অবাক হওয়ার মতো বিষয় নয় যে, ভারত নেপালের অর্থনীতি বিপর্যস্ত করে দেয়ায় নেপালের ২০১৫ সালের ভুমিকম্পে ভারতের সাহায্যের সুনামটি দ্রুত বাষ্পায়িত হয়ে গেছে। এদিকে দু’দেশের সম্পর্কের তিক্ততার সুযোগে মাঝখানে ঢুকে পড়েছে চীন। দেশটি এই সুবর্ণ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে ভারতের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করার লক্ষ্যে নেপালকে সুযোগ করে দিয়েছে। অন্যান্য ছোট কিন্তু উল্লেখযোগ্য প্রতিবেশীদের প্রতিও মোদির আচরণের কারণে তার প্রথম মেয়াদের অর্জনগুলি ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৫ সালে নয়াদিল্লি সফলভাবে বাংলাদেশের সাথে একটি স্থলসীমা চুক্তি সমাপ্ত করে। ভারতের বহু সংখ্যক নির্বাসিতকে গ্রহণ করতে বাধ্য হওয়া বাংলাদেশ তাদের নাগরিক হিসেবে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে ভারতের চাপের বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিল। অবাক হওয়ার মতো বিষয় নয় যে, এমন বহু কারণে ভারতের সাথে এদেশের সম্পর্ক শীতল হতে শুরু করে। এই সুযোগে চীনের সহযোগিতায় করোনাভাইরাস মহামারী শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছিল এবং আবারও, করোনা মহামারীতে চলমান স্বাস্থ্যসেবা সঙ্কটের প্রেক্ষিতে চীন বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরবরাহের পদক্ষেপ নিয়েছে।
শ্রীলঙ্কার ওপরেও ভারত যথেষ্ট দখল হারিয়েছে। মোদি সরকার সর্বোতভাবে মৈথ্রিপালা সিরিসেনার সরকারকে সমর্থন জানিয়েছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের নভেম্বরে শক্তিশালী গোতাবায়া রাজাপাকসের নির্বাচনী জয়ের সাথে সাথে নয়াদিল্লি আকস্মাৎ নিজেকে পরাজিতদের কাতারে আবিষ্কার করে। কারণ, রাজাপাকসে ভাইরা দীর্ঘদিন ধরে বেইজিংয়ের সাথে সম্পর্ক রেখে চলছিলেন। পরিশেষে, চিরশত্রু পাকিস্তানের সাথে ভারতের সম্পর্কের নাটকীয়ভাবে অবনতি ঘটেছে। বিতর্কিত রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করার লক্ষ্যে ২০১৯ সালের আগস্টে নয়াদিল্লির তড়িৎ পদক্ষেপের ফলে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য বিপর্যয় ঘটে। পাকিস্তান তার রাষ্ট্রদূতকে নয়াদিল্লি থেকে প্রত্যাহার করে নেয় এবং ভারতের দূতকে ইসলামাবাদ থেকে বহিষ্কার করে দেয়। পাকিস্তান ভারতের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক রদ করে দেয় এবং আবারও চীন সেই সুযোগটি লুফে নেয়। বেইজিং তার চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের অংশ হিসাবে পাকিস্তানের নতুন রাস্তা, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং আরব সাগরে গোয়েদার গভীর সমুদ্র বন্দরসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যথেষ্ট বিনিয়োগ করেছে।
দীর্ঘ ৬ বছর পর দেখা যাচ্ছে যে, মোদির ‘প্রতিবেশী প্রথম’ পদক্ষেপের খুব সামান্যই বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে। এবং বেশিরভাগ প্রতিবেশীর সাথে তার সম্পর্ক তিক্ত হয়ে গেছে। ফলস্বরূপ, নয়াদিল্লি প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে পরিবেশগত অবক্ষয় এবং খাদ্য ও পানির সুরক্ষার মতো সাধারণ আঞ্চলিক সমস্যাগুলিতে একাত্ম হওয়ার এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রসারের মতো বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য সুযোগ হাতছাড়া করেছে। একটি স্থিতিশীল কৌশল অবলম্বন করতে ব্যর্থ ভারতকে বর্তমানে তার প্রতিবেশীরা একটি দুর্দান্ত ও চটকদার ফাঁকা বুলি ছাড়া কিছু ভাবছে না। ভারতের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ায় সম্ভবত তারা প্রত্যেকে এখন যে কৌশলটি অনুসরণ করছে সেটিকে আমরা ‘চীন প্রথম’ নীতি বলে অভিহিত করতে পারি এবং এভাবে ক্রমেই এ অঞ্চলে নিজের সমর্থক ও আধিপত্য বাড়িয়ে চলেছে চীন। (সমাপ্ত)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন