রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাত ও অলিগলিতে ভ্যানে করে এমনকি অনলাইনে নি¤œমানের মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাবস, হ্যান্ডসেনিটাইজার, পিপিই ইত্যাদি সুরক্ষা সামগ্রী দেদারসে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর গত ৪ মে একটি সার্কুলার জারি করে পিপিই প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুমোদন নেয়ার কথা বলে তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। এ বিষয়ে তাদের কোন নজরদারি নেই।
এখনো রাজধানীর ফুটপাত, বাজার এবং অনলাইনে নিম্নমানের পিপিই বিক্রয় অব্যাহত আছে। অনেক স্থানে হাসপাতালে ব্যবহৃত হ্যান্ডগ্লাবস, পিপিই ধুয়ে পুনরায় বিক্রয় করা হচ্ছে এবং পিপিই’র নামে রেইনকোট বিক্রয় করা হচ্ছে। এতে সাধারণ জনগণ না জেনে পিপিই কিনে আরও বিপদের মধ্যে পড়ছে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু এসব নিম্নমানের পিপিইসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। আইনশৃংখলাবাহিনীর চোখের সামনে এসব নি¤œমানের সামগ্রী অবাধে বিক্রি হচ্ছে।
অননুমোদিত এসব নিম্নমানের সামগ্রী ও পিপিই এবং পিপিই’র নামে রেইনকোট বিক্রয় বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ইতোমধ্যে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে বিভিন্ন অনলাইন শপ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পিপিই’র অননুমোদিত বিজ্ঞাপন এবং বিক্রয় বন্ধ করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে গত ১৭ মে সরকারি ইমেইলে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অনুমোদনহীন পিপিই সরানো এবং বিক্রয় বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম।
বেলা ১১টায় রাজধানীর খিলগাও ওভারব্রীজের নিচে দেখা যায় আবুল কালামের এক হকার ভ্যানে করে বিক্রি করছে করোনাভাইরাসের সুরক্ষাসামগ্রী। পিপিই সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে না পারলেও গলা ফাটিয়ে সে বলছে, ‘করোনা থাইক্যা বাঁচেন পিপি নেন, পিপি’। তার ভ্যানে মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস ও চক্ষু রক্ষার গগলস, এবং বিভিন্ন প্লাস্টিকের বোতলে ভরা হ্যান্ডস্যানিটাইজারও রয়েছে। এসব হ্যান্ডস্যানিটাইজার বোতলে কোন কম্পানির লেভেল নেই। সে পিপিই স্যুটের দাম চাইছে ২২০ টাকা। দরাদরি করে একজন ২০০ টাকা দিয়ে একটি কিনেও নিলেন। শুধু খিলগাওয়ে নয়, পুরানা পল্টন, গুলিস্তান, ফার্মগেইট, মৌচাক, শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার ফুটপাথেই মিলছে এমন সস্তা ও নিম্নমানের সুরক্ষাসামগ্রী। পিপিই পাওয়া যাচ্ছে মহল্লার মুদি দোকানেও। বিক্রি হচ্ছে অনলাইনেও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব পিপিই বা সুরক্ষাসামগ্রীর অধিকাংশই নিম্নমানের। অর্থাৎ এ ধরনের পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট বা পিপিই মোটেও ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিতে পারছে না। তারা বলেন, এ ধরনের পিপিই ব্যবহার বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। বাজারে পাওয়া যায়, এমন অধিকাংশ সুরক্ষাসামগ্রীই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসরণ করে তৈরি হয়নি। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বাজারের ব্যাগ তৈরির কাপড় দিয়েই তৈরি করছে ভাইরাস থেকে রক্ষার অন্যতম সুরক্ষা উপকরণ পিপিই যা ভাইরাস ঠেকাতে মোটেও কার্যকর নয়। আবার বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নিজেদের কারখানা সচল রাখতে ও করোনাভাইরাসের এই সময়ে বিপুল মুনাফার আশায় নিম্নমানের এসব পিপিই তৈরি করছে।
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, নি¤œমানের সুরক্ষাসামগ্রী ভাইরাস প্রতিরোধ করা থেকে এর মাধ্যমে ছড়ানোর সম্ভাবনা আরও বেশি। শুধু তাই নয় এসব প্লাস্টিক সামগ্রীর বেশিরভাগ পণ্য ব্যাহারের পর যত্রতত্র ফেলে দেয়ার ফলে পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে এবং বিভিন্ন সংক্রামক রোগের জীবানু ছড়ানোর ঝুঁকিও বাড়ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন