শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মিলছে না জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাব

ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি পরিসংখ্যানের দুর্বলতা দূর করতে কমিশন গঠনের প্রস্তাব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে প্রাথমিক হিসাব দিয়েছে, তা বাস্তব পরিস্থিতির সাথে মেলে না। রোববার (১৬ আগস্ট) ‘২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাথমিক হিসাব : সিপিডির প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ অভিমত দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থাটি।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, গত অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রভাবে অর্থনীতিতে কোনো প্রবৃদ্ধি হওয়ার কথা নয়, নিশ্চিতভাবে আগের অর্থবছরের চেয়ে অর্থনৈতিক কার্যক্রম কম হয়েছে। এর আগের ৯ মাসে যদি ১১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয় তাহলে পুরো অর্থবছরে বিবিএসের ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হিসাবের সাথে খাপ খায়। কিন্তু আগের ওই ৯ মাসে বিনিয়োগ, রপ্তানি, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রভৃতি নির্দেশক দুর্বল ছিল। ফলে এত বেশি আকারে অর্থনীতি বাড়ার কথা নয়। মনে হচ্ছে, বিবিএস করোনার প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে জিডিপির প্রাক্কলন করেনি। এছাড়া সার্বিকভাবে জিডিপি হিসাব করার যে পদ্ধতি বিবিএসের রয়েছে, তা দুর্বল এবং অর্থনীতির অবস্থার প্রকৃত চিত্র এতে প্রতিফলিত হয় না। পরিসংখ্যানের এই দুর্বলতা দূর করতে একটি কমিশন গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি। সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন সিপিডির ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, জিডিপির প্রবৃদ্ধির যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, সেখানে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- হিসাব পদ্ধতির মধ্যে অন্তর্নিহিত দুর্বলতা রয়েছে। কারণ আমরা দেখছি, এখানে অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের ভিত্তিতে এই হিসাবটি করা হয়েছে। ফলে পরবর্তী তিন মাসে অর্থনীতির কী হলো তার কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।

দ্বিতীয় বিষয় হলো- অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হালনাগাদ নয়। তার মানে নিয়মিতভাবে সেই তথ্যগুলো আহরণ করা হয় না। অনেক তথ্য অনেক পুরোনো, তার ভিত্তিতে একটা প্রাক্কলন করা হয়েছে। তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার বিষয়ে সিডিপির নির্বাহী পরিচালক বলেন, অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের ভিত্তিতে জিডিপির হিসাব করা হয়েছে। এই অর্থবছরে বাংলাদেশের এবং সারা পৃথিবীতে অর্থনীতিতে করোনার যে প্রভাব পড়েছে, সেই প্রভাবটা একটা ঐতিহাসিক। এটার প্রভাব সর্বব্যাপী। এ প্রভাবটা কিন্তু আমরা জিডিপির হিসাবের মধ্যে তুলে ধরতে পারলাম না।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে মার্চ মাস থেকে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরপর থেকে লকডাউন দেয়া হয়েছে। সুতরাং অর্থনীতিতে এর প্রভাবটা শেষ প্রান্তিকে এসে বেশি বোঝা যায়। প্রবৃদ্ধি নিয়ে একটা মোহ সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, এই মোহ সৃষ্টি হওয়ার কারণ প্রবৃদ্ধি রাজনৈতিকভাবেও ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি শুধু একটা সংখ্যা নয়, এর পেছনে অনেক তাৎপর্য রয়েছে। যেমন মানুষের ওপর প্রভাব, নীতিমালার ক্ষেত্রে প্রভাব। কিন্তু এখন আমরা দেখছি, এটা একটা রাজনৈতিক সংখ্যায় পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধির সুফল যদি সবাই না পায়, প্রবৃদ্ধির ফলে যদি কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হয়, দারিদ্র্য না কমে, বৈষম্য না কমে, তাহলে সেই প্রবৃদ্ধি কোনো ধরনের অন্তর্ভুক্তমূলক হয় না। সুতরাং এ সংখ্য দিয়ে যদি আমরা আমাদের সাফল্য দেখাতে চাই, তাহলে তা কোনো কাজের হবে না।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিবিএস যে কথা বলছে, সেটাই ধরে নিচ্ছি। এটা হলো ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন অর্থবছরে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কত হয়েছে। বিবিএসই বলেছে, ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। যেহেতু চতুর্থ প্রান্তিকে আমাদের একটা নেগেটিভ অবস্থা ছিল, সুতরাং প্রবৃদ্ধির তো প্রশ্নই আসে না। এটা আমরা চ্যালেঞ্জ করতে পারি। কেউ যদি বলে চতুর্থ প্রান্তিকে, গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি, জুলাই-মার্চে (২০১৯ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত) একমাত্র রেমিট্যান্স ছাড়া আমদানি, উৎপাদন, বেসরকারি খাতের ঋণ, ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ সবগুলো মিলিয়ে জুলাই-মার্চেই অর্থনীতিতে একটা শ্লোথ গতি দেখছি। তারপর যোগ হয়েছে চতুর্থ প্রান্তিক। যেখানে প্রবৃদ্ধির তো প্রশ্নই আসে না। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আমরা বলছি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাস্তবতার সঙ্গে মিল খাচ্ছে না।

আরেক প্রশ্নের উত্তরে গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকারের যে পরিসংখ্যানগুলো দেয়া হয়েছে সেগুলো এবং সরকার অন্যান্য যে কার্যক্রম নিচ্ছে তার সঙ্গে মিলিয়ে আমরা তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি। তিনি বলেন, ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি সরকারের এই হিসাব যদি ঠিক থাকে, তাহলে কিন্তু মাথাপিছু আয় যেটি সরকার বলছে, ২০৬৪ ডলার হয়েছে এবং সেই ভিত্তিতে আপনি অনুমান করতে পারেন, বিভিন্ন সংস্থা যে হারে দারিদ্র্য বাড়ার কথা বলছে, সে হারে বাড়ার কথা নয়। অথবা নতুন দারিদ্র্য সৃষ্টি হওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, সেটাও হওয়ার কথা নয়। যেহেতু যথেষ্ট মাত্রই প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তাহলে তো সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য সরকারের এত বড় উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজন পড়ে না, সরকারের তথ্য-উপাত্ত যদি আমরা বিশ্বাস যোগ্যমাত্রাই ধরে নেই। গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সিপিডির পক্ষ থেকে আমরা বলছি, দারিদ্র্যের হার ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত উন্নীত হতে পারে। সরকারও কিন্তু দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। যদি এই মাত্রায় প্রবৃদ্ধি হয় তাহলে তো এমন কর্মসূচি নেয়ার প্রয়োজন পড়ে না।

সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির মূল্যায়ন তুলে ধরেন সংস্থার গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান। সেখানে বলা হয়েছে, অর্ধেকের বেশি জিডিপি প্রাক্কলন করার মতো গ্রহণযোগ্য তথ্য-উপাত্ত নেই। বিবিএসের দেয়া জিডিপির হিসাব বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Bilal Hossin ১৭ আগস্ট, ২০২০, ৪:১৯ এএম says : 0
চোরা হিসাব মিলবে কিভাবে?
Total Reply(0)
মোঃ তোফায়েল হোসেন ১৭ আগস্ট, ২০২০, ৪:২১ এএম says : 0
দায়সারা কাজ করার জন্য আজ সরকারি প্রতিটি দপ্তরের বেহাল দশা। এসব কর্মকর্তারা কেবল বেতনটা সময় মতো নেয়া বুঝে আন কিছু বুঝে না।
Total Reply(0)
কামাল রাহী ১৭ আগস্ট, ২০২০, ৪:২২ এএম says : 0
সরকারকে হাইলাইট করার জন্য জিডিপিকে বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে এজন্য হয়তো মিলছে না।
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ১৭ আগস্ট, ২০২০, ৪:২৩ এএম says : 0
সিপিডির প্রস্তাব আমলে নিয়ে দ্রুত কমিশন গঠন করে সমস্যাটি সমাধান করার দাবি জানাচ্ছি।
Total Reply(0)
বাতি ঘর ১৭ আগস্ট, ২০২০, ৪:২৪ এএম says : 0
না মিলারই কথা। কোনো রকম একটা পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে এতেই তাদের দায়িত্ব শেষ।
Total Reply(0)
রিয়াজুল ইসলাম ১৭ আগস্ট, ২০২০, ১০:৩৬ এএম says : 0
সেখানকার কর্মকর্তারা কি করে?
Total Reply(0)
হাবিব ১৭ আগস্ট, ২০২০, ১০:৩৭ এএম says : 0
অহংকার কর্মকর্তাদেরকে বাদ দিয়ে নতুন করে লোক নিয়োগ দেওয়া হোক। তাহলে সকল হিসাব মিলে যাবে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন