ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের গুরুত্ব অবহেলা করে একের পর এক তাদের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। শ্রীলঙ্কা, নেপাল এবং বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশিগুলোকে অবজ্ঞা করায় অঞ্চলটিতে রাজনৈতিক সমর্থন হারাচ্ছে দেশটি এবং সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে চীন। ফরেন পলিসির এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি ২ পর্বে প্রকাশ করা হল :
ভারত ১৯৭৫ সালের পর গত সপ্তাহে প্রথমবারের মতো চীনের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী সীমান্ত সংঘর্ষে কোনোমতে ক্ষতি সামলে নিয়েছে। ইতিহাসে একটু পেছনে তাকালেই ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা সহজ হবে এবং তা করলে নয়াদিল্লি বুঝতে পারবে যে, তার সমস্যাগুলো কোনোভাবেই আর বেইজিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; প্রতিবেশীদের প্রত্যেকের সাথে ভারতের সম্পর্ক বর্তমানে হতাশাজনক।
বিষয়গুলো অতি সহজেই অন্যরকম হতে পারত। ২০১৪ সালের মে’তে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই নরেন্দ্র মোদি তার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সাউথ এশিয়ান এসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কোঅপারেশন-সার্ক সদস্য প্রতিবেশী আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা থেকে রাষ্ট্র প্রধানদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এটি একটি দক্ষ ক‚টনৈতিক চাল ছিল। কারণ ভারতের কোনও পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রী এত বড় পদক্ষেপ নেননি। এটি ভারতীয় জনতা পার্টির ইশতেহারের অংশ ছিল, যা প্রতিবেশীদের সাথে ভারতের সম্পর্ক উন্নত করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল।
মোদি তার ‘প্রতিবেশী প্রথমে’ উদ্যোগটি সার্কের সদস্য দেশগুলির সাথে সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দেয়ার ক্ষেত্রে একটি নতুন পদক্ষেপ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। ইতিবাচক আঞ্চলিক সম্পর্কের জন্য প্রতিশ্রæতিবদ্ধ হওয়া সত্তে¡ও নয়াদিল্লি সম্পূর্ণ অঞ্চলেই সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়েছে।
২০১৯ সালে পাকিস্তানের সাথে ভারত প্রায় যুদ্ধে নেমে গিয়েছিল এবং দু’দেশের মধ্যে ঘন ঘন ও উচ্চ-মাত্রার সীমান্ত সঙ্ঘাত লেগেই রয়েছে। এক সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহায়তা করলেও ভারতের বর্তমান আচরণে হতাশ বাংলাদেশও। নেপালের সংসদ সবেমাত্র একটি নতুন মানচিত্র অনুমোদন করেছে যার মধ্যে তারা ভারতের দাবিকরা জমি অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা দু’দেশের সম্পর্ককে বিগত বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে নিয়ে ফেলেছে। পাশাপাশি, ঐতিহাসিকভাবে ভারতের সাথে জোটবদ্ধ শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপ, খুব দ্রæত চীনের প্রভাবের কক্ষপথে জোরদার অবস্থান নিয়েছে।
এদিকে আফগানিস্তান গণতন্ত্র সঙ্কটে পড়েছে, তালেবানরা শক্তি ও প্রভাব বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে, যা বিগত কয়েক দশকের ভারতীয় বিনিয়োগ এবং ক‚টনীতির ওপর পানি ঢেলে দিয়েছে। ভারতের সাথে এখনও যুক্তিসঙ্গতভাবে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে এমন একমাত্র দেশ ভুটান। তবে এই বন্ধুত্বও ক্ষুদ্র হিমালয়ান দেশটির চীনের সাথে সীমান্ত বিরোধে ভারতের সমর্থন পাওয়ার জন্য।
২০১৫ সালের ভ‚মিকম্পের পর সে বছর এপ্রিলে নেপাল একটি নতুন সংবিধান গ্রহণের সময় বেশিরভাগ ঘরোয়া বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিল, বিশেষত মাধেসিস নামে পরিচিত একটি আদিবাসি, যারা নেপাল-ভারত সীমান্তে বসবাস করে। তাদের বিশ্বাস ছিল যে, নতুন সংবিধানে তাদের স্বার্থের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব করা হয়নি। যেহেতু কিছু মাধেসিস উত্তর ভারতেও বসবাস করে, সেই সুযোগ নিয়ে মোদি সরকার নেপালে তাদের ভোটের ব্যবস্থা করতে দেশটির ওপর একটি অনানুষ্ঠানিক অবরোধ আরোপ করে।
অবরোধের পরিণতিতে নেপালীদের বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ক ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, চালের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায় এবং সরবরাহের তীব্র সঙ্কটের কারণে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার কমপক্ষে পাঁচগুণ ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন