শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ও ঘন কুয়াশায় দক্ষিণের জনজীবন বিপন্ন

জনস্বাস্থ্য ও কৃষিতে সংকট বাড়ছে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ১:২৫ পিএম

মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার সাথে ঘন কুয়াশায় দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন বিপন্ন প্রায়। মেঘনা অববাহিকায় শেষ রাত থেকে ঘন কুয়াশায় গত দুদিন ধরে দক্ষিণাঞ্চলের নৌযোগাযোগও মাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। সড়ক পথেও ঝুকি বাড়ছে। রোববার সকাল থেকে ঢাকাÑফরিদপুরÑবরিশাল মহাসড়কের দৌলতদিয়-পাটুরিয়া সেক্টরে বেশ কয়েক ঘন্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। এমনকি রাজধানী সহ সন্নিহিত এলাকার সাথে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সংক্ষিপ্ত সড়কে পথের পদ্মা সেতু পাড় হতেও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের তাগিদ দিয়েছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞগন।
তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নিচে নেমে যাওয়ায় শিশু ও বয়স্কদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন। গত এক মাসে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ নিয়ে প্রায় আড়াই হাজার শিশু বয়স্ক ভর্তি হয়েছেন বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে। কনকনে শীতের সাথে ঘন কুয়াশায় বোরো বীজতলা ‘কোল্ড ইনজুরি’র কবলে পড়ার আশংকাও ক্রমশ বাড়ছে। সাথে মাঠে থাকা ফুলকপি ও বাঁধাকপি সহ বিভিন্ন সবজির গুনগত মান নষ্ট হবার আশংকা দেখা দিয়েছে। এমনকি ঘন কুয়শার সাথে মেঘলা আকাশ গমের ‘ব্লাস্ট’ রোগের ঝুকিও বৃদ্ধি করছে। রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে মাঝারী কুয়শার সাথে আকাশ অংশিক মেঘলা ছিল।
গত দুদিন ধরে বরিশালে তাপমাত্রার পারদ ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছে পীঠে রয়েছে। যা এসময়ে স্বাভাবিক ১৩.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসের ১ থেকে ১.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস নিচে। আবহাওয়া বিভাগ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত এটি লঘুচাপ একই এলাকায় বিরাজমান রয়েছে বলে জানিয়ে এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত থাকার কথা বলা হয়েছে। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
এবার দক্ষিণ উপক’ল থেকে বর্ষা মাথায় করে গত ২০ অক্টোবর দক্ষিণÑপশ্চিম মৌসুমী বায়ু বিদায় নিলেও সিত্রাং-এর প্রভাবে ২৪ অক্টোবর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা উপক’লভাগে ধেয়ে এসে প্রবল বর্ষণে ভাসিয়ে দেয় সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল। এরপরে শীতের আগমন নিয়েও লুকোচুরি খেলার পরে তা অনেকটাই জাকিয়ে বসছে। অপরদিকে বিদায়ী বর্ষা মৌসুম যুড়েই দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টির অভাব প্রকট ছিল। ফলে জনস্বাস্থ্যের সাথে কৃষি ব্যবস্থায় বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। এখন তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের নিচে নেমে যাওয়ায় রবি ফসল নিয়েও দুঃশ্চিন্তা বাড়ছে।
গত এপ্রিলে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে স্বাভাবিকের ৮৫.৬% কম বৃষ্টি হয়েছে। মে মাসেও বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের ৫.৬% কম। অথচ ঐ মাসেই ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’তে ভর করে ৭ থেকে ১১ মে পর্যন্ত অতি বর্ষণে তরমুজ সহ বিভিন্ন রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। জুনে বরিশালে স্বাভাবিক ৪৮৩ মিলিমিটারের স্থলে আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস ছিল ৪৬০ থেকে ৫১০ মিলি। কিন্তু বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের ৪৪.৪৫% কম। জুলাই মাসে স্বাভাবিকের প্রায় ৬৫% কম বৃষ্টিপাতের পরে আগষ্টেও বরিশালে স্বাভাবিকের ১৬.৪% কম বৃষ্টি হয়েছে। সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিক ৩১৬ মিলিমিটারের স্থলে ৩৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হলেও অক্টোবরে স্বাভাবিক ১৭৬ মিলিমিটারের স্থলে বরিশালে ৪৪১ মিলি বৃষ্টিপাতের কথা বলে আবহাওয়া বিভাগ। অথচ দক্ষিণ উপক’ল থেকে বর্ষা মাথায় করে গত ২০ অক্টোবর দক্ষিণÑপশ্চিম মৌসুমী বায়ু বিদায় নিলেও ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এ ভর করে বরিশালে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ১৫০% বেশী বৃষ্টি হয়েছে। যা আগের মাসে ছিল স্বাভাবিকের ৬.৬% বেশী। তবে নভেম্বর মাসেও বরিশালে স্বাভাবিকের ৯৮% কম বষ্টি হয়েছে ।
আবহাওয়ার এ বিচিত্র পরিস্থিতি জনস্বাস্থ্য ও কৃষি সহ পরিবেশের জন্য কোন শুভ সংবাদ দিচ্ছেনা বলেই মনে করছেন কৃষি বিজ্ঞানী ও পরিবেশবীদগন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন