শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

ভরা প্রজননকালকে সামনে রেখে সাগর মোহনায় ইলিশের ব্যাপক বিচরণ ভাল লক্ষণ নয়

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:১২ পিএম

আশ্বিনের মূল প্রজনন মৌসুমকে সামনে রেখে দক্ষিণ উপকূলের সাগর মোহনায় স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশী ডিমওআলা মা ইলিশের বিচরণ ও ধরা পড়ায় আগামী বছর উৎপাদন নিয়ে দুশ্চিন্তা কিছুটা বাড়ছে। এমাসের শেষেই আশি^নের বড় পূর্ণিমার দিন ছাড়াও অগের ৪ দিন ও পরের ১৭ দিন নিরাপদ প্রজননের ইলিশ আহরন বন্ধ থাকবে। গতবছরও ভাদ্রের মধ্যভাগের পরেই সাগর থেকে ঝাকে ঝাকে মা ইলিশ উপক’ল সহ দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীন নদ-নদীতে উঠে আসায় তা ব্যাপকহারে জালে ধরা পরে। তবে এবার এখনো সাগরের ইলিশ উপক’ল হয়ে অভ্যন্তরীন নদ-নদীতে উঠে না আসায় বিচরন কম। জেলে ও মৎসজীবীদের মতে, এবার দেশের উত্তর ও মধ্যঞ্চলে বণ্যা সহ ভাদ্রের বড় অমাবশ্যায় ফুসে ওঠা সাগরের ভয়াল জোয়োরের প্লাবনে সমগ্র দক্ষিঞ্চল প্লাবিত হয়। সেসব পানি প্রবল বেগে সাগরে পতিত হবার কারনে ইলিশ এখনো দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীন নদ-নদীতে উঠে আসছে না। তবে অসন্ন প্রজননকালের আগেই যদি সাগরের মা ইলিশ আরো উজানে উঠে আসতে শুরু করে,তবে তা বড় বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে বলেও শংকিত মৎস্য বিজ্ঞানীগন।

মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশ মেনেই সরকার আশি^নের প্রথম উদিত চাঁদের পূর্ণিমার আগের ৪ দিন ও পরের ১৭ দিন সহ মোট ২২দিন ইলিশের মূল প্রজননকাল হিসেবে চিঞ্হিত করে উপক’লের ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার মূল প্রজননস্থলে সবধরনের মাছের আহরন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে। পাশাপাশি সবগুলো অভ্যন্তরীন নদ-নদীতে ইলিশ আহরন ছাড়াও সারাদেশে এর পরিবহন ও বিপনন নিষিদ্ধ থাকবে।

আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ইলিশের একক অবদান এখন ১%-এরও বেশী। আর মৎস্য খাতে অবদান প্রায় ১২-১৩%। বিগত দুই দশকে ইলিশ নিয়ে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহনের ফলে এর উৎপাদন ১.৯৮ লাখ টন থেকে ইতোমধ্যে সোয়া ৫ লাখ টন অতিক্রম করেছে। যারমধ্যে মূল প্রজননকালীন ২২দিন সময়ে আহরন ও বিপনন নিষিদ্ধ থাকার বিষয়টি ছাড়াও জাটকা আহরন ও বিপননে নিষেধাজ্ঞা অন্যতম প্রধান ভ’মিকা পালন করছে। ২০১৫ সালে আশ্বিনের পূর্ণিমার আগেÑপড়ে ইলিশ আহরন নিষিদ্ধকালীন সময় ১৫ দিনের স্থলে ২০১৭ সালে ২২ দিনে উন্নীত করা হয়। ফলে এসময়ে ইলিশের নিষিক্ত ডিমের পরিমান ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৩৬৫ কেজি থেকে ৩৭% বেশী, অর্থাৎ ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৩৯৫ কেজিতে উন্নীত হয়। এমনকি ইলিশ পোনা জাটকার উৎপাদনও ২০১৫ সালে ৩৯ হাজার ২৬৮ কোটি থেকে ২০১৭ সালে ৪২ হাজার ২৭৪ কোটিতে উন্নীত হয়েছে বলে মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে বলা হয়েছে।

মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, সারা বিশ্বে উৎপাদন হ্রাস পেলেও বাংলাদেশে গত দেড় দশকে ইলিশ উৎপাদন প্রায় তিনগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে আহরিত ইলিশের প্রায় ৭৫% বাংলাদেশে, ১৫% ভারত ও মায়নামারে এবং থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ইরান ও ইরাকে অবশিষ্ট ইলিশ উৎপাদিত হয়ে থাকে।
তবে গত বছর দেশে যে প্রায় সোয়া ৫ লাখ টন ইলিশ আহরিত হয়েছে তার ৭০ ভাগই পাওয়া গেছে বরিশালে বিভাগের অভ্যন্তরীন ও উপক‚লীয় জলাশয় থেকে। গত দুই দশকে বরিশাল বিভাগে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে পায় ১৫০%-এরও বেশী।
অভিপ্রায়নি মাছ ইলিশ সারা বছর কমবেশী ডিম ছাড়লেও আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগে পড়েই গভীর সমুদ্র থেকে উপক’লের সাগর মোহনার ৪টি এলাকার প্রায় ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারে ডিম ছেড়ে আবার সাগরে ফিরে যায়। কিন্তু এবার ভাদ্রের মধ্যভাগ থেকে সাগর মোহনার নদ-নদীতে ইলিশের উপস্থিতি মৎস্য বিজ্ঞানী সহ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীলদের কিছুটা ভাবনায় ফেলেছে।

গত সপ্তাহখানেক ধরেই মেঘনা,তেতুলিয়া,বলেশ্বর ও আন্ধারমানিক সহ উপক’লের বিভিন্ন নদ-নদী মোহনায় মা ইলিশের ব্যাপক বিচরনে জেলেদের জালে ধরাও পড়ছে প্রচুর। তবে এবার করোনা সংকটে দক্ষিণাঞ্চল সহ সারা দেশেই ইলিশের চাহিদা কিছুটা কম থাকায় দাম পাচ্ছে না জেলেরা। বরিশাল, পটুয়াখালী,ভোলা ও পিরোজপুরের ইলিশের মোকামগুলো কিছুটা স্বরব হলেও বেচকেনা অন্য বছরের তুলনায় কম বলে জানিয়েছেন একাধীক মৎসজীবী। পাশাপাশি আর দিন কুড়ি পরেই আশি^নের বড় পূর্ণিমার আগের ৪ দিন থেকে ২২ দিনের জন্য ইলিশ আহরন ও বিপনন বন্ধ হয়ে যাবে। সে বিবেচনায় আড়তদাররা জেলেদের খুব একটা দাদন বা আগাম টাকাও ছাড় করছে না। ফলে টাকার যোগানের অভাবে বরফ, জ¦ালানী ও দৈনন্দিন খরচের টাকার অপ্রতুলতায় সাগর মোহনায় ছুটে গিয়ে ইলিশ আহরনে ততটা উৎসাহিত হচ্ছে না জেলেরা।
এর পরেও প্রতিদিন দক্ষিণাঞ্চলের আড়তগুলোতে নুন্যতম ১শ টন মা ইলিশ নিয়ে বিপুল সংখ্যক ট্রলার আসছে। মৎস অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক, মূল প্রজননকালের আগে অধিকহারে মা ইলিশ সাগর থেকে উঠে আসাকে ভাল লক্ষন নয় বলে মন্তব্য করলেও তেমন কিছু করনীয় নেই বলেও জানিয়েছেন। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক জানান, পরিবেশ ও জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে গত কয়েক বছরের মত এবারের বর্ষা মৌমুমেও দক্ষিণাঞ্চল সহ উপক’লীয় এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমান স্বাভাবিকের কম ছিল। ফলে তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের ১-৩ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশী থাকায় উপক’লীয় এলাকা সহ উপক’ল অভ্যন্তরের নদÑনদী সমুহের পানি স্বাভাাবিকের চেয়ে কিছুটা উত্বপ্ত। বৃষ্টির অভাবের সাথে তাপমাত্রার আধিক্যে নদ-নদী ও সাগর উপক’লের পনির উষ্ঞতা বেশী থাকায় ভড়া বর্ষার সময় সাগর থেকে এবার ইলিশ উঠে আসেনি। কিন্তু মূল প্রজনন কালকে সামনে রেখে ইলিশের আগাম উঠে আসাকে মেটেই ভাল লক্ষন মনে করছেন না এ মৎস্য বিজ্ঞনী। তিনিও ব্যাপক গবেষনার ওপর যোর দিয়েছেন।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন