শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মালয়েশিয়া থেকে এক মাসে এসেছে ৮৩ লাশ

বিমানবন্দরে স্বজনদের আহাজারি

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারীতে বহির্বিশ্বে লাখ লাখ বাংলাদেশি চাকরি হারানো ঝুঁকিতে রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন কোম্পানীতে কাজ না থাকায় অনেক প্রবাসী কর্মীই খালি হাতে দেশে ফিরছে। চলমান এ দুর্দিনে প্রবাসে মৃত কর্মীদের লাশ দেখে স্বজনদের মাঝে চলছে আহাজারি। বিদেশে মৃত কর্মীর লাশ এক নজর দেখার জন্য প্রতিবেশিরাও ছুটে যাচ্ছেন তাদের বাড়িতে। পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে নানা কারণে অনেক কর্মীই মারা যাচ্ছেন। ঋণগ্রস্ত এসব অসহায় প্রবাসীর পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
পরিবারের আর্থিক অভাব অনটনের খবরে মানসিক দুশ্চিন্তা বৃদ্ধি, অপর্যাপ্ত বিশ্রাম, পুষ্টির অভাব এবং অস্বাস্থ্যকর ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাসের কারণে অনেক কর্মী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে।

বিমান বন্দরের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিশেষ ফ্লাইট যোগে প্রতি সপ্তাহেই মৃত কর্মীদের লাশ আসছে। সউদীর বিভিন্ন হাসপাতালে দীর্ঘদিন যাবত শতাধিক প্রবাসী কর্মীর লাশ পড়ে রয়েছে। রিয়াদের একটি হাসপাতাল মর্গেই ৮১ প্রবাসী কর্মীর লাশ পড়ে রয়েছে। এসব লাশ দ্রæত দাফনের জন্য সউদী সরকার রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসকে দফায় দফায় চাপ দিচ্ছে। স্বজনের অনুমতির অভাবে এসব লাশ দেশে পাঠাতে বিলম্ব হচ্ছে।

এদিকে, মালয়েশিয়া থেকে অনেক প্রবাসী কর্মী লাশ হয়ে দেশে ফিরছে। গত এক মাসে ৮৩ প্রবাসী কর্মীর লাশ দেশে পৌঁছেছে। সোমবার গভীর রাতেও ১৫ লাশ শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছেছে।
মালয়েশিয়া থেকে আসা প্রবাসী কর্মীদের লাশ পরিবহনের ভাড়া বাবদ এবং দাফন কাফনের জন্য ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল থেকে প্রত্যেক পরিবারকে ৩৫ হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে কল্যাণ তহবিল থেকে প্রবাসে মৃত কর্মীদের পরিবারকে তিন লাখ টাকা করে দেয়া হয়।

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সেলর (শ্রম) জহিরুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার ইনকিলাবকে জানান, মৃত কর্মীদের লাশ দেশে পাঠানোর দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কোম্পানীগুলোর। তারা একটি সংস্থার মাধ্যমে মৃত কর্মীদের লাশ বাংলাদেশে পাঠায়। সেক্ষেত্রে হাইকমিশন শুধু লাশ পাঠানোর অনুমতি দিয়ে থাকে। তিনি বলেন, মৃত কর্মীর লাশ দেশে পাঠাতে সংশ্লিষ্ট আত্মীয় স্বজনের অনুমতিপত্র লাগে। এ জন্য লাশ পাঠাতে কিছুটা বিলম্ব হয় ।

মালয়েশিয়ার পেনাংস্থ মুসলিম কমিউনিটি অব বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান ও প্রবাসী ব্যবসায়ী মো. মোশাররফ হোসেন রিপন গতকাল মঙ্গলবার ইনকিলাবকে বলেন, মালয়েশিয়ায় অভিবাসী কর্মীদের অনেক আবাসনগুলোই স্বাস্থ্য সম্মত নয়। প্রবাসী কর্মীদের হোষ্টেলগুলোতে পর্যাপ্ত আলো বাতাস নেই। দেশটির অনেক কোম্পানী আর্থিক সাশ্রয়ের কথা চিন্তা করে কর্মীদেরকে হোষ্টেলে গাদাগাদি করে রাখে।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী ব্যবসায়ী রিপন বলেন, অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় বহন করে কর্মীরা বিদেশে গিয়ে সর্বদাই মারাত্মক দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। তিনি বলেন, কর্মস্থলে যথাযথ নিরাপত্তা এবং অধিকার সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েই কর্মীদের বিদেশে যেতে হবে। এতে প্রবাসে কর্মীদের মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন