সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করলে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদন্ডের বিধান রেখে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন আইন, ২০২১’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এদিকে জাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনায় আইন করছে হচ্ছে।এজন্য জাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২১ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ আইনের অনুমোদন দেওয়া হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষ থেকে মন্ত্রী-সচিবেরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকলে সর্বোচ্চ ১০ বছর এবং সর্বনিম্ন তিন বছর কারাদন্ড বা অর্থদন্ডের কথা বলা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা ১৯৭৭ সালের অর্ডিন্যান্স ছিল। হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সেটা নিয়ে আসা হয়েছে। এটা রুল বেইজড আইন। ম্যাক্সিমাম জিনিসগুলো রুল দিয়ে করে নেয়া হবে। আইনে জেনারেল একটা প্রভিশন লে-ডাউন করে দেয়া হয়েছে। খসড়া আইনে ১৫টি ধারা আছে। যেহেতু রুল বেইজড আইন, সব প্রসিডিউরগুলো পরবর্তীতে রুলের মাধ্যমে করে দেয়া হবে। খসড়ায় কমিশন গঠন করার কথা বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, সেই বিষয়টির ব্যাখ্যাও দেয়া হয়েছে। কমিশনে কমপক্ষে ছয় জন সদস্য থাকবেন, তবে সদস্য কোনভাবেই ১৫ জনের বেশি হবে না। একটা আউট লাইন করে দেয়া হয়েছে। বাকি ফরমেশনটা রুল দিয়ে করে দেয়া হবে। তাদের দায়িত্ব হলো সংবিধানের ১৪০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন রিক্রুমেন্ট ও অন্যান্য অপিনিয়মের বিষয়ে তারা দায়িত্ব পালন করবে। কমিশনকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহায়তা প্রদান করতে হবে। এমন একটা ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। পরীক্ষা পদ্ধতি কীভাবে হবে সেটার একটা আউট লাইন করে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে রুল দিয়ে ব্যাখ্যা দেয়া হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, খসড়া আইনে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা সংক্রান্ত কিছু অপরাধের কথা বলা হয়েছে। কেউ যদি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করে তাহলে সর্বোচ্চ দুই বছর, সর্বনিম্ন এক বছরের কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ড হতে পারে। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকলে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদন্ডের কথা বলা হয়েছে। সর্বনিম্ন তিন বছর তারাদন্ড বা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে। বেশ শক্ত একটা স্ট্যান্ড নেয়া হয়েছে। জমিনানাটা সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। উত্তরপত্রের জালিয়াতির সঙ্গে যারা জড়িত থাকবেন তারা সর্বোচ্চ দুই বছর ও সর্বনিম্ন এক বছরের কারাদন্ড এবং অর্থদন্ড বা উভয়দন্ড হতে পারে।
তিনি বলেন, কোন পরীক্ষার্থী যদি অসুদাপয় অবলম্বন করেন বা অন্য কোন ব্যক্তিকে অসুদাপয়ে সহযোগিতা করে তাহলে সর্বোচ্চ দুই বছর ও সর্বনিম্ন এক বছরের কারাদন্ড এবং অর্থদন্ড বা উভয়দন্ড হবে। পরীক্ষা সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে খসড়া আইনে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পরীক্ষা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি যদি কোন অপরাধ করে তাহলে দুই বছরের কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ড হতে পারে। মোবাইল কোর্টের মধ্যেও এটা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেও পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে যারা যুক্ত থাকবে তাদের বিচারের আওতায় এনে সাথে সাথে শাস্তি দেয়া যেতে পারে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনায় আইন করছে সরকার। এজন্য ‘জাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২১’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। তিনি বলেন, জাকাত তহবিল গঠন করা হবে। তহবিলের অর্থ সরকারিভাবে সংগৃহীত হবে। প্রবাসী বাংলাদেশি, বিদেশি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত অর্থ যেকোনো তফসিলি ব্যাংকের জাকাত ফান্ডে জমা দিয়ে জাকাত আদায় করতে পারবেন। আর একটি বোর্ড থাকবে। ধর্মমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী এটার চেয়ারম্যান থাকবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সুরা তাওবায় প্রিসাইসলি সাতটি ক্যাটাগরি করে দেওয়া হয়েছে, প্রত্যেক ব্যক্তি যে জাকাতযোগ্য সেই সাত ক্যাটাগরির যেকোনো একজনকে জাকাত দিতে পারবেন। বিভিন্ন ইসলামিক দেশগুলোতে বোর্ড আছে। অনেকেরই হয়তো ব্যক্তিগতভাবে দেওয়ার সুযোগ থাকে না, সে হয়তো যাকাত ফান্ডে দিয়ে দিলো। তখন জাকাত ফান্ড তার পক্ষে জাকাত আদায় করে দেবে। তিনি বলেন, এটা তো কোরআনেও পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছে যে, তোমার যখন সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা ওই পরিমাণ টাকা যদি এক বছর থাকে তাহলে আড়াই শতাংশ জাকাত দিতে হবে। সেটা যদি ব্যক্তিগতভাবে দিলো তো দিলো, না হলে সরকারে ফান্ডে দিলে সেটাও দিতে পারবে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আপনি যখন হজে যাবেন আপনি কিন্তু কুরবানি করতে যাবেন না। আপনি টাকা জমা দিয়ে দেবেন ব্যাংক একটা টাইম দিয়ে দেবে ১০ তারিখ এতটার সময় আপনার কুরবানি হয়ে যাবে। সেজন্য এ সিস্টেমটা পুরো পৃথিবীতেই আছে।
তিনি বলেন, আইনটিতে ১৪টি ধারা রয়েছে। সরকারি ভাবে জাকাত সংগ্রহ ও বিতরণ করা হবে এবং আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারিভাবে যাকাত দানে উদ্বুদ্ধকরণ। জাকাত সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন, জাকাত দানে আগ্রহী ব্যক্তিদের যাকাতযোগ্য সম্পদের বিষয় খসড়া আইনে রয়েছে। জাকাত বোর্ডে সদস্য থাকবে ১০ জন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করে দেবে ইসলামি ফাউন্ডেশন বা ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে। কালেকশন ও ডিস্ট্রিবিউশনটা তারা করবেন। কাকে কাকে কিভাবে দেবে এটা তারা ঠিক করবে। তাদের একটি অ্যাকাউন্ট থাকবে, সেখান থেকে তারা সংগ্রহ করবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন