ভারতে গত ২৪ মার্চ থেকে লকডাউন চলছে। সম্প্রতি এই লকডাউন শিথিল করা হলেও তার সময়সীমা আরও বাড়তে পারে। সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীদের সাড়ে ছয় ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠকের পর এই আভাস পাওয়া গিয়েছে।
সম্ভবত আজ জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষনে মোদি লকডাউন নিয়ে ও আর্থিক ক্ষেত্রকে আরও খুলে দেয়ার ব্যাপারে ঘোষণা করবেন। সূত্র জানাচ্ছে, যে ভাবে লকডাউন বজায় রেখে কড়াকড়ি শিথিল করা হচ্ছে, সেই প্রবণতা বজায় থাকতে পারে। ১৭ মে-র পর কড়াকড়ি আরও শিথিল হতে পারে। বিজেপি সূত্র জানাচ্ছে, ঈদের আগে লকডাউন ওঠার সম্ভাবনা কম। অন্তত ওই সপ্তাহ পর্যন্ত লকডাউন চলবে। মে মাসের শেষ পর্যন্তও চলতে পারে।
বৈঠকে অনেক মুখ্যমন্ত্রীই জানান, তারা লকডাউনের মেয়াদ বাড়াবার পক্ষে। তবে লকডাউন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার রাজ্য সরকারগুলির ওপর ছেড়ে দেয়া হোক। তারাই ঠিক করুক, লকডাউনের সীমা বাড়বে কি না, বাড়লে কতটা বাড়বে, কড়াকড়ি কতটা থাকবে। তবে মুখ্যমন্ত্রীদের কথা শোনার পর মোদি জানিয়েছেন, তিনি চান, আরও বেশি করে অর্থনৈতিক কাজ-কারবার চালু হোক। এই বিষয়ে রাজ্য সরকারগুলোর কোনও প্রস্তাব থাকলে তারা যেন ১৫ মে-র মধ্যে তা পাঠিয়ে দেন।
গুজরাট ও গোয়ার মুখ্যমন্ত্রীর মতো অল্প কয়েকজন বৈঠকে জানিয়েছেন, তারা চান, লকডাউন পুরোপুরি তুলে দেয়া হোক। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, উদ্ধব ঠাকরে, নীতীশ কুমার, অমরিন্দর সিং, অশোক গেহলট, সর্বানন্দ সোনোয়াল সহ অনেকেই বলেন, লকডাউন আরও বাড়ানো হোক। তবে অধিকাংশ মুখ্যমন্ত্রীই রাজ্যের জন্য আর্থিক সাহায্য দাবি করেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কেন্দ্র যেন রাজ্যের প্রাপ্য ৬১ হাজার কোটি টাকা অবিলম্বে মিটিয়ে দেয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রীদের দাবি বিবেচনা করবেন।
এতদিন লড়াই হচ্ছিল মূলত চিঠি ও বিবৃতির মাধ্যমে। সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে সামনে পেয়ে ভিডিও কনফারেন্সেই ক্ষোভ উগড়ে দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্র জানাচ্ছে, কোনও রকম রাখঢাক না করে একেবারে চাঁচাছোলা ভাষায় মমতা বলেন, ‘করোনা নিয়ে রাজনীতি করবেন না। এটা রাজনীতি করার সময় নয়। কেন্দ্র যেন একটা চিত্রনাট্য অনুসরণ করে চলছে। রাজ্যের মতামত নেয়া হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রীদের মতামত নেয়া হচ্ছে না। দয়া করে, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ওপর বুলডোজার চালাবেন না।’ এখানেই শেষ নয়। প্রধানমন্ত্রীকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে মমতা বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীজি আপনি আমাকে চেনেন। অমিত শাহজিও চেনেন। ওকে ফোন করলে উনি ফোন ধরেন না। শুধু চিঠি পাঠান। আপনি অনেক দিন সংসদীয় রাজনীতিতে আছেন। আমিও কমদিন নেই। আপনাকে জানাতে চাই, রাজনীতি করবেন না। সকলে মিলে কাজ করুন। অ্যাডভাইসারি পাঠানো বন্ধ করুন।’
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে বলেছেন, মে মাসে ভারতে করোনার প্রকোপ তুঙ্গে উঠতে পারে। জুন বা জুলাইতেও তা হতে পারে। তাই লকডাউন নিয়ে সিদ্ধান্ত খুব ভেবেচিন্তে নিতে হবে। আরও দুই সপ্তাহ অন্তত লকডাউন থাকুক। সবুজ এলাকায় সব ধরনের আর্থিক কাজকারবার চলুক। নিত্যপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে যারা আছেন, তাদের জন্য শহরতলির ট্রেনও চালু করা হোক। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের প্রস্তাব হলো, লাল এলাকা বাদে বাকি দিল্লিতে আর্থিক কাজকারবার শুরু করতে দিক কেন্দ্র।
প্রধানমন্ত্রী তার প্রাথমিক মন্তব্যে বলেছেন, সরকার প্রথমে চেয়েছিলো, যে যেখানে আছে, সেখানেই থাকুক। কিন্তু লোকের বাড়ি ফেরার চাহিদা স্বাভাবিক। তাই সিদ্ধান্ত বদল করা হয়েছে। সারা বিশ্ব মেনে নিয়েছে, ভারত করোনার বিরুদ্ধে ঠিকভাবে ও সাফল্যের সঙ্গে লড়েছে। মোদির মতে, এখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাটা সব চেয়ে জরুরি।
তবে এ দিনের বৈঠকে মমতা-মোদি বিরোধ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহল দ্বিধাবিভক্ত। তৃণমূলপন্থী একাংশ যেমন বলছেন, এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রকে ‘উচিত শিক্ষা’ দিয়েছে, তেমনই বিরোধীদের বক্তব্য মমতা নিজের ‘দোষ’ ঢাকতে এ দিনের বৈঠককে ব্যবহার করেছেন। তাদের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে বহু ক্ষেত্রেই কেন্দ্র বঞ্চনা করছে। কিন্তু মমতাও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা গোপণ করে ‘গর্হিত অপরাধ’ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গকে এখন তার মাশুল গুনতে হচ্ছে। সূত্র: পিটিআই, এএনআই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন