৫ জনের দাফন সম্পন্ন বাকরুদ্ধ দুই স্ত্রী
নবজাতকের লাশ নিয়ে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ঝালকাঠি সদর উপজেলার একই পরিবারের পাঁচজনের লাশ গতকাল দাফন করা হয়েছে। সকাল ১০টায় বাউকাঠি মাদ্রাসা মাঠে তাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার মো. শাহ আলমসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেয়। পরে তাদের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এদিকে, এক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যুতে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। যার ছায়া নেমে এসেছে পুরো এলাকায়। সরেজমিনে দেখা যায়, বুধবার রাত ৯টার দিকে বাড়িতে লাশ এসে পৌঁছানোমাত্র স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। একজন একজন আর একজনকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। গ্রামে খবর ছড়িয়ে পড়তেই নিহত ব্যক্তিদের বাড়িতে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। সকাল ১০টায় দুর্ঘটনায় নিহত ও নবজাতকের জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। জানাজায় পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের জমায়েত হয়। দাফনের সময়ও এলাকার অনেক মানুষকে কান্না করতে দেখা যায়।
নিহতদের পরিবারের লোকজন জানায়, তারেক ও আরিফ দুই ভাই। চাকরি করেন ঢাকা উইনডে ওয়াশিং কোম্পানিতে। ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ঝিলমিল আক্তার মরিয়মকে বাড়িতে রেখে গত ৫ আগস্ট ঢাকায় বড় ভাই আরিফের সঙ্গে একটি গার্মেন্টসে চাকরিতে যোগ দেন তারেক। ২০ আগস্ট নিজ বাড়িতেই তার স্ত্রী কন্যা সন্তান প্রসব করেন। মেয়ের নাম রাখেন উম্মে ফাতিমা। আরিফের স্ত্রী তামান্নার ৭ বছর পর সদ্য জন্ম নেয়া শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার রাতে শিশুটি মারা যায়। তামান্নাকে হাসপাতালে রেখে পরিবারের পাঁচজনকে নিয়ে আরিফ গত বুধবার সকালে শিশুটির লাশ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সযোগে গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাউকাঠির উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথেই বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে একটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। দুমড়েমুচড়ে যায় অ্যাম্বুলেন্সটি। শেষ হয়ে যায় পুরো পরিবার।
পরিবারে বেঁচে আছে শুধু দুই ভাইয়ের স্ত্রী ও এক শিশু সন্তান। কান্না করার মতোও কেউ রইলো না। নিহত তারেকের স্ত্রী ঝিলমিল আক্তার মরিয়ম বলেন, ২০ আগস্ট মেয়ের জন্ম হলেও সে (তারেক) ছুটি না পাওয়ায় আসতে পারেনি। ইমোতে তাকে মেয়ের ছবি দেখিয়েছি। সে গতকাল সকালে ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে ফোন দিয়ে বলেছিলো- বাড়িতে আসতেছি। মেয়েকে আগেই খাইয়ে রাইখো। কিছুক্ষণ পরপর কথা বলেছি। তার ইচ্ছে ছিল মেয়েকে প্রাণ ভরে আদর করার। কিন্তু বিকেল ৫টার পর আর কথা হয়নি। পরে দুর্ঘটনার খবর পেয়েছি। অপরদিকে, নিহত আরিফের স্ত্রী তামান্নাকে সকালে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আনা হয়েছে। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন