শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

শ্বাসকষ্ট রোগ সিওপিডি

| প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০২০, ১২:০১ এএম

সিওপিডি ধুমপায়ীদের শ্বাসকষ্ট জনিত খুব পরিচিত রোগ। আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি হাসপাতালে প্রতিদিন অনেক সিওপিডির রোগী শ্বাস কাস নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়। এই নামটির সাথে আমাদের অনেকেরই পরিচয় নেই যদিও প্রচুর সিওপিডির রোগী আছে বাংলাদেশে। আবার আমাদের অনেকের কাছেই এটি নতুন কিন্তু এটি আসলে অনেক পুরাতন শ্বাসতন্ত্রেও এক ধরনের জটিল রোগ ।

সিওপিডির পুরো অর্থ হচ্ছে Chronic Obstructive Pulmonary Disease। বাংলায় এর অর্থ হয় ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী শ্বাস প্রতিরোধক রোগ। এই রোগের জন্য প্রধানত দায়ী ধূমপান। তবে একদিন দুইদিন ধূমপান করলেই যেএই রোগ হয়ে যাবে তা নয়। দীর্ঘদিন যদি বেশি বেশি করে সিগারেট খাওয়া হয় তবে এই রোগ হবার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। এছাড়া বিভিন্ন ধোঁয়া এবং দূষিত বাতাস কোন ব্যক্তির শ্বাসের সাথে দীর্ঘদিন নিতে থাকলে শ্বাসনালী কিছুটা স্থায়ী ভাবে সরু হওয়া সহ ফুসফুসের একেবারে ভেতরে বায়ুথলি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এর ফলে ফুসফুসের বায়ু প্রবাহকে বাধাগ্রস্থ করে ফলে রোগী শ্বাস কষ্ট ও কাশিসহ দীর্ঘস্থায়ী ভোগান্তিতে পড়ে যায়।
এই রোগের লক্ষণগুলি অনেকটা অ্যাজমার বা হাঁপানির মতই। তবে ভালভাবে ইতিহাস নিলে অ্যাজমা এবং সিওপিডি রোগ আলাদা করা যায়। সিওপিডি রোগটিতে প্রায়ই দেখা যায় রোগী দীর্ঘদিন ধরে কাশিতে ভুগতে থাকে। কাশির সাথে অনেকসময় বিভিন্ন পরিমানে কফ বের হয়। রোগী পরবর্তীতে প্রায় সবসময়ই শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকে। শ্বাস কষ্ট ধীরে ধীরে মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং বিভিন্ন জটিলতা আস্তে আস্তে শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ভারী কাজ করতে কষ্ট হয়। রোগী একটুতেই হাঁপিয়ে উঠে। রোগ যত মারাত্মক আকার ধারণ করতে থাকে, রোগী তার দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজগুলিও ঠিকমতো আর করতে পারেনা। বাথরুমে যাওয়া, কাপড় পাল্টানো ইত্যাদি কাজেও সমস্যা হয়। অনেক ক্ষেত্রে রোগী বুকে চাপ বা অস্বস্তি অনুভব করে এবং শ্বাসের সাথে শব্দ হয়।
রক্ত পরীক্ষা, এক্সরে, ইসিজি, ফুসফুসের কর্মক্ষমতার পরীক্ষা করে সহজেই এই রোগ নির্ণয় করা যায় । এই রোগের স্থায়ী কোন চিকিৎসা নেই। ওষুধ নিয়মিত খেলে এবং সাস্থ্যবিধি মেনে চললে রোগী অনেক ভাল অনুভব করে। অপারেশন করা হয় কোন কোন ক্ষেত্রে।
সিওপিডি রোগটি আসলে অনেকটাই প্রতিরোধ যোগ্য। রোগটি প্রতিরোধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এর ফলে রোগের প্রকোপ অনেক কমে আসবে। সিওপিডি থেকে বাঁচতে প্রথমেই ধূমপানকে না বলতে হবে। স্বামী ধূমপান করলে স্ত্রীর এবং বাচ্চার বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। তাই নিজেও ধূমপান করা যাবেনা এবং অন্যদেরও নিষেধ করতে হবে। গৃহস্থলি কাজে স্বাস্থ্য সম্মত চুলা ব্যবহার করতে হবে। দীর্ঘদিন চুলার ধোঁয়া গ্রহণ করলে এই রোগ হতে পারে। তাই চুলার ধোঁয়া বাড়ি থেকে যাতে সরাসরি বের হয়ে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে। নিজ এলাকায় বায়ু দূষণ কমিয়ে আনার জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ধোঁয়া উৎপন্নকারী কারখানা জনবসতির বাইরে রাখা উচিত। সবাই সচেতন হলে সিওপিডির প্রকোপ অনেক কমে যাবে।
ডাঃ মোঃ ফজলুল কবির পাভেল
কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ
পাবনা মেডিকেল কলেজ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন