উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মানেই নতুন কোনো রূপকথার জন্ম। মঞ্চ যা-ই হোক না কেন, কখন কী ঘটবে বলা যায় না। ছোট দলগুলোর কাছে কুপোকাত হচ্ছে বড়রা কিংবা কেউ ছন্দে থাকলে প্রতিপক্ষকে গোলের আগুনে পুড়িয়ে করছে ছারখার। তাতে প্রতি মৌসুমেই পাল্টে যায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের হিসেবের খাতা। এবার যেমন দেখা গেল নতুন নজির। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে এই প্রথম স্পেন, ইতালি ও ইংল্যান্ড থেকে কোনো দল নেই!
শেষ কোপটা মেরেছে অলিম্পিক লিঁও। গতপরশু রাতে আসরের শেষ কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটিকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে ফরাসি ক্লাবটি। পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের স্তাদিও হোসে আলভালাদেতে শক্তিশালী ম্যান সিটিকে এদিন পাওয়া যায়নি চেনা ছন্দে। প্রথমার্ধে সাদামাটা ফুটবল খেললেও দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের গুছিয়ে নিতে শুরু করেছিল দলটি। কিন্তু ধারার বিপরীতে গোল আদায় করে নিয়ে শেষ হাসি হাসে লিঁও।
লিওঁর হয়ে প্রথম গোলটি এসেছিল ম্যাক্সওয়েল করনেতের পা থেকে। গার্দিওলা দায়িত্ব নেওয়ার পর ইউরোপ সেরার মঞ্চে সিটির বিপক্ষে তিন ম্যাচে এই নিয়ে চার গোল করলেন করনেতে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দলটির বিপক্ষে আর কেবল লিওনেল মেসিই এতগুলো গোল করতে পেরেছেন। শুরুর এই গোল হজম করার পর দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি সময়ে কেভিন ডি ব্রুইনের বদৌলতে সমতায় ফিরেছিল সিটি। কিন্তু তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল বড়সড় চমক। শেষদিকে আট মিনিটের ব্যবধানে দুবার পেপ গার্দিওলার শিষ্যদের জালে বল জড়ালেন বদলি নামা মৌসা দেম্বেলে। আর তাতে ২০০৯-১০ মৌসুমের পর আবারও উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিল ফরাসি ক্লাবটি।
অধিকাংশ সময়ে বল দখলের পাশাপাশি আক্রমণেও প্রাধান্য দেখায় সিটি। তারা মোট ১৮টি শট নেয়, যার সাতটি ছিল লক্ষ্যে। কিন্তু গোলরক্ষক ও ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতা এবং প্রতিপক্ষ লিঁওর জমাট রক্ষণের সমন্বয়ে হারের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়ে তারা। ইংলিশ ফুটবলে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা সিটি এখনও ইউরোপে পায়ের নিচে মাটি খুঁজছে। সম্ভাবনা জাগিয়েও রক্ষণ আর কিপারের ব্যর্থতায় আরও একবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে শূন্য হাতে ফিরল তারা।
এরই সাথে চূড়ান্ত হয়ে গেল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এবারের অসরের সেমিফাইনালের লাইনআপও। শেষ ষোলোয় জুভেন্টাসকে বিদায় করা লিওঁ আগামী বুধবার ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে বায়ার্ন মিউনিখের মুখোমুখি হবে। বার্সেলোনাকে ৮-২ গোলে গুঁড়িয়ে সেমি-ফাইনালে উঠেছে জার্মান চ্যাম্পিয়নরা। তার আগের রাতের প্রথম সেমিফাইনালে আরেক জার্মান দল লাইপজিগের প্রতিপক্ষ ফরাসি চাম্পিয়ন পিএসজি। তাতে একটু নজর দিলেই দেখা যাবে প্রথমবারের মতো এই পর্বে নেই ইংলিশ, স্প্যানিশ কিংবা ইতালির কোনো প্রতিনিধি।
ইংলিশ ধনকুবের ক্লাব সিটির হারের আগে স্পেনের দুই প্রতিনিধি বার্সেলোনা ও অ্যাটলেটিকো হেরেছে জার্মানির দুই ক্লাবের কাছে, বায়ার্ন মিউনিখ ও লাইপজিগ। ইতালি থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে আসা আতালান্তাকে বিদায় করেছে ফরাসি ধনকুবের পিএসজি। সেমিফাইনালে তাই রইল শুধু জার্মানি ও ফ্রান্সের প্রতিনিধি। শিরোপাটা যে এ দুটি দেশের কোনো ক্লাবের ঝুলিতে উঠছে তা নিশ্চিত।
১৯৯২ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শুরুর পর সেমিফাইনালে এই প্রথম স্পেন, ইতালি ও ইংল্যান্ডের কোনো প্রতিনিধি নেই। তবে প্রতিযোগিতাটির আগের সংস্করণ (ইউরোপিয়ান কাপ) বিবেচনায় নিলে তথ্যটা একটু পাল্টাবে।
ইউরোপের সেরা ক্লাব হওয়ার এ টুর্নামেন্টের প্রথম সংস্করণ মাঠে গড়ায় ১৯৫৬ সালে। ১৯৯২ সালের আগ পর্যন্ত এর নাম ছিল ইউরোপিয়ান কাপ। এ সংস্করণ বিবেচনায় নিলে মাত্র একবারই এমন নজির দেখা গেছে। সেটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মাঠে গড়ানোর আগের বছর, ১৯৯১ সালে। সেবার সেমিফাইনালে উঠেছিল বায়ার্ন মিউনিখ, স্পাতার্ক মস্কো, রেডস্টার বেলগ্রেড ও মার্শেই। অর্থাৎ জার্মানি থেকে বায়ার্ন, রাশিয়া থেকে মস্কো, সাবেক যুগোস্লাভিয়া (বর্তমানে সার্বিয়া) থেকে রেডস্টার ও ফ্রান্স থেকে মার্শেই। এবারের আগে শুধু সেবারই শেষ চারে ছিল না ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে শীর্ষ তিন দেশের (ইংল্যান্ড, স্পেন ও ইতালি) কোনো প্রতিনিধি। ২৯ বছর আগের সেই নজিরই এবার মনে করিয়ে দিল জার্মানি ও ফ্রান্সের দুটি করে ক্লাব। তবে ইউরোপিয়ান কাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মিলিয়ে এবারই প্রথম সেমিতে দেখা গেল ফ্রান্সের দুটি দলকে। উয়েফা কাপে একবার এমন নজির দেখা গিয়েছিল। সেটি ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে অক্সেরে ও পিএসজি।
সেমিফাইনালে মুখোমুখি
লাইপজিগ-পিএসজি
১৮ আগস্ট রাত ১টা
অলিম্পিক লিওঁ-বায়ার্ন
১৯ আগস্ট রাত ১টা
*বাংলাদেশ সময়
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন