১০ বছর পর মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপির হিসাব গণনায় ২০১৫-১৬ সালকে নতুন ভিত্তিবছর হিসেবে ঘোষণা করেছে বিবিএস।
একসময় যেখানে এ দেশের কোটি কোটি গরিব মানুষের কোনো ব্যাংকের ত্রিসীমানায় যাওয়ার সুযোগ ছিল না, সেখানে তারাই এখন ঘরে বসেই সহজে মোবাইল ফোনের এক ক্লিকেই টাকা পাঠিয়ে ব্যাংকিংয়ের মতো লেনদেন করছেন। বিকাশ, রকেট, ইউপেসহ এ রকম ১৫টি মোবাইল ব্যাংক প্রতিষ্ঠান এই সেবা দিচ্ছে। অর্থাৎ টাকা লেনদেনের জন্য মোবাইল ব্যাংকিং এখন বেশ জনপ্রিয় ও সহজলভ্য মাধ্যম। এই মোবাইল ব্যাংকিং সেবাকে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) গণনায় নতুন খাত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এমন আরো অন্তত আটটি খাত জিডিপির নতুন ২০১৫-১৬ ভিত্তিবছরে যুক্ত করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। প্রতিনিয়ত অর্থনীতির রূপ বদল হয়, শুরু হয় নতুন নতুন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। কিছু কিছু হারিয়ে যায়। তাই এক দশক পরপর জিডিপির ভিত্তিবছর পরিবর্তন করা হয়, যাতে নতুন ভিত্তিবছর দিয়ে অর্থনীতি আরো বেশি নিখুঁতভাবে গণনা করা যায়। নব্বইয়ের দশকের আগপর্যন্ত খেয়ানৌকায় পারাপার একটি বড় পেশা ছিল। অর্থনীতিতে বেশ অবদান রাখতেন তারা। কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়ন হওয়ায় কালক্রমে পেশাটির পরিসর কমে যায়। জিডিপি তালিকা থেকে বাদ পড়ে। মাত্র এক যুগ আগেও এ দেশে মোবাইল ব্যাংকিং ছিল না। কিন্তু এখন তা মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের অংশ হয়ে গেছে। ২০১০ সালে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথমবারের মতো মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে, যা দ্রুত বিস্তার লাভ করে। মোবাইল ব্যাংকিং তথা মোবাইলে আর্থিক সেবার (এমএফএস) মাধ্যমে বর্তমানে দৈনিক গড়ে আড়াই হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সাত কোটির বেশি। এই খাতে নতুন নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে। ফলে অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে খাতটি। অথচ জিডিপি গণনায় ২০০৫-০৬ ভিত্তিবছরে মোবাইল ব্যাংক খাতটি ছিল না। তাই নতুন ভিত্তিবছরে (২০১৫-১৬) তা যোগ করা হয়েছে।
নতুন খাতসমূহ: মোবাইল ব্যাংকিং; এজেন্ট ব্যাংকিং; গরু ও হাঁস-মুরগি; নার্সারি; লটকন, ড্রাগন, স্ট্রবেরি, ক্যাপসিকাম, মাশরুম; আবাসন; কেব্ল টেলিভিশন; ইন্টারনেট; হেলিকপ্টার।
মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মতো এজেন্ট ব্যাংকের যাত্রাও শুরু হয় এক দশক আগে। তাই আগে এজেন্ট ব্যাংকিং অর্থনীতিতে কী পরিমাণ অবদান রাখছে, তা জিডিপি গণনায় নিখুঁতভাবে আসত না। এবার এজেন্ট ব্যাংকও যুক্ত হয়েছে। দেশে ১৪ হাজার এজেন্ট ব্যাংক আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবমতে, এজেন্ট ব্যাংকে আমানতের স্থিতি ২০ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা।
বাণিজ্যিকভাবে গরু ও হাঁস-মুরগি পালন ও মাংস উৎপাদন এবং নার্সারি ব্যবসায়ের বিকাশ ঘটায় এগুলো জিডিপিতে নতুন খাত হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে। কৃষি খাতেও এখন লটকন, ড্রাগন ও স্ট্রবেরি ফল এবং ক্যাপসিকাম, মাশরুম ইত্যাদি নতুন নতুন সবজির বাণিজ্যিক আবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় জিডিপির নতুন ভিত্তিবছরে যুক্ত করা হয়েছে। জিডিপি আরো বেশি নিখুঁতভাবে গণনায় আবাসন, কেব্ল টেলিভিশন, ইন্টারনেট ব্যবসাসহ নতুন কয়েকটি খাতকে যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া হেলিকপ্টার সেবাও যুক্ত হয়েছে জিডিপিতে। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, জিডিপি গণনায় অর্থনীতির নতুন নতুন উদীয়মান খাত অন্তর্ভুক্ত না করলে গতি-প্রকৃতি বোঝা যায় না। তবে যেসব কর্মকাণ্ড নতুন করে আনা হচ্ছে, তা কতটা টেকসই হতে পারবে, তা বিবেচনা করতে হবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক পরিবেশ দিতে হবে। একটি যুক্ত করা হলো, কিন্তু কিছুদিন পর তা হারিয়ে গেল। তাহলে জিডিপির ত্রুটিপূর্ণ গণনা চলতে থাকবে। তিনি একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, এখন ড্রাগন ফল ও স্ট্রবেরির চাষ হচ্ছে। বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে গেছে। এসব ফলের প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য সহায়তা দিতে হবে। তা না হলে কিছুদিন পর চাষিরা এসব ফল চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। নতুন ভিত্তিবছর হওয়ায় জিডিপির আকার ১৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে জিডিপির আকার চলতি মূল্যে ৩৪ লাখ ৮৪০ কোটি টাকা।#
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন