সমুদ্রে লঘুচাপ, প্রবল মৌসুমী বায়ুচাপ, গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার সক্রিয় প্রভাব, দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী বর্ষণের ফলে উত্তাল উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং এর সংলগ্ন দেশের উপক‚লভাগ। সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর সঙ্কেত এবং দেশের নদী বন্দরগুলোকে ১ নম্বর নৌ-সতর্কতা দেখানো হচ্ছে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বরিশাল, খুলনা, সাতক্ষীরা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ উপকূলে প্রবল সামুদ্রিক জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। ভাটি অঞ্চল হয়ে সমুদ্র উপক‚লীয় এলাকা, প্রত্যন্ত চর, দ্বীপাঞ্চলের প্রায় সর্বত্র অব্যাহত রয়েছে নদ-নদী, শাখানদী ও উপনদীগুলোর তীব্র ভাঙন। গত ২০ মে দেশের দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলে প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ‘আম্পান’ যে গতি ও শক্তিতে আঘাত হানে গত কয়েকদিনে ওইসব অঞ্চলের নদ-নদীগুলোতে তার চেয়েও বেশিহারে সামুদ্রিক জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির রেকর্ড হয়েছে। সেসব স্থানে ‘আম্পান’ এবং ইতিপূর্বে ৯ নভেম্বর’১৯ইং সংঘটিত ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র ক্ষত আজও শুকায়নি।
সমুদ্র উপকূলভাগের কাছাকাছি উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুয়েকদিনের মধ্যে আবারও একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়া পূর্বাভাসে তা জানা গেছে। আগের সুস্পষ্ট লঘুচাপ, প্রবল মৌসুমী বায়ু, ভারী বর্ষণ ও গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় দেশের মধ্যাঞ্চল, ভাটি ও উপক‚লভাগ হয়ে সমুদ্র্রের দিকে বানের পানি হ্রাস ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিদিনই প্রবল জোয়ারে ডুবে যাচ্ছে চর-উপক‚ল-দ্বীপাঞ্চল। ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে ফল-ফসল, জনবসতি, ক্ষেত-খামার, গবাদিপশু-পাখি, ক্ষুদ্র ব্যবসা-বাণিজ্য, গ্রামীণ অবকাঠামো। বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
এদিকে সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়েছে। সর্বোচ্চ বর্ষণ ডিমলায় ১শ’ মিলিমিটার। এ সময় চট্টগ্রাম, রংপুর ও বরিশাল বিভাগে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত, কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হয়েছে। ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগে তুলনামূলক কম বৃষ্টি ঝরেছে। ঢাকায় বৃষ্টিপাত হয় ২৩, চট্টগ্রামে ৩৪ মি.মি.। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৩৪.৫, ঢাকায় সর্বোচ্চ ৩১ এবং সর্বনিম্ন ২৬.৪ ডিগ্রি সে.।
আজ সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও
মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। এরপরের ৫ দিনে আবহাওয়ার কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে।
বন্দরে ৩ নম্বর সঙ্কেত : আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় রয়েছে। এ কারণে গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন বাংলাদেশের উপক‚লীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখানো হচ্ছে।
সক্রিয় মৌসুমী বায়ু এবং ভারী বর্ষণের কারণে উপক‚লীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ল²ীপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা পর্যন্ত জেলাসমূহ এবং সেখানকার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক সামুদ্রিক জোয়ারের চেয়ে এক থেকে ২ ফুট উচ্চতার বায়ুতাড়িত প্রবল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হতে পারে। সমুদ্র উত্তাল থাকায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে উপক‚লের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
১ নম্বর নৌ-সতর্কতা : দেশের অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরসমূহের জন্য আবহাওয়া সতর্কবার্তায় জানানো হয়েছে, রাজশাহী, রংপুর, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেই সাথে বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। এসব এলাকার নদী বন্দরসমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, ভারতের মধ্যপ্রদেশের পশ্চিমভাগ ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থারত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি বর্তমানে লঘুচাপ হিসেবে অবস্থান করছে। মৌসুমী বায়ুর একটি বলয় ভারতের রাজস্থান, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত আছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয়, উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে জোরালো অবস্থায় রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন