শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ডিজিটাল পদ্ধতিতেও ত্রাণ চুরির হিড়িক

| প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০২০, ১২:০৩ এএম

করোনা মহামারীতে সাধারণ ছুটি ও লকডাউনের কারণে কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। প্রাণঘাতী ভাইরাসের ঝুঁকি থাকলেও সংক্রমণ প্রতিরোধে এসব মানুষকে ঘরে থাকার পরামর্শ বা নির্দেশনা দেয়া অরণ্যে রোদনের মতো। এ কারণে সরকার তাৎক্ষণিকভাবেই কোটি মানুষকে ত্রাণ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি সারাদেশে একশ্রেণির স্বচ্ছল মানুষ এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও ঘরবন্দি মানুষের ঘরে খাদ্য ও মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। কিন্তু জনগণের রাজস্বের টাকায় বরাদ্দকৃত সরকারি অনুদান ও ১০ টাকা কেজির ভর্তুকিমূল্যের চাল বিতরণ নিয়ে নানা স্থানে হরিলুটের চিত্র ধরা পড়ে। একশ্রেণির জনপ্রতিনিধি ও সরকারি দলের স্থানীয় নেতাদের বাড়িতে, গুদামে, দোকানে শত শত বস্তা সরকারি চাল, ডাল, তেল, চিনি অবৈধ মজুদ ধরা পড়তে দেখা যায়। এভাবেই জনকল্যাণে গৃহীত সরকারের একটি মহতী উদ্যোগ কিছু সংখ্যক মানুষের চৌর্যবৃত্তির দ্বারা কলঙ্কিত ও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে একের পর এক ত্রাণ চুরির ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর দু-চারজন গ্রেফতার হলেও এসব অপকর্মের সাথে জড়িত বেশিরভাগ অপরাধীই এখনো অধরাই রয়ে গেছে। গতানুগতিক পদ্ধতির ত্রাণ বিতরণ ও স্বল্পমূল্যে খাদ্য সহায়তায় চুরি-চামারির এমন দৃষ্টান্ত সরকারের শীর্ষ মহলকে বিব্রত করেছে। এ কারণেই করোনা মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারকে ২৫০০ টাকা করে নগদ সহায়তা পৌঁছে দিতে ডিজিটাল ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখা হয়েছিল। শত শত বস্তা ত্রাণ সামগ্রী আত্মসাতের ধারাবাহিকতায় দুর্নীতিবাজ প্রতারকরা এবার ডিজিটাল ব্যবস্থায়ও তাদের কালোহাত প্রসারিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০ লাখ পরিবারের কাছে আর্থিক অনুদান পৌঁছে দিতে গত ১৪ মে ডিজিটাল ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি দলের স্থানীয় নেতাদের জালিয়াতির চিত্র বেরিয়ে আসতে থাকে। প্রথমত সরকারি অর্থ বরাদ্দের জন্য তালিকা প্রণয়নের দায়িত্ব পালনে নানাবিধ অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এবং একচ্ছত্র দলবাজির অভিযোগ উঠেছে। তালিকাভুক্ত প্রত্যেকের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে টাকা পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হলেও আদতে দেখা গেল, এখানেও শুভঙ্করের ফাঁকি। কোথাও কোথাও তালিকাভুক্ত অনেক ব্যক্তির জন্য একই মোবাইল নম্বর সরবরাহের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নিজস্ব ফোন নম্বর দিয়ে তালিকাভুক্ত শত জনের টাকা উত্তোলন করে আত্মসাতের চেষ্টা করেছে। সেই সাথে অনেক ভুয়া নামের পাশাপাশি সরকারি সুবিধাভোগী এবং সরকারি দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের নাম ব্যাপক হারে সরকারি অর্থসহায়তার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে হাজার কোটি টাকার সরকারি অর্থ সহায়তার একটি প্রশংসনীয় প্রকল্পকে বিতর্কিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত করে তোলা হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ফাঁস হওয়ার মধ্য দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ বেহাত হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে বলে জানা যায়।
বৈশ্বিক মহামারী ও জাতীয় দুর্যোগের সময় কোটি মানুষের ত্রাণ সহায়তার জাতীয় প্যাকেজকে স্বচ্ছভাবে বিলিবণ্টনের লক্ষ্যে ডিজিটাল ব্যবস্থাকে যারা দুর্নীতিগ্রস্ত করেছে, দুর্যোগ ও দুর্ভিক্ষের সময়েও যারা জনগণের সম্পদের নিরপেক্ষ বণ্টনের বদলে কুক্ষিগত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ইতিপূর্বে যারা ১০ টাকা কেজির চাল ও টিসিবি’র ন্যায্যমূল্যের পণ্য কালোবাজারে বিক্রির সাথে জড়িত ছিল তাদেরকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিচারের আওতায় আনলে এখন ডিজিটাল পদ্ধতিকে অস্বচ্ছ ও কলঙ্কিত করার ঘটনা হয়তো ঘটত না। এই মহামারীর সময় বোঝার উপর শাকের আঁটির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আম্ফানের আঘাত দেশের উপকূলবর্তী জনপদের লাখ লাখ মানুষকে চরম দুরবস্থায় ঠেলে দিয়েছে। প্রতিটি দুর্যোগের পর রাষ্ট্রীয়ভাবে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের তহবিল বরাদ্দ করা হলেও এসব বাজেটের কতটা ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষের হাতে পৌঁছায় তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। আম্ফানে উদ্বাস্তু ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সরকারি ত্রাণ ও পুনর্বাসন সহায়তার অর্থ যেন আর দলীয় মধ্যস্বত্বভোগিদের হাতে ছিনতাই হয়ে না যায় সে দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। বৈশ্বিক মহামারীতে বিশ্বের সব দেশেই সরকারি ত্রাণ সহায়তা ও উদ্ধার তহবিলের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। কোথাও এমন এনালগ-ডিজিটাল চৌর্যবৃত্তি ও রাজনৈতিক দলীয়করণের নজির নেই। জাতীয় দুর্যোগের সময় দরিদ্র জনগণের প্রাপ্য অর্থ লোপাটের কারসাজির সাথে যারা জড়িত তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শান্তির আওতায় না আনলে এ ধরনের চৌর্যবৃত্তি এবং দরিদ্র মানুষের বঞ্চনা কখনো বন্ধ হবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
jack ali ২১ মে, ২০২০, ১২:১০ পিএম says : 0
Until and unless we rule our country by the Law of Allah [SWT] this Barbarian government will keep committing crime against humanity.
Total Reply(0)
jack ali ২১ মে, ২০২০, ১২:১৮ পিএম says : 0
If our country is ruled by the Law of Allah then Punishment of these thieves according to Qur´an: {[As for] the thief, the male and the female, amputate their hands in recompense for what they earned [i.e. committed] as a deterrent [punishment] from Allah. And Allah is Exalted in Might and Wise.} (Quran 5:38) The Prophet cursed the thief because he is a corrupt element in society, and if he is left unpunished, his corruption will spread and infect the body of the Ummah (Muslim community).
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন