পনের দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো অস্বাভাবিক জোয়ারে আঘাত হেনেছে লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগর উপজেলার ৩০টি গ্রামে।জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে মানুষের ঘর-বাড়ীতে। গত ৩ দিনের টানা বৃষ্টির পানি আর মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে তলিয়ে গেছে স্কুল মাদ্রাসা,পুকুরের মাছ ও কৃষকের ফসলি জমি।প্রতি নিয়তই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আলেকজান্ডার ইউনিয়নের মুন্সিরহাট বালুরচরের প্রায় সকল এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে ঘরের খাট কিংবা চৌকিতে। পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে রান্না ঘরের চুলাও।
রামগতি উপজেলার চরগাজী, বড়খেরী, বিবিরহাট, চরগোসাই, চরআলগী, চরমেহার আলেকজান্ডার, বালুরচর, মুন্সিরহাট, চর আবদুল্যাহ এবং কমলনগরের লুধুয়া, সাহেবেরহাট, চর মার্টিন, পাটারীরহাট, ফলকন, মতিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকা জোয়ারের পানিতে ভাসছে। রাস্তাঘাট ঠুবে লোকালয়ে প্রবেশ করছে পানি।
ভুক্তভোগীরা মেঘনায় বেড়ীবাঁধ না থাকাকে দায়ী করেছেন। সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে উপকূলবাসীকে রক্ষায় দ্রুত বেড়ীবাঁধ দেয়ার দাবি জানান। অস্বাভাবিক জোয়ারে লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগর উপজেলার প্রায় ৩০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। হঠাৎ নদীর পানি৪-৫ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ৭ হাজার হেক্টর জমির ফসলসহ গবাধিপশু, মুরগির পোল্ট্রি খামার ও শতাধিক মাছের ঘের ক্ষতির শিকার হয়েছে। গত দিনের টানা বৃষ্টি ও আচমকা মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারে বেড়ি বাঁধ না থাকায় জোয়ারে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলে স্থানীয়দের।সূত্র জানা যায়, মেঘনার ভয়াবহ ভাঙ্গনে নদীতে বিলিন হয়ে গেছে বেড়িবাধ। তাই অরক্ষিত হয়ে পড়ে এসব এলাকা। হঠাৎ গত ৩ দিনের বৃষ্টি আট মেঘনা নদীর জোয়ারের পানি অস্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেড়ে যায়। এসময় তীব্র বাতাস ও স্রোতে নদীর পানি হু-হু করে ঢুকে পড়ে উপকূল এলাকায়। মুহূর্তেই বিস্তীর্ণ জনপদ পানির স্রোতে ভেসে যায়।খোঁজ নিয়ে জানা যায়,কমলনগরের চর ফলকন, চর কালকিনি, চর লরেন্স, নবীগঞ্জ, নাছিরগঞ্জ ও রামগতি উপজেলার চর আবদুল্লাহ, চর গজারিয়া, চর গাজী, চর আলগী, বড়খেরী, তেলীর চর, আলেকজান্ডার, বালুর চর, সুজন গ্রাম, জনতা বাজার, সেবা গ্রামসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। নদীর তীর থেকে এসব এলাকার প্রায় ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। এতে প্রায়লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে নদী সংযুক্ত খাল, পুকুর, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয়-প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট হাঁটু পরিমাণ পানিতে ডুবে আছে। শত শত বসতঘরে পানি ঢুকে ক্ষতি হয়েছে আসবাবপত্র ও বিভিন্ন মালামাল। এতে মেঘনা উপকূলীয় মানুষগুলো চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারি কর্মকর্তা রফিকুল্লাহ মুরাদ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, মেঘনার অস্বাভাকি জোয়ারে রামগতি- কমলনগর উপজেলায় আউশ, রোপা আমন, বোনা আমন ও শাকসবজিসহ প্রায় ১১ হাজার হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। এতে রোপা আমনের ৩৭৫ হেক্টর জমির বীজতলাও নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ক্ষতির পরিমান সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বন্যা মোকাবেলায় জিআর নগদ ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, জিআর চাল ৩৫০ টন, গোখাদ্যের জন্য ৬ লক্ষ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য ২ লক্ষ টাকা, শুকনা খাবার ২ হাজার প্যাকেট মজুদ রাখা হয়েছে। এছাড়াও কবলিত এলাকর মানুষের আশ্রয়ের জন্য জেলার মোট ৫ উপজেলায় ১০১টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র খোলা রয়েছে।
চরকালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাষ্টার সাইফুল্লাহ ও চরগাজী ইউপি চেয়ারম্যান তাওহিদুল ইসলাম সুমন জানান, তাদের ইউনিয়ন গুলোতে জোয়ারের কারণে বেশ কিছু কাঁচা, আধাপাকা ঘরবাড়ি ও সড়কের গাছসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন তারা। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোতে শুকনা খাবারসহ সহ সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোবারক হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, জোয়ারের পানিতে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ২৫ হাজার পরিবারের ৬০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়ে। এতে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য সহায়তা চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল মোমিন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মেঘনার হঠাৎ জোয়ারে ৬টি ইউনিয়ন ও রামগতি পৌরসভার আংশিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে ঘর-বাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলী জমিসহ ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে ১০ হাজার পরিবারের মধ্যে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।তাৎক্ষনিক কিছু শুকনা খাবার দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসক নিকট ত্রাণের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। বরাদ্ধ পেলে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন