শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সরকার মিথ্যা চেঁচামেচির মডেল- রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০২০, ১২:৩৯ পিএম

সরকারের মন্ত্রী-নেতারা করোনা মোকাবিলার মতো বন্যা মোকাবিলায় ‘কথা মালার’ মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছেন মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার মিথ্যা চেঁচামেচির মডেল। সরকারি ত্রাণ তৎপরতা এখনো অনেকটাই প্রচারসর্বস্ব ফাঁপা আওয়াজ। তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনার সঙ্গে ভয়াবহ বন্যার কারণে দিশেহারা দেশের ৩১টি জেলার অর্ধকোটির বেশী মানুষ। ঘরে ঘরে নিরন্ন অভুক্ত মানুষের হাহাকার। বানভাসি মানুষের ঘরে নেই ঈদের আনন্দ। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে বানভাসীদের ঈদ। করোনার কষাঘাত আর সর্বগ্রাসী বন্যার করাল গ্রাসে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে মানুষকে। বানভাসিদের ঈদের আনন্দ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। করোনা এবং বন্যায় বিপর্যস্ত মানুষকে বাঁচাতে সরকারের কার্যকর কোন উদ্যোগ নেই। ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ বানভাসি মানুষের কাছে এখনও কোন ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেনি। শাসকগোষ্ঠী একেবারেই উদাসীন।

শুক্রবার (৩১ জুলাই) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

জনগণের এই চরম দুর্দিনেও সরকার চরমভাবে ব্যর্থ মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, তাদের সফলতা শুধু মিথ্যাচারে। করোনার ভয়াবহ থাবা আর বন্যায় পানিবন্দী দুর্গত অসহায় মানুষের হাহাকার ও কান্না শোনার কেউ নেই। আজ বানের পানিতে একাকার লাখো মানুষের চোখের পানি। করোনা ও বন্যায় মৃত্যু আর নিরন্ন মানুষের মিছিলে সরকারের তথাকথিত উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়েছে। অধিকাংশেরই ঘরে খাবার নেই, হাতে নগদ টাকা নেই, কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই, অনেকেই আশ্রয়হীন হয়ে স্থানীয় স্কুল-কলেজে, পানির ভেতর নাক উঁচিয়ে থাকা রাস্তার ওপর আশ্রয় নিয়েছে। হাঁস-মুরগি আর গবাদি পশু নিয়ে তারা পড়েছেন মহাবিপদে। এবারকার বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে কৃষকের ফসলহানি, সহায়সম্পত্তি সমূহ বিপদের ঝুঁকি ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুর্গত মানুষ খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, শুকনা খাবার ও জ্বালানির সংকটে ভুগছে।

তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, জাতিসংঘ ও উন্নয়ন সংস্থাগুলো চলমান বন্যার যে চাহিদা সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করেছে তাতে দেখা গেছে, বন্যাকবলিত ৮০ শতাংশ মানুষের নিয়মিত খাবার পাচ্ছে না। খাদ্যদ্রব্য থাকলেও ৯৩ শতাংশ মানুষ তা রান্না করতে গিয়ে মহাসংকটের আবর্তে পড়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, বন্যায় ৩১ জেলার ৫০ লাখ ৪৪ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দী হয়েছে ১০ লাখ ৪০ হাজার পরিবার। সরকারের তথ্যবিবরণীতে দাবী করা হয়েছে, বন্যাকবলিত ৩১টি জেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে মানবিক সহায়তা হিসেবে এ পর্যন্ত সাত হাজার ১৪৭ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তার কোন প্রমাণ মিলছে না। খবরের কাগজে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে- বগুড়ার সারিয়াকান্দিসহ উত্তরাঞ্চলে বন্যা কবলিত মানুষের পাতে ভাতের বদলে শুধু পাট শাক। আক্ষরিক অর্থেই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার অবিকল চিত্র আজ বন্যাকবলিত প্রতিটি জনপদেই দেখা যাচ্ছে-‘জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসে না নিঁদ মুমূর্ষু সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ?

 

বিএনপির এই নেতা বলেন, ৩১টি জেলা ডুবিয়ে ১৬ বছর পর বন্যার পানি প্রবেশ করছে রাজধানীতে। ডুবে গেছে সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বেরাইদ, সাঁতারকুল, গোড়ান, বনশ্রী, বাসাবো ও আফতাবনগরের নিচু এলাকা। এ ছাড়া ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও ডিএনডি বাঁধ এলাকায়ও বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করেছে। রাজধানীর আশপাশের বালু, তুরাগ ও টঙ্গী খালের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ১০ দিন ধরে পানিবন্দি ঢাকার পূর্বাঞ্চলের মানুষ। পানি বাড়ছে প্রতিদিনই, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্ভোগ। বালু নদের পানি উপচে ঢুকে পড়েছে উত্তর ও দক্ষিণ সিটির বেশ কয়েকটি এলাকায়। বেরাইদের ফকিরখালীর প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ঢুকেছে বানের পানি। সুপেয় পানির সংকটে এই অঞ্চলের অসংখ্য পরিবার। লুটপাট আর দুর্নীতির কারনে ডেমরা থেকে টঙ্গী বেড়িবাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে মানুষের কষ্ট লাঘব হচ্ছে না। বালু নদের পাড় দিয়ে বন্যা প্রতিরোধের একটা বাঁধ হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এই সরকার প্রতিটি সেক্টরকে আকন্ঠ দুর্নীতিতে ডুবিয়ে দিয়েছে বন্যার পানির মতো।

রিজভী বলেন, গত ২১ জুলাই জাতিসংঘের কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্সের (ওসিএইচএ) পক্ষ থেকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে এ বছর চলমান বন্যা ১৯৮৮ সালের চেয়েও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। কিন্তু এই নিশুতি সরকার তা আজো কানে তোলেনি। তাদের কোন ভ্রæক্ষপও নেই। বিএনপির পক্ষ থেকে মনে করি এই ভয়াবহ অবস্থা মোকাবেলা করা আওয়ামীলীগের ভঙ্গুগুর আর দুর্নীতিবাজ প্রশাসন দিয়ে সম্ভব না। এই জন্য প্রয়োজনে জাতীয়ভাবে দলীয় স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা। একগুয়েমী বাদ দিয়ে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিন। বন্যা দুর্গতদের জন্য বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তা প্রদানের দাবী করছি। একই সাথে স্কুল-কলেজে-বাঁধের উপর আশ্রয় নেয়া বানভাসি পরিবারগুলোর জন্য লংগরখানা খোলার দাবি করছি। এছাড়াও বন্যাকবলিত এলাকায় কৃষকদের সব ধরণের কৃষিঋণ, এনজিও ঋণ মওকুফ করা অথবা সুবিধাজনক সময়ে পরিশোধ করার সুযোগ দেওয়া, জরুরী ভিত্তিতে বন্যাকবলিত কৃষকদের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করে নগদ অর্থ প্রদান, বিনামূল্যে বীজ সবরাহ ও বীজতলা তৈরিতে ট্রে সববরাহ, সরকারিভাবে খামারিদের গবাদি পশুর জন্য আলাদা আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন ও গো-খাদ্যের সঙ্কট নিরসন, বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় এলাভিত্তিক ত্রাণ সামগ্রী বন্টনের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।

সরকার গত বছরের মতোই আওয়ামীলীগের চামড়া সিন্ডিকেটের স্বার্থ রক্ষায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, নানা অজুহাতে এ বছর চামড়ার দাম কমানো হয়েছে গত বছরের তুলনায় প্রায় ২৯ শতাংম কম। এবছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম হবে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দর ২৮ থেকে ৩২ টাকা। গত বছর ঢাকায় এই দাম ছিল ৪৫-৫০ টাকা। আর ঢাকার বাইরে গত বছর গরুর চামড়ার দাম ছিল ৩৫-৪০ টাকা, যা এবারে প্রায় ২০ শতাংশ কমানো হয়েছে। ছাগলের চামড়ার দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩-১৫ টাকা। গত বছর এই দাম ছিল ১৮ থেকে ২০ টাকা। গত বছরের তুলনায় ছাগলের চামড়ার দাম কমেছে প্রায় ২৭%।

তিনি বলেন, গত বছর কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য দাম না পেয়ে নীরব প্রতিবাদ হিসাবে সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি না করে লক্ষাধিক পিস চামড়া ধ্বংস করেছিলেন অনেকে। যার বেশির ভাগ মাটিচাপা কিংবা নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। চামড়ার মূল্য না থাকায় স্মরণকালের ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়ে দেশের চামড়ার বাজার। দামে ধ্বস নামায় প্রায় হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়। পাশাপাশি এই টাকা থেকে বঞ্চিত হয় গরিব ও এতিম জনগোষ্ঠী। করোনার কারণে চামড়া নিয়ে এবারো সেই সঙ্কট আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। লুটপাটের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোতে চরম অর্থ সঙ্কট চলছে। এ কারণে এবারও ট্যানারি মালিকরা ব্যাংক থেকে কোন টাকা পাবে কিনা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যেভাবে পাট শিল্প ধ্বংস করা হয়েছে, ঠিক সেই পথেই ধ্বংস করা হচ্ছে বাংলাদেশের ট্যানারি শিল্প। চামড়া শিল্প ধ্বংস হলে গরীব, দুঃখী ও এতিমদের হক নষ্ট হয়। সরকারের ভেতরের একটি মহল সিন্ডিকেট করে কওমী মাদরাসাকে ধ্বংস করতে এবং চামড়া শিল্পকে ধ্বংস করে নিজেরা ফায়দা লুটতে চায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন