শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

সউদীর মর্গে জমছে প্রবাসী কর্মীর লাশ আর লাশ মিলছে না অভিভাবকদের অনুমতি

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০২০, ১:৫৮ পিএম

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীর মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে সউদীতে। দেশটি থেকে সকল ফ্লাইট বন্ধ থাকায় বাংলাদেশিদের লাশ জমা হচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতালের হিমঘরে। পরিবারের সম্মতি না পাওয়ায় স্থানীয়ভাবে লাশগুলো দাফনও করা যাচ্ছে না। এদিকে সউদী আরবে মারা যাওয়া প্রবাসীর লাশ বাংলাদেশে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। স্থানীয়ভাবে লাশ দাফনের জন্য সউদী সরকার বাংলাদেশ দূতাবাসকে বার বার চাপ দিচ্ছে। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরে বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় দেশটির বিভিন্ন হাসপাতালের হিমঘরে লাশ রাখার জায়গা হচ্ছে না।

জেদ্দা বাংলাদেশ কনস্যুলেটের একটি সূত্র জানায়, করোনা পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণকারী প্রবাসীদের লাশ স্থানীয়ভাবে দাফনের জন্য তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অফিস বন্ধ থাকায় মৃত প্রবাসী কর্মীদের স্বজনদের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করে লাশ দাফনের অনুমতি সউদীতে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।

রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি সূত্র জানায়, প্রতিবছর সউদী আরবে প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশি কর্মী বিভিন্ন কারণে মারা যায়। দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৭৭ প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। দু’শতাধিক প্রবাসী কর্মীর লাশ বিভিন্ন হাসপাতাল মর্গে পড়ে রয়েছে। যথাসময়ে পরিবারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়া গেলে যথাযথভাবে লাশ দাফন করা সম্ভব হবে।
গত বছরও সউদীতে মারা যাওয়া ৯৯৮ জনের মধ্যে ১১৩ জনের লাশ ছাড়া বাকিদের লাশ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বাকি লাশগুলো পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে স্থানীয়ভাবে দাফন করা হয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা।
করোনা মহামারীর সঙ্কটকালে সব পরিবারকে পরিস্থিতি বিবেচনা করে সউদীতে লাশ দাফনের অনুমতি দিতে অনুরোধ জানিয়েছে দূতাবাস ও কনস্যুলেট জেনারেল জেদ্দা। লাশ সউদী আরবে স্থানীয়ভাবে দাফন করা হলেও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল থেকে তিন লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা পাবে মৃত ব্যক্তির পরিবার।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের কর্মকর্তা শরিফুল আলম আজ সোমবার ইনকিলাবকে জানান, ২০১৯ সনে সউদীসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ৩ হাজার ৬৫৮ জন প্রবাসী কর্মীর লাশ দেশে আনা হয়েছে। বিমান বন্দর থেকে এসব লাশ দাফনের জন্য প্রত্যেক পরিবারকে ৩৫ হাজার টাকা করে (নগদ সহায়তা) সর্বমোট ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া একই বছর ৪ হাজার ৭৭ জন মৃত প্রবাসী কর্মীর পরিবারের মাঝে জনপ্রতি তিন লাখ টাকা করে ১শ’ ২০ কোটি ১০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে অফিস বন্ধ থাকায় প্রবাসে মৃত কর্মীর লাশ দাফনে স্বজনদের অনুমতি নেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এছাড়া করোনা মহামারী সঙ্কটের দরুণ অফিস বন্ধ থাকায় গত আড়াই মাস যাবত হাজার হাজার প্রবাসী মৃত কর্মীর স্বজনরা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে তিন লাখ টাকার আর্থিক অনুদান পাচ্ছে না। এসব মৃত প্রবাসীর অসহায় পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। প্রতিদিন মৃত প্রবাসী কর্মীদের অনেক অসহায় পরিবার আর্থিক অনুদান পাওয়ার জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের গেইটে গিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরছে। তারা অনলাইনের মাধ্যমে তিন লাখ টাকার আর্থিক অনুদান জরুরিভিত্তিতে আসন্ন ঈদের আগেই পরিশোধের জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন