সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সেই বিভীষিকাময় দিন

আজ ভয়াল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা

ইয়াছিন রানা ও খলিলুর রহমান | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলার পরের দৃশ্য -ফাইল ফটো


বিকেল ৫টা ২২ মিনিট। ঠিক তখনই বিকট শব্দের বিস্ফোরণ ঘটলো। মুহুর্তেই চারপাশে বিস্ফোরণ। এক এক করে বিস্ফোরিত হলো ১৩ টি গ্রেনেড। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামেন এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। এ ঘটনায় ২৪ জন নিহত ও কয়েকশত নেতাকর্মী আহত হয়েছিলেন। আজ ওই ঘটনার ১৬ বছর পূর্ণ হলেও এখনো বিচারকার্য সম্পন্ন হয়নি। ইতোমধ্যে ওই ঘটনায় দায়ের করার মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। বর্তমানে পেপারবুক সুপ্রিমকোর্টে যাচাই বাছাইয়ের কাজ চলছে। এরপর শুনানি শেষে রায় কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে ‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস বিরোধী’ সমাবেশ চলছিল। আওয়ামী লীগ আয়োজিত ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুর থেকেই লোকে লোকারন্য সমাবেশ স্থল ও আশপাশের এলাকা। সমাবেশ শেষে সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল হওয়ার কথা ছিল। সে জন্য মঞ্চ নির্মাণ না করে একটি ট্রাককে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সমাবেশে সবশেষে বক্তৃতা দেন শেখ হাসিনা। বক্তৃতা শেষ করে ট্রাক থেকে নিচে নামার সিঁড়ি কাছে আসা মাত্রই বিস্ফোরণ শুরু হয়। কেঁপে উঠে পুরো বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউসহ আশপাশ এলাকা। এ সময় দলীয় নেতাকর্মীরা মানব দেওয়াল তৈরী করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও ঘটনাস্থলে নিহত হন ১৬ জন। এ সময় আহত আওয়ামী লীগের নারী নেত্রী আইভি রহমান ৫৮ ঘন্টা মৃত্যুর সাথে লড়াই করে না ফেরার দেশে চলে যান। এছাড়া আহত হয়ে শরীরে এক হাজারের বেশি স্পিøন্টার নিয়ে প্রায় দেড় বছর মৃত্যুর সাথে লড়াই করে হেরে যান ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র ও আওয়ামী নেতা মোহাম্মদ হানিফ। শুধু আইভি ও হানিফ নয়, এ ঘটনায় সব মিলিয়ে ২৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

নিহত বাকিরা হলেন- শেখ হাসিনার দেহরক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুব, রফিকুল ইসলাম ওরফে আদা চাচা, রতন শিকদার, হাসিনা মমতাজ রিনা, রিজিয়া বেগম, সুফিয়া বেগম, লিটন মুনশি, আব্দুল কুদ্দুস পাটোয়ারী, আবুল কালাম আজাদ, আব্বাস উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসির উদ্দিন সরদার, আবুল কাশেম, বেলাল হোসেন, আব্দুর রহিম, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, জাহেদ আলী, মোতালেব হোসেন, মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন ও ইসহাক মিয়া। তারা সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছিলেন।

মারাত্মক আহতরা হলেন- শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, মরহুম আব্দুর রাজ্জাক, মরহুম সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, মাহবুবউল আলম হানিফ, সম্প্রতি মরহুম অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাবের হোসেন চৌধুরী, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, মাহবুবা পারভীন, অ্যাডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল, নাসিমা ফেরদৌস, শাহিদা তারেক দিপ্তী, রাশেদা আখতার রুমা, হামিদা খানম মনি, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, রুমা ইসলাম, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন, মামুন মল্লিক প্রমুখ।

এদিকে ভয়াবহ এই গ্রেনেড হামলার ১৪ বছরের মাথায় পৃথক দুটি মামলায় গত বছরের ১০ অক্টোবর বিএনপি নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদÐ দেন ঢাকার দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদÐ হয়। বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয় আরও ১১ জনের। সাজাপ্রাপ্ত ৫১ আসামির মধ্যে এখনো পলাতক আছেন ১৮ জন। এই রায়ের বিষয়ে হাইকোর্টে আপিল মামলা শুনানীর অপেক্ষায় আছে। মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য যে পেপারবুকের প্রয়োজন ছিল তা, গত ১৬ আগস্ট বিজিপ্রেস থেকে হাইকোর্টে পৌঁছেছে।

সুপ্রিমকোর্টের মুখপত্র ও বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানান, ২১ শে আগস্টের ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলায় ১৩ ভলিউমে মোট ৫৮৫ টি পেপারে বুক এসেছে যা সাড়ে ১০ হাজার পৃষ্ঠা। মোট আপিল ২২ টি ও জেল আপীল ১২ টি। বর্তমানে পেপারবুক সুপ্রিমকোর্টে যাচাই বাছাইয়ের কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।

চাঞ্চল্যকর এ মামলায় বিচারিক আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে প্রধান কৌসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, এ মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে সাক্ষ্য তথ্য প্রমাণে দেখেছি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার জঙ্গি গোষ্ঠীর সহায়তা নিয়ে ইতিহাসের জঘন্যতম এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি সংঘবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করা এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যাই ছিল ভয়াবহ ওই গ্রেনেড হামলার লক্ষ্য। যুদ্ধে ব্যবহৃত সমরাস্ত্র দিয়ে নিরস্ত্র মানুষ এবং কোন রাজনৈতিক দলের সমাবেশে হামলার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না বলেও জানান তিনি।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারিক আদালতের রায় বিষয়ে আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি উচ্চ আদালতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হবে। তিনি বলেন, মামলাটির গুরুত্ব উল্লেখ করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির আবেদন করা হবে। যেন শুনানির জন্য একটি বেঞ্চে পাঠানো হয়। বিচারিক আদালত আসামিদের যে সাজার রায় প্রদান করেছেন তা যেন বহাল থাকে উচ্চ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের সে প্রচেষ্টা থাকবে বলেও জানান তিনি।

আইন অনুযায়ী, বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদÐ কার্যকর করার জন্য হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে। এ জন্য রায় ঘোষণার পর বিচারিক আদালত মামলার নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন। যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত। নথিপত্র পাওয়ার পর হাইকোর্টেও ডেথ রেফারেন্স শাখা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সংশ্লিষ্ট মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করে। পেপারবুক প্রস্তুত হলে মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

এদিকে, গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে আওয়ামী লীগ প্রতি বছর বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এ ধারাবাহিকতায় এবারও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বডুয়া স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি জানানো হয়, বৈশি^ক মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে গ্রেনেড হামলার দিনটি স্মরণে সীমিত পরিসরে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। আজ সকাল ৯টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত বেদীতে পুস্পার্ঘ্য নিবেদন করা হবে। এতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতৃবৃন্দ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকগণ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়াও যথাযথ স্বাস্থ্য বিধি মেনে গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে ও হতাহতদের স্মরণে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদবিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করার জন্য আহŸান জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Gourango Dutta ২১ আগস্ট, ২০২০, ১২:৫৯ এএম says : 0
We want capital punishment for the granade attackers.
Total Reply(0)
Kutub Uddin ২১ আগস্ট, ২০২০, ১২:৫৯ এএম says : 0
May we know as supporters of AL, what precautionary measures have been taken to stop recurrence of such threats. We can not just go on blaming and lamenting. Apart from official protection, the party should have it's own security protocols for all officials including ministers and ofcourse PM and President. The ministers and officials need security badly as police protection seems to be inadequate. Think about this.
Total Reply(0)
Mashudur Rahman Titu ২১ আগস্ট, ২০২০, ১:০০ এএম says : 0
২১শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলা ১৫ ই আগষ্ট এর মতো আওয়ামীলীগকে নেতৃত্বশূন্য করবার দেশি বিদেশি আরেকটি গভীর ষড়যন্ত্র। যার নেতৃত্বে ছিলো জোট সরকার। শোকাবহ ২১শে আগষ্ট।
Total Reply(0)
Rafiqul Islam Rony ২১ আগস্ট, ২০২০, ১:০০ এএম says : 0
২১ শে আগষ্টের ঘটনার সাথে তৎকালীন বি এন পি- জামাত জোট সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা থাকার অন্যতম একটি প্রমান হলো - ঘাতকদের নিরাপদে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া এবং ঘটনার পর আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিতে যাওয়া নেতা -কর্মী-সমর্থকদের উপর পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জ করা।
Total Reply(0)
Shamim Ahmed ২১ আগস্ট, ২০২০, ১:০১ এএম says : 0
৭১ দালাল ঘাতকদের দল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী দল আওয়ামী লীগ কে ধ্বংস করার জন্য ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালায়। সেই সকল দালালদের বিচারের দাবি জানাই এবং তিব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আর যারা শহিদ হয়েছেন তাদের আত্বার মাগফিরাত কামনা করি।
Total Reply(0)
Sumon Chandro ২১ আগস্ট, ২০২০, ১:০১ এএম says : 0
ভয়াল ২১ শে আগস্ট" ইতিহাসের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আই ভি রহমান সহ সকল শহীদদের প্রতি ডেমরা থানা সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সিফাত সাদেকীন চপল ভাইয়ের পক্ষ থেকে জানাই বিন্ম্র শ্রদ্ধা ৷
Total Reply(0)
Ziaul Alam Jhinuk ২১ আগস্ট, ২০২০, ১:০১ এএম says : 0
শোকাবহ ২১ আগষ্ট নিহত সকল শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাজলি । যারা ২১ আগষ্ট আহত হয়ে জিবিত আছেন, স্পিন্টার শরিলে বহন করে অসহ্য যন্ত্রনা ভোগ করছেন তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি । এই ঘটনার সাথে জরিত তারেখ জিয়া সহ সকলের ফাসি চাই।
Total Reply(0)
Helal Ahmad Helal ২১ আগস্ট, ২০২০, ১:০১ এএম says : 0
বিএনপি জামাতের ন্যক্কার জনক ঘটনা,ওদের বিচার চাই।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন