বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ান

| প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

করোনার পাশাপাশি একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে দেশ। গত এপ্রিলে আঘাত হানে ভয়ংকর ঘূর্ণীঝড় আমফান। আগাম সর্ততামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং উপকূলীয় অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষকে সময়মতো আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ায় প্রাণহানি কম হলেও ফসলসহ বেশকিছু বাঁধ, বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে উপকূলীয় এলাকার মানুষ। সেসব অবকাঠামোর সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ শেষ না হতেই এখন দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। ইতিমধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জনপদ ও ফসলের মাঠ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। দেশের প্রায় সব নদনদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং তা বেড়ে চলেছে। রাজধানীসহ এ অঞ্চলে বড় বন্যার পূর্বাভাস আগেই দেয়া হয়েছিল। গত দুইদিনের বৃষ্টিতে ঢাকার অধিকাংশ নি¤œ এলাকা এবং শহরের অনেক রাস্তা কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ার আগেই উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানিতে ঢাকাসহ দেশের মধ্যাঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একদিকে করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া অর্থনীতি, অন্যদিকে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের কোটি মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। এহেন বাস্তবতায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্যা মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সকলকে সর্বাত্মক অংশগ্রহণ এবং প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য বিভাগ, ত্রাণ ও পুর্নবাসনের দায়িত্ব নিয়োজিত সব কর্মকর্তা কর্মচারিসহ স্থানীয় এমপি, মন্ত্রী এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী আহবান জানিয়েছেন।

করোনায় দেশের রফতানি বাণিজ্য, বৈদেশিক কর্মসংস্থানসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় চরম মন্দাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনীতিকে চাঙা এবং উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত রাখতে সরকার বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। এর মধ্যেই ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ভয়াবহ বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে। এবারের বন্যা ১৯৯৮ সালের বন্যার চেয়েও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। একের পর এক এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি সরকারিদলসহ সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সামর্থ্যবানদের বন্যাদুর্গত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসা উচিৎ। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের সময় প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকায় অনেক বিত্তশালী প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছে। জনসেবার সুযোগ চেয়ে নির্বাচনে কোটি কোটি টাকাও তারা খরচ করেছে। এসব নির্বাচনে বিজয়ী এবং প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের এখন বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। বিশেষ করে সরকারি দলের জনপ্রতিনিধিদের বাধ্যতামূলকভাবে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের তরফ থেকে নির্দেশ দিতে হবে। তারা যাতে বন্যার্তদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান, এ বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করছেন কিনা, তা মনিটরিং করতে হবে। জনপ্রতিনিধিদেরও উচিৎ, সরকারি সহায়তার আশায় বসে না থেকে তাদের অর্থনৈতিক সামর্থ্য দিয়ে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো। এসব জনপ্রতিনিধিরা সামর্থ্য অনুসারে নিজেদের তহবিল থেকে বন্যার্তদের ত্রাণ সহায়তায় এগিয়ে এলে সরকার ও জনগণের পক্ষে এই দুর্যোগ মোকাবেলা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। বৃহৎ বিরোধীদল বিএনপিসহ সব দলের নেতাকর্মী এবং দেশের সামর্থ্যবানদেরও বন্যার্তদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে। উল্লেখ্য, দুযোর্গ মোকাবেলায় বাংলাদেশের দীর্ঘ ঐতিহ্য, দক্ষতা ও সক্ষমতা সম্পর্কে বর্হিবিশ্বে সুখ্যাতি রয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল, করোনা মহামারীর কারণে তা ক্ষতির সম্মুখীন না হলে বন্যা মোকাবেলা কঠিন কিছু ছিল না। দুঃখের বিষয়, এই করোনার সময়েও এক শ্রেণীর মানুষ দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি ত্রাণ ও প্রণোদনার অর্থ লুটপাট করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারির কারণে তা কমেছে। স্বাস্থ্য খাতের কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির বিষয়টি এখন বহুল আলোচিত। অর্থের এই লুটপাট ও অপচয় না হলে বন্যা মোকাবেলায় তা ব্যয় করা যেত।

বন্যায় ইতোমধ্যে ব্যাপক অঞ্চল প্লাবিত হয়ে বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। অনেক মানুষ পানিতে ভাসছে। অনেকে আশ্রয় কেন্দ্র ও বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার্তদের যাতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে না হয়, এজন্য প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যকর্মী ও স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষতির আসল চিত্র ফুটে উঠে। ফসলাদির ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি নদীভাঙন তীব্র হয়ে উঠে। এদিকটি বিবেচনা করে এসব ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় অবিলম্বে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করতে হবে। বন্যায় যেসব মানুষের ফসল তলিয়ে গেছে এবং যারা ফলাতে পারেনি, তারা যাতে তাদের কার্যক্রম দ্রুত শুরু করতে পারে, এজন্য ইমিডিয়েট সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে। তারা যাতে পুনরায় ফসল উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করতে পারে, এ ব্যাপারে আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। নদীভাঙ্গণ রোধে স্থায়ী কার্যকর উদ্যোগগুলোর প্রতি নজর দিতে হবে। বিশেষত উজানের ঢল ও বন্যার পানি সহজে নেমে যাওয়ার জন্য নদ-নদী ও খালখনন কর্মসূচি জোরদার করতে হবে। বন্যার পর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ, বেড়িবাঁধ, সড়ক ও খাল খনন কর্মসূচি গ্রহণের মধ্য দিয়ে কর্মহীন মানুষদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্যার্তদের জন্য বরাদ্দকৃত ত্রান ও পুর্নবাসন সহায়তা যেন কোনো জনপ্রতিনিধি বা দলীয় নেতাকর্মীদের পকেটে চলে না যায়, তা কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে। সেই সাথে চলমান করোনা ভাইরাস মহামারীর কথা ভুলে গেলে চলবে না। করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সরকারের পাশাপাশি দেশের সব মানুষকে সামর্থ্য অনুসারে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো।

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন