শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

দিক দর্শন সালাত মানব জীবনে এক অনন্য সওগাত

প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
সালাতের সামাজিক তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সালাতে এসে একজন মু’মিনের অন্তরে এ অনুভূতির সৃষ্টি হয় যে, তার চারপাশে এবং সমাজের সর্বত্র বিরাজ করছে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব। সে বসবাস করছে সামরিক শৃঙ্খলার মতো বৈশিষ্ট্যপূর্ণ একটি পরিবেশে। মুয়াযযিনের আযানের ধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে সকলেই ছুটে আসে নির্ধারিত মিলনস্থল বা মসজিদে। ইমামের পেছনে সবাই দাঁড়িয়ে যায় সারিবদ্ধভাবে। সকলে একই ধরনের ক্রিয়া-কর্মে এবং অঙ্গচালনায় লিপ্ত হয়। তখন তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় অদ্ভুত রকমের সমন্বয় ও ঐক্য। উপরন্তু বিশ্বের যে কোন স্থানের সকল মু’মিন সালাতের সময় কা’বার দিকে মুখ করে দাঁড়ায়। মক্কায় অবস্থিত এ কা’বা শরীফ হল আল্লাহর ঘর এবং কা’বাই সকলের অভিন্ন লক্ষ্যস্থল। এ কা’বা ঘর বিশ্বজগতের মুসলমানদের মধ্যকার ঐক্যের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। এখানে শ্রেণী, বর্ণ, বা অঞ্চলের ভিত্তিতে কোন রকম তারতম্য বা বৈষম্য সৃষ্টির অবকাশ নেই।
জামাআতে সালাত আদায় করাটাই উত্তম ও অধিকতর সওয়াবের। তবে জামাআতে সালাত আদায় করার সম্ভাবনা বা পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকলে পুরুষ বা মহিলা যে কেউ একাকী এবং ব্যক্তিগতভাবে সালাত আদায় করতে পারে। দিনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার অর্থ হল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তত ২৪ মিনিট আল্লাহর সান্নিধ্যে এবং তাঁর স্মরণে সময় অতিবাহিত করা। তবে প্রকৃত অর্থে একজন মু’মিন মুসলমানকে প্রতি মুহূর্তে আল্লাহকে স্মরণ করা উচিত। সে আল্লাহকে স্মরণ করবে সুখে ও দুঃখে, কর্মে ও বিশ্রামে এবং কোন কাজে লিপ্ত থাকা অবস্থায়। কুরআন মজীদে বলা হয়েছে যে আকাশ ম-ল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন লোকের জন্যযারা দাঁড়িয়ে, বসে বা শুইয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশ ম-ল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে এবং বলে, হে আমাদের রব, এ তুমি নিরর্থক সৃষ্টি করনি, তুমি পবিত্র, তুমি আমাদেরকে দোযখের আগুন হতে রক্ষা কর (৩ ঃ ১৯০-১৯১)।
মানুষের প্রয়োজন এবং সুবিধার্থে আল্লাহ তা’আলা এ বিশ্ব জগতকে তার অধীন করে দিয়েছেন। এ সুবিধা বা নিয়ামতের জন্য তাকে কৃতজ্ঞ ও অনুগত থাকতে হবে। সে আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে না। অবিচার ও বেআইন সাফী করবে না জগৎ সংসারের কারো প্রতি।
এখানে উল্লেখ্য যে, যে মুহূর্তে মানুষের জন্য সালাত আদায়ের বিধানকে বাধ্যতামূলক করা হয় তখন কুরআন মজীদে এ ঘোষণা দেয়া হয় যে, “আল্লাহ কারো উপর এমন কোন কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না যা তার সাধ্যাতীত। ” (২ঃ ২৮৬)
অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা মানুষকে বিচার করবেন তার অভিপ্রায় ও নিয়ত অনুসারে। সে কোন পন্থায় কতবার আল্লাহকে স্মরণ করল, সেটা তাঁর কাছে গৌণ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, বস্তুগত ও জাগতিক কাজ-কর্মের শত ব্যস্ততার মধ্যেও পারমার্থিক ও আধ্যাত্মিক দায়িত্বের কথা কারো ভুলে যাওয়া উচিত নয়। কেবল মাত্র অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম সালাত আদায় করার সুযোগ রয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে ব্যক্তির অসুস্থতা ও অবচেতন অবস্থা অথবা এমন কোন কর্মব্যস্ততা যার মধ্যে ব্যক্তিকে বাধ্য হয়ে নিয়োজিত থাকতে হয়েছে।
হাদীসে উল্লেখ আছে যে, খন্দকের যুদ্ধের সময় শত্রুপক্ষ মুসলমানদের ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছিল। এমন কি রাসূল মুহাম্মদ (সা.) দিবাভাগের সালাত আদায় করার জন্য এক মুহূর্ত অবসর পাননি। ফলে তিনি যোহর, আসর, মাগরিব ও ইশার সালাত গভীর রাতে এক সঙ্গে আদায় করেছিলেন। ইবন আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত আছে যে, (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, ইবন হাম্বল, মালিক) কখনো কখনো রাসূল করীম (সা.) যোহরের সঙ্গে আসর এবং মাগরিবের সঙ্গে ইশার সালাত আদায় করতেন (হজ্জ পালনকালে) অথচ এ সময় শত্রুর ভয় বা সফরের কোন অসুবিধা ছিল না। আসলে মুসলিম উম্মাহর সালাত আদায়ে যাতে কোন অসুবিধা না হয় সে জন্যই এরূপ করেছিলেন। এ বর্ণনা অনুসারে উক্ত দিনগুলোতে তিনি সালাত আদায় করতেন তিনবার (যোহরের সময় যোহর ও আসর এক সঙ্গে এবং ইশার সময় মাগরিব ও ইশা এক সঙ্গে) বস্তুতপক্ষে এ সব কিছু নির্ভর করে মু’মিন মুসলমানের ব্যক্তিগত বিবেচনার উপর এবং এখানে তাকে ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হয়। সে কোন রকম প্রতারণার আশ্রয় নিতে বা কোন কিছু আল্লাহর নিকট থেকে গোপন রাখতে পারে না।
আমরা জানি যে, বিষুবীয় বা গ্রীষ্মম-লীয় অঞ্চল ও মেরু অঞ্চলের মধ্যে সূর্য উদয় ও অস্তের মধ্যে যথেষ্ট তারতম্য রয়েছে। আল-বেরুনী দেখিয়েছেন যে, মেরু অঞ্চলে এক নাগাড়ে ছয় মাস উদীয়মান থাকার পর আবার অস্ত যায়। ইসলামের শরীয়ত বিশারদগণ উল্লেখ করেছেন যে, এতদঞ্চলে কেউ সূর্যের উদয়-অস্তের হিসাবে চলতে পারে না। বরং তাকে চলতে হয় ঘড়ির কাঁটার হিসাবে। সালাত, সওম এবং অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগীর জন্য এ বিধান প্রযোজ্য। মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসে বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট কিছুদিন এবং সন্তান প্রসবের পর কিছুদিন সালাত বিধান শিথিল করা হয়েছে।
একজন মু’মিন মুসলমানের জন্য দ্বিতীয় ধর্মীয় দায়িত্ব হল বছরে এক মাস সিয়াম পালন করা। বিষুবীয় ও গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চলের মুসলমানরা রমযান মাসে রোযা রাখে দিবাভাগে। অর্থাৎ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকে। আর যারা মেরু অঞ্চল এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বসবাস করে, তারা বিষুবীয় অঞ্চলের সমপরিমাণ সময়ের জন্য পানাহার করা থেকে বিরত থাকে। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পানাহারের সঙ্গে সঙ্গে যে সমস্ত জাগতিক চিন্তা ও ইন্দ্রিয় সুখ আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধির পরিপন্থী তাও পরিহার করতে হয়। বস্তুতপক্ষে সিয়ামের মধ্যে রয়েছে কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলা। অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের কাছে ইসলামের এ নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলা দুষ্কর বলে মনে হতে পারে। কিন্তু বিগত শতাব্দীগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে যে, ইচ্ছা এবং আগ্রহ থাকলে নওমুসলিমগণও অনায়াসে এ সমস্ত নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলতে পারে।
ইসলামে বছর গণনা করা হয় চান্দ্র মাসের হিসাবে এবং গোটা রমযান মাস একজন মু’মিনকে সিয়াম পালন করতে হয়। ফলে বছরের সকল ঋতুতে অর্থাৎ গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত বসন্ত পালা করে সিয়াম পালনের মাস রমযানুল মুবারক আসে। কোন ঋতুতে প্রচ- গরম পড়ে। আবার কোন ঋতুতে থাকে হাড় কাঁপানো শীত। মুসলমানগণ বিভিন্ন ঋতুর প্রতিকূল এবং ক্লেশকর পরিস্থিতির মধ্যেই সিয়াম পালন করে থাকেন। তারা এসব করে থাকেন আধ্যাত্মিকসাধনা এবং আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে।
সিয়াম পালনের আধ্যাত্মিক সুবিধা ছাড়াও জাগতিক বা পার্থিব উপকারিতা রয়েছে। সালাতে যে উপকারগুলো রয়েছে, সিয়াম পালন করেও সেগুলো পাওয়া যায়। সিয়াম পালনের মধ্য দিয়ে আরো পাওয়া যায় স্বাস্থ্যগত সুবিধা ও সামরিক প্রশিক্ষণ। তাছাড়া সিয়াম পালনের মাধ্যমে ইচ্ছাশক্তির বিকাশ ও উন্নয়ন ঘটে। বিশেষ করে অবরোধ এবং যুদ্ধকালীন সময়ে সামরিক বাহিনীর লোকদের খাদ্য ও পানির কষ্ট করতে হয়। এরপরও তারা প্রতিরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের প্রতি অবিচল থাকে। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অতি সহজে এ শিক্ষা লাভ করা যায়। সে কারণেই যে শাসক বা সেনানায়ক রমযান মাসে তার সৈন্যদেরকে সিয়াম পালন করতে নিষেধ করে, সে সত্যিকার অর্থেই একজন নির্বোধ। কিন্তু একথা অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে যে, সিয়ামের মূল ও প্রধান উদ্দেশ্য হল ইবাদত। এর লক্ষ্য হল আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা। কেউ যদি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে অথবা অন্য কোন কারণে কেবলমাত্র পার্থিব উদ্দেশ্যে পানাহার করা থেকে বিরত থাকে তাহলে সেটা ইবাদত হিসাবে গণ্য হবে না। আধ্যাত্মিকভাবেও সে উপকৃত হবে না।
অসুস্থকালীন সময়ে মহিলারা সালাতের মতো সিয়াম পালন করা থেকেও অব্যাহতি পেয়ে থাকে। তবে এটুকু ব্যক্তিক্রম যে, রমযান মাসে একজন মহিলা যে কয়দিনের জন্য সিয়াম পালন করতে পারছে না, সুস্থ হওয়ার পর তাকে ঠিক সে কয়দিন সিয়াম পালন করতে হবে। যারা রুগ্ন তাদের জন্যও এই একই বিধান প্রযোজ্য। আবার যে খুব বেশি বৃদ্ধ, সে সিয়াম পালন করার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত। তবে তার আর্থিক সঙ্গতি থাকলে রমযান মাসের একটি রোযার জন্য তাকে একজন দরিদ্র পানাহারের ব্যবস্থা করতে হবে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, রাসূলে করীম (সা.) লাগাতার কয়েকদিনের জন্য যেমন ৪৮ অথবা ৭২ ঘণ্টা সিয়াম পালন করতে নিষেধ করেছেন। তিনি নিষেধ করেছেন সারা বছর বা গোটা জীবনব্যাপী সিয়াম পালন করতে। এমন কি যারা বেশি বেশি আধ্যাত্মিক সাধনা এবং সওয়াবের জন্য অতি উৎসাহী ছিলেন, তাদেরকেও তিনি সারা বছর রোযা রাখতে বারণ করেছেন।
রমযান মাসে সিয়াম পালন করা মুসলমানদের জন্য ফরয। ইচ্ছা করলে এর বাইরেও মাঝে মাঝে সিয়াম পালন করা যায়। তবে সেটা গণ্য হবে অতিরিক্ত এবং নফল ইবাদত হিসাবে। রাসূলে করীম (সা.) এক সঙ্গে দুদিনের জন্য সিয়ামের অনুমোদন দিয়েছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, মাঝেমধ্যে বিরতি দিয়ে সিয়াম পালনের মধ্যে যে সুফল পাওয়া যায়, সিয়াম বা উপবাস নিত্যদিনের স্বভাবে পরিণত হলেও সে ফল পাওয়া যায় না। আবার এক মাসের কম সময় সিয়াম পালন করলে ভাল ফল পাওয়া যায় না। অথচ এক নাগাড়ে ৪০ দিনের বেশি সিয়াম পালন করলে তা নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়।
সমাজে এ রকম একটি ধারণা রয়েছে যে, শীতকালে পানাহার থেকে বিরত থাকলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। বস্তুতপক্ষে এ রকম ধারণার কোন যৌক্তিক ভিত্তি নেই। জীববিদ্যা সম্বন্ধীয় পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে যে, যখন বরফ পড়তে শুরু করে তখন বন্যপ্রাণীরা বাস্তবিক পক্ষে কোন খাদ্য খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। এ সময়ে তাদের অনাহারে ঘুমিয়ে অথবা অন্য কোন উপায়ে সময় কাটাতে হয়। অথচ বসন্তে তারা নতুন উদ্যমে জেগে ওঠে। বৃক্ষরাজির বেলায়ও একথা সত্য। শীতের সময়ে বৃক্ষের পত্র পল্লব পড়ে যায়। এমনকি বৃক্ষরাজিতে পানি সেচের ব্যবস্থা থাকে না। গাছপালাগুলো যেন এ সময়ে ঘুমিয়ে কাটায়। এভাবে মাস কয়েক উপোস থাকার পর বসন্তের শুরুতে তারা আবার যেন নতুন জীবন ফিরে পায়। পূর্বাপেক্ষা যেন অধিকতর সতেজ রূপ লাভ করে। এ সময়ে বৃক্ষরাজিকে দেখা যাবে নতুন পত্র পল্লবে বিকশিত ও মুকুলিত অবস্থায়। বস্তুতপক্ষে প্রাণী দেহের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতো পরিপাক যন্ত্রেরও বিশ্রাম দরকার। পানাহার থেকে বিরত থাকাই এ ধরনের বিশ্রামের একটি উপযুক্ত মাধ্যম। সম্প্রতি পাশ্চাত্য জগতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি নতুন শাখার উদ্ভব হয়েছে। এ পন্থায় প্রধানত ক্রণিক রোগের চিকিৎসার জন্য রোগীকে স্বল্প বা দীর্ঘ সময়ের জন্য পানাহার থেকে বিরত রাখা হয়।
কুরআনুল করীমে বলা হয়েছে যে, “কেউ কোন সৎ কাজ করলে সে তার দশগুণ সওয়াব পাবে এবং কেউ কোন অসৎ কাজ করলে তাকে শুধু তারই প্রতিফল দেয়া হবে, আর তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না” (৬ ঃ ১৬০)। অর্থাৎ একটি ভাল কাজের জন্য আল্লাহ দশগুণ প্রতিদান দিয়ে থাকেন। রাসূল করীম (সা.)-এর একটি হাদীসের রহস্য উদঘাটিত হয়েছে এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে। রাসূল (সা.) বলেছেন যে, যে রমযান মাসে এবং পরবর্তী শাওয়াল মাসে আরও ছয়টি সিয়াম পালন করবে সে যেন গোটা বছরের জন্য সিয়াম পালন করল। ইসলামের দৃষ্টিতে ৩৫৫ দিনে একটি চন্দ্র বছর পূর্ণ হয়। এবং মাস গণনা করা হয় ২৯ অথবা ৩০ দিনে। সুতরাং একজন মু’মিন মুসলিম রমযান মাসের অতিরিক্ত আরো ছয়টি রোযা রাখলে মূলত সে বছরে ৩৫ অথবা ৩৬ দিন সিয়াম পালন করে এবং প্রতিদিনের জন্য দশগুণ হিসাবে সে ৩৫০ দিন অথবা ৩৬০ দিনের সওয়াব পেয়ে যায়।
সূফীয়ায়ে কিরাম লক্ষ্য করেছেন যে, মানব মনের মধ্যে পশু স্বভাবও রয়েছে। এ স্বভাব মানুষের আত্মিক উন্নতির পথে বাঁধার সৃষ্টি করে। দেহকে আত্মার নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে দৈহিক প্রেরণাকে সংযত করতে হয়। সমৃদ্ধ করতে হয় আত্মিক শক্তিকে। লক্ষ্য করা গেছে যে, দৈহিক প্রেরণাকে সংযত করতে হলে একদিকে ক্ষুধা-তৃষ্ণার কষ্ট সহ্য ও বিপুল তাড়নাকে পরিহার করতে হয়। অপর দিকে জিহ্বা ও মনের চাহিদা এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এভাবে দৈহিক প্রেরণাকে যত সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, অন্য কোনভাবে তা সম্ভব নয়। মানুষ যখন তার পশু স্বভাবের উপর আত্মিক ও বিবেকের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে তখনই সে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যায়। পশু স্বভাব কখনো মাথাচাড়া দিয়ে উঠলেও আত্মসংযমের মাধ্যমে তাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যায়। সে কারণেই সিয়ামের মতো কঠোর সংযম সাধনার মাধ্যমে সে পশু স্বভাবকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনার চেষ্টা করে।
কেউ যদি কোন অন্যায় বা পাপকর্ম করে ফেলে তা হলেও সে সিয়াম পালন করে অনুশোচনা করবে ও অনুতপ্ত হবে। সে তার রিপুকে দমন করতে সচেষ্ট হবে। (চলবে)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন