খুলনার শিল্পাঞ্চল যেখানে প্রতিদিন পাটকলের হুইসেল বাজতো। আর দিনরাত লেগেই থাকতো শ্রমিকদের হইহুল্লোড়। ব্যস্ত সময় পার করতেন পাটকলের কর্মকর্তা-কর্মচারিরাও। কিন্তু সেই কোলাহল এখন আর নেই। শিল্পাঞ্চলজুড়ে এখন শুধুই সুনসান নীরবতা। সরকারি আদেশে পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় থমকে গেছে সব কার্যক্রম। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে- এ যেন এক অচেনা শিল্পাঞ্চল।
ক্রমাগত লোকসানের কারণে গত ২৫ জুন খুলনা অঞ্চলের ৯টিসহ দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত ২ জুন বৃহস্পতিবার পাটকল বন্ধসহ গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের আওতায় শ্রমিকদের অবসায়নের প্রজ্ঞাপন মিলে মিলে নোটিশ বোর্ডে টানিয়ে দেয়া হয়। হঠাৎ মিল বন্ধের খবর শুনে অন্য এলাকার শ্রমিকদের মতো খুলনা অঞ্চলের পাটকল শ্রমিকেরাও হতবাক হয়ে পড়েন। চাকরি হারিয়ে এখন তারা চোখের সামনে শুধুই অন্ধকার দেখছেন।
সরেজমিনে গতকাল সোমবার নগরীর খালিশপুর শিল্পাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোতে শ্রমিকদের পদচারণা নেই। থেমে গেছে কোলাহল। মিলগেটগুলোর সামনে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিকেরা। তাদের চোখেমুখে চাকরি হারানোর বেদনা। সদ্য অবসরে যাওয়া শ্রমিকেরা এখন তাদের পাওনা টাকা পাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছেন।
মিল বন্ধের ঘোষণায় শ্রমিক পরিবারগুলো কঠিন অবস্থায় পড়েছে বলে জানান, ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিক মো. তোফাজ্জেল হোসেন।
তিনি ইনকিলাবকে বলেন, চাকরি হারিয়ে কেউ খুশি হতে পারে না। আমাদের মজুরি অনিয়মিত থাকলেও শিল্পাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা বাকিতে পণ্যসামগ্রী দিতেন। তবে চাকরি না থাকায় এখন ওই সব ব্যবসায়ীরাও উদারতাকে সংকুচিত করে নিয়েছেন। আমরা আনন্দ সেদিনই করবো, যেদিন সরকার তার ঘোষণা অনুযায়ী শ্রমিকদের বকেয়া সম্পূর্ণ পরিশোধ ও যোগ্য শ্রমিকদের নতুনভাবে নিয়োগ দিয়ে পাটকলগুলো ফের চালু করবে।
এদিকে পাটকল বন্ধ হলেও শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। তিনি বলেন, এবার পাটকল শ্রমিকরা এককালীন পাওনা পাওয়ার নিশ্চয়তা পেয়েছেন। পাটকল বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকদের সমুদয় পাওনার অর্ধেক নগদে ও বাকি অর্ধেক তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে দেয়া হবে।
এদিকে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) সূত্র জানায়, ২০১৩ ও ২০১৪ সাল থেকে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকল থেকে প্রায় ১ হাজার শ্রমিক অবসর গ্রহণ করেছেন। অবসর গ্রহণের পর দীর্ঘ ছয়-সাত বছর পেরিয়ে গেলেও তারা টাকা পাননি। ইতোমধ্যে রোগশোকে ভুগে অনেকে মারাও গেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেএমসির একজন কর্মকর্তা বলেন, আমলা নির্ভর না হয়ে বিজেএমসির দক্ষ জনবল দিয়ে পাটকল পরিচালনা, দৈনিক ভিত্তিতে দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ ও অযাচিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ হলে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোকে আবারও লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা সম্ভব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন