শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

আত্মার ঊর্ধ্বগতি আর অধঃগতি

নাজীর আহ্মদ জীবন | প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০২০, ১২:০২ এএম

আল্লাহ বলেন; “হে রাসূল! এরা আপনার কাছে জানতে চায় “আত্মা কি জিনিষ, আপনি বলে দিন ‘আত্মা’ হচ্ছে সম্পূর্ণরূপে আমার আওতাধীন একটা বিষয়। এ সম্পর্কে (সৃষ্টি রহস্য) তোদের খুব কম জ্ঞান দেয়া হয়েছে।” (সূরা বনী ইসরাইল) বারো শরীফের মহান ইমাম হযরত শাহ্ সূফী মীর মাস্উদ হেলাল (রঃ) বলেছিলেন (১৯-১২-৮১ তে) ঃ আত্মার কোন আকার নেই, রং নেই, গন্ধ নেই, আমাদের কর্মের ছাপ আত্মার উপর পড়ে। ভাল কাজ করলে তার প্রতিফল আত্মাতে হয়, খারাপ কাজ করলে তার প্রতিফলও আত্মাতে হয়। আত্মার উর্দ্ধগতি, পরমাত্মায় মিলন। কারণ; আত্মা, পরমাত্মা হতে আগত। তাই ঐ পরমাত্মার সাথে যোগাযোগ করতে পারলে মানবাত্মা অসাধারণ শক্তি অর্জন করে। তখনই হয়-“মোমেনের অন্তকরণ আল্লাহর আরশ। মানব জনম তখন হয় স্বার্থক আর আত্মার মুক্তি। তখন মানুষ হয় “আশরাফুল মাখ্লুকাত।” তার পূর্বে নয়।” মানবীয় জৈব শক্তি (vital force) হচ্ছে আল্লাহর এই রুহ বা আত্মা। যা মানব সত্তা ও তার অন্তঃকরণের মধ্যখানে অবস্থিত। আত্মার অধোঃগতি প্রসঙ্গে ইমাম (রঃ) বলেছিলেন; “একদিন ঈসানবী রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এমন সময় একটা মানুষের মাথার খুলি তার পায়ে লাগলো। তিনি এভাবে মানুষের খুলির করুণ অবস্থা জানতে চাইলেন। রূহানী শক্তির দ্বারা তিনি উক্ত মানুষের আত্মাকে হাজির করে কথা বললেন। ঈসার এই শক্তি বেশী ছিল। যার জন্য তিনি, ‘ঈসা রুহুলুল্লাহ’। আদম শফিউল্লাহ্ থেকে ঈসা হয়ে এটা এসে থাকে। তবে এটা নিয়ন্ত্রণ করেন রাসূল (সাঃ)। রুহুকে উনি জিজ্ঞাসা করেন কতদিন তুমি এ অবস্থায় আছ? বললো, তিন হাজার বছর। রুহু ক্রন্দন করতে থাকলো। বললো; আমি দুনিয়াতে জীবিত কালে বহু পাপ করি। তাই, মৃত্যুর পর আমার রুহু এরূপ আকৃতি ধারণ করে। আল্লাহ বলেছেন; ‘যদি কোন দিন তোর মাথা জামানার নবীর পায়ের সাথে ঠক্কর খাই, তবে সেদিন যদি তিনি দোয়া করেন তো তুই সেদিন বেহেস্তে বা মুক্তি পাবি।’ একথা বলে রুহু ক্রন্দন করতে করতে মুক্তির জন্য দোয়া চাইলো। ঈসা, দোয়া করলেন। ফলে উক্ত রুহু মানুষের আকৃতি পেয়ে ‘আলমে-আরওয়ার’ (আত্মার জগতে) জগতে উঠে গেল। হযরত ইব্রাহীম কেয়ামতের দিনে তার পিতার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় এবং কৃষ্ণবর্ণ দেখে বলবেন; “হে খোদা! দুনিয়াতে তুমি আমার দোয়া কবুল করেছো, এখন কেয়ামতের দিন তুমি আমার অবস্থা শোচনীয় করো না। অর্থাৎ আজকে পিতাকে যে অবস্থায় দেখছি তা দুঃখজনক। তখন আল্লাহ বলবেন; “হে ইব্রাহীম। আমি কাফেরদের প্রতি বেহেশ্ত হারাম করে দিয়েছি।” হাদীসটির সারমর্ম হচ্ছে; ইব্রাহীম (আঃ) তার পিতা আযরের দুরবস্থা দেখে তার জন্য দোয়া করবেন।

সময়টা ১৯৮২ এর কোন একদিন। আমি, আমার মহান বন্ধু বারোশরীফের মহান ইমাম (রঃ) এর কাছে বসে। উনি চেয়ারে বসে রুটি খাচ্ছেন। সামনে একটা কুকুর বসে। অর্ধেক খেয়ে একটা রুটির টুকরা কুকুরটার দিকে ছুড়ে দিয়ে বললেন- ‘নে, খা, মুক্তি পেতে হবে।” সেদিন এর রহস্য বুঝতে পরিনি। পরে মুর্শিদ হতে জ্ঞান পেয়ে বুঝেছিলাম। একবার মনে করে ছিলাম বারো শরীফ দরবারে পশু জবাই করা (গরু-ছাগল) বন্ধ করবো। তখন আমাকে বলা হলো না এটা চলতে থাকবে। এতে এসব পশু আত্মাগুলো (যা মানব আত্মার অধোগতি) ভাল কাজে ব্যবহার হওয়ায় মুক্তি পাবে।” তাই বারো শরীফের ইমাম (রঃ) মানুষের আত্মার মুক্তির জন্য দোয়া করতেন; এবং এখনও করা হয়-“আমরা মানুষ রূপে দুনিয়ায় এসেছি, যেন মানুষ রূপে ফিরে যেতে পারি।” “জামালুল কুলুব কিতাবে” আছে; মোগল আমলে দিল্লীর শাহি জামে মসজিদের ইমাম প্রত্যেক দিন একটা দোকানে গিয়ে পান খেতেন। একদিন দোকানদার দোয়া চাইলে ইমাম দোয়া করলেন-‘ইসকো ইন্সান বানাদো আল্লাহ’ - অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ একে মানুষ বানিয়ে দাও।’ দোকানদার প্রতিদিনই দোয়া চায় ইমাম ও একই দোয়া করেন। একদিন বিনয়ের সঙ্গে দোকানদার প্রশ্ন করল হুজুর, আমি দোয়া চাই আমার ব্যবসার উন্নতি হওয়ার জন্য। কিন্তু আপনি দোয়া করেন, আমাকে মানুষ বানিয়ে দেয়ার জন্য। আমার মা মানুষ, বাবা, মানুষ, আমি মানুষ। তাহলে এ দোয়া কেন? ইমাম মুচকি হেসে তার মাথার পাগড়ি খুলে দোকানদারের মাথায় দিয়ে বললেন; চোখ বন্ধ করে বল কী দেখতে পাও? দোকানদার চিৎকার দিয়ে বললো খোদার কসম, সারাটা দুনিয়া হাতের তালুর মতো দেখতে পাচ্ছি। সমগ্র দুনিয়া পশুতে ভরপুর। অনেক দুরে মাত্র দু’একজন মানুষ দেখা যায়। আবার কারও অর্ধেক শরীর মানুষের বাকিটা পশুর সুরত। এখন আমি বুঝতে পারছি; কেন আপনি দোয়া করেন আমাকে মানুষ বানিয়ে দেয়ার জন্য। এই কোটি কোটি পশুর মধ্যে আমি কী ধরণের পশু, তা দেখতে চাই। ইমাম এবার তার টুপিটা দোকানদারের মাথায় দিলেন। দোকানদার নিজেকে একটা বানর আকৃতিতে দেখতে পায়। ইমাম এবার বলেন, আমি যখন পান খেতে আসি দেখি একটা বানর বসে পান বিক্রি করছে, আমি পান কিনলেই বলে; আমার জন্য দোয়া করুন। তাই, দয়াপরবশ হয়ে দোয়া করি, “খোদা একে মানুষ বানিয়ে দাও।’

লেখক : ধর্মতত্ত্ববিদ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন