদর অনেকটা মন্দা।

এদিকে পাইকারি এসব বাজারে শসা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ২০-২৫ টাকা দরে। করোনা প্রভাবের আগে শসার পাইকারি দর ছিল প্রতি কেজি ৩০ টাকা। বর্তমানে শহরের বাজারগুলোতে প্রতি কেজি শসা ৩৫-৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মরিচের দাম আগের তুলনায় একেবারে কমে গেছে। খুচরা বাজারে ৬০ টাকা কেজি দরের কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা দরে। কাঁচা মরিচের পাইকারি বাজার দর আরও কম।

বিত্তিপাড়া বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী রাজ্জাক মন্ডল জানান, সবজির বাজার এখন নিন্মমুখী। তবে সবজির বাজার ওঠা-নামা করে।

কুষ্টিয়া মিউনিসিপ্যালিটি বাজারের সবজি আড়তদার বাবু জানান, কাঁচামালের বাজার প্রতিদিন এক থাকে না। এছাড়া চাহিদা ও সরবরাহের ওপর সবজির মত কাঁচামালের দাম নির্ভর করে।

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, এবার জেলায় ১০৬০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৩৪ দশমিক ৯ মেট্রিক টন হিসাবে মোট উৎপাদন টার্গেট নির্ধারণ করা হয় ৩৬ হাজার ৯৯৪ মেট্রিক টন বেগুন। এছাড়া শসা চাষ করা হয় ৪০৩ হেক্টর জমিতে। এতে প্রতি হেক্টরে ২১ মেট্রিক টন হিসেবে শসার মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৪ হাজার ৯ মেট্রিক টন। এছাড়া এক হাজার ৬৯৫ হেক্টর জমিতে চাষকৃত মরিচে প্রতি হেক্টরে ৩ মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। জেলায় ১৩ হাজার কৃষকের প্রত্যেককে এক বিঘা জমিতে ফসল উৎপাদনের সমপরিমাণ বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। এছাড়া ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের মধ্যে ৩০ হাজার কেজি আউশ ধানের বীজ প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এতে কৃষকরা কিছুটা হলেও তাদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শ্যামল কুমার বিশ্বাস জানান, যেকোন মহামারির পর খাদ্য সংকট দেখা দেবে এটা স্বাভাবিক। তবে খাদ্য সংকট মোকাবিলায় উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই।

এদিকে চাষিদের লোকসান কিছুটা লাঘব করতে এগিয়ে এসেছে সেনাবাহিনী। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যশোর সেনানিবাসের ২০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমন্টের সেনা সদস্যরা জেলার বিভিন্ন এলাকার প্রান্তিক সবজি চাষিদের জমিতে থাকা সবজি বাজার মূল্যে কিনে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় অস্বচ্ছল পরিবারের মাঝে তা বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৭ মে) থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

জেলার মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের চিথলিয়া গ্রামের সবজি চাষী আলহাজ শুর আলী বলেন, ঠিকমত মূল্য না পাওয়ায় আমাদের অনেক সবজি জমিতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। এখন সেনাবাহিনী ন্যায্য মূল্যে সবজি কিনে নেয়াতে নগদ টাকা হাতে পেয়েছি।

একই গ্রামের সবজি চাষী সাদেমুল বলেন, আমার জমিতে আবাদকৃত কুমড়া বিক্রি করতে না পারায় দুশ্চিন্তায় ছিলাম। এখন সেনাবাহিনী নগদ অর্থে কুমড়া কিনে নেয়ায় আমি উপকৃত হয়েছি। সেনাবাহিনীর এই কার্যক্রম সব সময় চালু থাকলে কৃষকরা দারুণভাবে উপকৃত হবে।

এই কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর ওয়াহিদ জানান, করোনার কারণে বাজারে চাষিরা তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে যেতে পারছেন না। তাছাড়া বাজারে ক্রেতা কম থাকায় সবজির উপযুক্ত দামও পাচ্ছেন না। মাঠেই সবজি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ অবস্থায় জেলার প্রান্তিক চাষিদের কাছ থেকে নায্য মূল্যে শাক-সবজি ক্রয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এই সবজি ক্রয় করে যশোর সেনানাবিাসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে সেনা সদস্যেদের জন্য ব্যবহার এবং বিভিন্ন স্থানে অস্বচ্ছল মানুষদের মাঝে তা বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন