বর্তমান সরকারের ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বদলে গেছে সরকারি কর্মকমিশন। নিয়োগকারী সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ক্যাডার সার্ভিসে মেধাবীদের নিয়োগ দিয়ে আসছে। অতীতে দলীয় বিবেচনায় তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ থাকলেও এখন সেটি নেই বললেই চলে। এখন সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। যে কারণে বিভিন্ন মতাদর্শের ছেলে মেয়েরাও বিসিএসে (প্রশাসন, পুলিশসহ বিভিন্ন ক্যাডার) নিয়োগ পাচ্ছেন। সম্প্রতি ক্যাডার সার্ভিসে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পাবলিক সার্ভিস কমিশন কোটা পদ্ধতি উঠিয়ে দিয়েছে। স্বাধীনতার পক্ষ বা বিপক্ষ নয়, যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেবে পিএসসি।
অথচ বিগত সরকারের আমলে তাদের মতাদর্শের বাইরে কোনো কর্মকর্তার পদোন্নতি ছিল চিন্তার বাইরে। এমন কি দলীয় মতাদর্শের বাইরে বিসিএসে নিয়োগ ছিল স্বপ্নের মতো। তখন একটি বিশেষ জায়গার নির্দেশনায় সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হতো। তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া হতো। মেধা, যোগ্যতা থাকা সত্বেও প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে অনেকেই নিয়োগের জন্য বিবেচিত হতেন না। অথচ বিএনপি আমলে নিয়োগ পাওয়া সিভিল, পুলিশসহ অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন সেক্টরে প্রভাব বিস্তার করছেন। তাদের অনেকেই বর্তমান সরকারের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে বেশ সখ্যতা গড়ে প্রশাসনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। পদোন্নতি পেয়ে তারা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়ও চাকরি করছেন বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে তাদের মতাদর্শের ছেলেরা বিসিএসে চাকরি পেয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে সেটি হয়নি। এখন শুধু গোয়েন্দাদের রিপোর্টের ভিত্তি করে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না, স্থানীয় পর্যায়ে ডিসি ও ইউএনওদের মাধ্যমে প্রতিবেদন আনা হচ্ছে। অতীতের মতো নিয়োগে দলীয় বিেেবচনায় নয়, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়।
২০০১ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) নিয়োগের সুপারিশ ছিল মাত্র সাড়ে ১৬ হাজার সেখানে গত ১০ বছরে নিয়োগ পেয়েছেন সাড়ে ৬১ হাজার চাকরি প্রার্থী। আগে যেখানে একটি ক্যাডার নিয়োগের ফল প্রস্তুত করতে সময় লাগত তিন থেকে চার মাস, এখন সেখানে সময় লাগছে ১২ থেকে ১৪ দিন। এ পরিসংখ্যানই বলে দেয় দেশের সরকারি চাকরির পরীক্ষা ও সুপারিশকারী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পিএসসির পরিবর্তনের চিত্র। তবে কেবল সংখ্যাগত পরিবর্তনই নয়, দ্রুত ফল প্রকাশের সফটওয়্যার প্রস্তুত ও ব্যবহার পাল্টে দিয়েছে পিএসসিকে।
করোনা সঙ্কট সামলাতে সফটওয়্যার ব্যবহারেই মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় সাত হাজার ডাক্তার ও নার্স নিয়োগের মতো অসম্ভবকে সম্ভব করা গেছে। এছাড়া বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগে কোটার যুগ শেষ হলো। গত ১ জুলাই ৩৮তম বিসিএসের চ‚ড়ান্ত ফল প্রকাশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে দুই হাজার ২০৪ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। গত ৪৮ বছর ধরে চলা কোটা পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে এটাই শেষ বিসিএসের ফলাফল।
নিয়োগের নথি পর্যালোচনায় জানা গেছে, ২০০১ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ক্যাডার এবং নন-ক্যাডার মিলিয়ে কমিশনের সুপারিশ ছিল ১৬ হাজার ৯৮৭ প্রার্থী। এর মধ্যে ক্যাডার ১২ হাজার ৭৯৪ জন এবং নন-ক্যাডার ৪ হাজার ১৯৪ জন।
পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক ইনকিলাবকে বলেন, ২০১৮ সালে সাধারণ ছেলেমেয়েদের ব্যাপক আন্দোলনের মুখে সরকার কোটা প্রথা বিলুপ্ত করে। এই বিলুপ্তির ফলে এখন থেকে পরবর্তী আর কোন বিসিএসে কোটা পদ্ধতি থাকছে না। এমনকি কোটা পদ্ধতি বিলোপের মাসখানেক আগে ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি হলেও ওই বিসিএসেও কোটা পদ্ধতি থাকছে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন