উত্তর-পূর্ব ভারতে উজানে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে করে বাংলাদেশের ভাটির দিকে উত্তর জনপদে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ এবং উত্তর-পূর্বে তথা সিলেট বিভাগের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ মঙ্গলবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র একথা জানায়।
নদ-নদীর প্রবাহ পরিস্থিতি তুলে ধরে কেন্দ্রের পূর্বাভাসে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, গঙ্গা ব্যতীত দেশের প্রধান সব নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং এর সংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় ও বরাক অববাহিকায় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে।
এরফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীসমূহের পানির সমতল উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে এ মুহূর্তে বন্যার আশঙ্কার কথা পাউবো’র এই পূর্বাভাসে বলা হয়নি।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র আরও জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্ব ভারতের সিকিম, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা এলাকায় উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরমধ্যে চেরাপুঞ্জিতে ১৯৫ মিলিমিটার, গোয়ালপাড়া ১৩৬ মি.মি., ধুবরী ৭৮ মি.মি., তেজপুরে ৫৬ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়। সিলেটে জাফলংয়ে সর্বোচ্চ ৬২ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়।
গতকাল দেশের ৯৩টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে পানি বৃদ্ধি পায় ৬১টিতে। হ্রাস পায় ২৭টিতে। পানি অপরিবর্তিত থাকে ৪টি স্টেশনে। এখনও কোনও পয়েন্টে পানি বিপদসীমায় যায়নি।
সমুদ্র উত্তাল-
বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপে তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এতে করে সমুদ্র আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় আমফান দুর্বণ স্থল লঘুচাপ আকারে ভারতের দিকে কেটে যাওয়ার পরই সমুদ্র বন্দরসমূহে সতর্ক সঙ্কেত প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু হঠাৎ বৈরী আবহাওয়ায় বন্দরসমূহকে ফের সতর্ক সঙ্কেত দেখানো হচ্ছে।
সতর্ক বার্তায় আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান খান জানান, উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
সমুদ্রে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য এবং সেই সঙ্গে অমাবস্যার সক্রিয় প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট উঁচু মৃদু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
জ্যৈষ্ঠের তাপমাত্রায় স্বস্তি-
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের কয়েক জায়গায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ বর্ষণ হয় ডিমলায় ২৯ মি.মি.। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহী ও যশোরে ৩৪.৬ ডিগ্রি সে.। ঢাকার পারদ ছিল সর্বোচ্চ ৩২.৭ এবং সর্বনিম্ন ২৭.৭ ডিগ্রি সে.।
আগামীকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত এবং কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।
পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টি বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। এরপরের ৫ দিনে বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে বঙ্গোপসাগর অশান্ত থাকা এবং অমাবস্যার সক্রিয় প্রভাবে দেশের প্রত্যন্ত চর-উপকূল-দ্বীপাঞ্চলের নিচু এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা ও সতর্কতার জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। এতে করে গত ২২ মে’র ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’র জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে এবং এরআগে থেকেই সাগরের বেড়িবাঁধ কমবেশি ভাঙাচোরা, বিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় ফের জলোচ্ছ্বাস হলে উপকূলবাসীর ঝুঁকি আবারও বাড়বে। বাড়বে জনদুর্ভোগ। দক্ষিণের উপকূলীয় বিভিন্ন গ্রাম-জনপদ এখনও ডুবে আছে। নিয়মিত জোয়ারের পানি ঢেউ খেলছে।
সমুদ্র উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থানরত আমদানী পণ্যভর্তি বড়সড় (মাদার) জাহাজবহর থেকে ছোট ছোট লাইটারেজ জাহাজ, নৌযান, কোস্টারে মালামাল খালাস ও পরিবহন কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন