উস কে তুফাইল হজ্ব ভি খোদা নে করওয়া দিয়ে
আসলে মুরাদ হাজিরী উস পাক দর কি হে।
নিশ্চয় যাদের অন্তরে মদীনায় যাওয়ার আগ্রহ থাকে, তাদের প্রতি হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দয়া অবশ্যই হয় এবং সামর্থ্য না থাকা স্বত্বেও তাদের আশ্চার্য জনক ভাবে হাজিরীর সৌভাগ্য নসীব হয়ে যায়, বরং যদি তা এভাবে বলা হয়, তবে ভ‚ল হবে না যে, মক্কা মুকাররমা ও মদীনা মুনাওয়ারা হলো ঐ পবিত্র স্থান যেখানে লোকেরা নিজে থেকে যায় না বরং ডাকা হয়। আসুন! এবার মদীনার প্রেম অন্তরে সৃষ্টি করার জন্য মদীনা মুনাওয়ারা এবং পবিত্র রওযায় উপস্থিতির ফযীলত সম্বলিত প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তিনটি হাদীস শরীফ শ্রবণ করি: ১. মদীনা মুনাওয়ারা লোকদেরকে এমনভাবে পাক ও পবিত্র করে দেয়, যেমন চুল্লি লোহার মরিচা পরিষ্কার করে দেয়। (সহিহ মুসলিম, ৭১৭ পৃ:, হাদীস :১৩৮২) ২. যে ব্যক্তি আমার (কবরের) যিয়ারতের জন্য এলো এবং আমার যিয়ারত করা ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য না থাকে, তবে আমার দায়িত্ব হলো যে, কিয়ামতের দিন তাকে শাফায়াত করা। ( মু’জামু কবীর , ১২/২২৫, হাদীস :১৩১৪৯) ৩. যে আমার জাহেরী (প্রকাশ্য) ওফাতের পর হজ্ব করলো, অতঃপর আমার কবর মুবারক যিয়ারত করলো তবে যেনো সে আমার জীবদ্দশায় আমার যিয়ারত করলো। (দারে কুতনী, ২/৩৫১, হাদীস :২৬৬৭)
শায়খ শুয়াইব হারিফিশ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন: হুযুরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র রওযা মুবারকের যিয়ারতকারীর জন্য দশটি কারামাত তথা সম্মান রয়েছে: (১) তার উচ্চ মর্যাদা হবে। (২) উদ্দেশ্য অর্জনে সফল হবে। (৩) তার চাহিদা পূরণ হবে। (৪) তার দান করার তৌফিক অর্জিত হবে। (৫) সে ধ্বংস ও নিংস্ব হওয়া থেকে নিরাপদ থাকবে। (৬) দোষ-ত্রু টি থেকে পবিত্র হবে। (৭) তার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। (৮) দূর্ঘটনা থেকে সে নিরাপদ থাকবে। (৯) সে আখিরাতে উত্তম প্রতিদান পাবে এবং (১০) মহান আল্লাহ আয়ালার অনুগ্রহ পাবে। (আর রওযুল ফায়েক, ৩০৭-৩০৮ পৃ)
ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ আহমদ রযা খাঁন রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর দ্বিতীয় হজ্বের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পর খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েন, কিন্তু তিনি বললেন: “রোগ বৃদ্ধি হওয়ার চেয়ে আমার রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হওয়ার চিন্তাটায় বেশি হচ্ছে।” যখন জ্বরের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে লাগলো ঐ অবস্থায় আমি মদীনায় উপস্থিত হওয়ার ইচ্ছা পোষাণ করলাম। ওলামায়ে কিরামগণ বাঁধা দিতে লাগলেন, প্রথমে তারা এটা বললেন যে, আপনার অবস্থা তো ভাল না এবং মদীনার সফর হলো দীর্ঘ। আমি আরয করলাম: “যদি সত্যি জিজ্ঞাসা করেন তবে হাজিরীর মূল উদ্দেশ্য তো তায়্যিবার যিয়ারতই, দুই বারই এই নিয়্যতেই ঘর থেকে বের হয়েছি, (মাআযাল্লাহ) যদি এটি না হয় তবে হজ্বের স্বাদই তো নাই।” যখন ইমাম আলা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র অবস্থার প্রতিকুলতার কারণে ওলামায়ে কিরামের বাঁধা বৃদ্ধি পেতে লাগলো তখন তিনি এই হাদীস শরীফ পাঠ করলেন: যে ব্যক্তি হজ্ব করলো, অথচ আমার যিয়ারত করলো না, সে আমার প্রতি নিষ্ঠুরতা করলো।” (কাশফুল খিফা, ২/২১৮, হাদীস :২৪৫৮) ওলামায়ে কিরাম বললেন: আপনি তো একবার যিয়ারত করেছেন। তখন তিনি বললেন: “আমার দৃষ্টিতে হাদীস শরীফটির মর্ম এই নয় যে, জীবনে যতবারই হজ্ব করবে, যিয়ারত কেবল একবারই যথেষ্ট, বরং প্রতি হজ্বেই যিয়ারত করা আবশ্যক। এবার আপনারা দোয়া করুন যে, আমি যেন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হতে পারি। রওযায়ে আকদাসে এক নজর পড়ে যাক, যদিওবা তখনই নিঃশ্বাস বেরিয়ে যায়।” ( আশিকানে রাসূলের ১৩০ টি ঘটনা, ১১৩ পৃ:)
আমাদের মদীনার স্মরণে সর্বদা ছটফট করে নিজে ডাক পাওয়ার অপেক্ষায় থাকা এবং অধিকহারে সালাত ও সালাম পাঠ করার পাশাপাশি প্রতি বছর হজ্বের মৌসুমে হজ্ব সম্পাদনকারী ও মদীনার যিয়ারতকারীদের মাধ্যমে বিশেষভাবে নিজের সালাম প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে পৌঁছানো উচিৎ। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: যখন কেউ আমার প্রতি সালাম প্রেরণ করে, তখন আল্লাহ তায়ালা আমার রূহকে আমার মাঝে ফিরিয়ে দেন, এমনকি আমি তার সালামের উত্তর প্রদান করি। (সুনানে আবু দাউদ, ২/৩১৫, হাদীস :২০৪১) হাকীমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খান রহমাতুল্লাহি আলাইহি উপরোক্ত হাদীসে শরীফের ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে রূহ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে মনোযোগ, ঐ প্রাণ নয় যা দ্বারা জীবন প্রতিষ্ঠিত, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো স্থায়ীভাবে (সর্বদা প্রাণ সহকারে) জীবিত। এই হাদীসের উদ্দেশ্য এটাও নয় যে, আমি এমনিতে তো নিষ্প্রাণ থাকি, কারো দরূদ পাঠ করাতে জীবিত হয়ে উত্তর প্রদান করি, অন্যথায় সর্বদা প্রতিটি মুহুর্তে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি লাখো লাখ দরূদ শরীফ পাঠ করা হচ্ছে, এতে আবশ্যক যে, সর্বদা লাখোবার নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রূহ বের ও প্রবেশ হতে থাকবে। মনে রাখবেন, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিটি মুহুর্তে অসংখ্য দরূদ পাঠকারীর দিকে সমান মনোযোগ রাখেন, সবার সালামের উত্তর প্রদান করেন, যেমন সূর্য একই সময়ে পুরো দেশ ব্যাপী কিংবা ভুখন্ডে কিরণ দেয়, তেমনিভাবে নবুয়তের আকাশের সূর্যও একই সময়ে সবার দরূদ-সালাম শুনেন এবং এর উত্তরও প্রদান করেন, কিন্তু এতে হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন কষ্টও অনুভ‚ত হয়না, কেনই বা হবে, তিনি তো আল্লাহ তায়ালার পবিত্র স্বত্বার প্রকাশস্থল, যেমন রব তায়ালা একই সময়ে সবার দোয়া শুনেন তেমনিভাবেই তাঁর মাহবুব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁরই প্রদত্ত ক্ষমতাবলে একই সময়ে অসংখ্য আশিকের দরূদ ও সালাম শুনেন। (মিরাতুল মানাজিহ, ২/১০১) (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন