আজ ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হয়। তবে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান বন্ধ হয়নি, তা এখনও অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ। গতকাল র্যাব সদর দফতরে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
আশিক বিল্লাহ বলেন, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান বর্তমানে স্থগিত আছে বলে মনে হতে পারে, কিন্তু সেটা চলমান আছে। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য হলো, সম্প্রতি অনলাইনভিত্তিক ক্যাসিনো অপারেশন। এ ধরনের অভিযানও পরিচালনা করে আসছে র্যাব। অর্থাৎ ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান বর্তমানেও অব্যাহত আছে।
তিনি বলেন, গত বছর দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে র্যাব। অভিযানে মোট ১১টি পরিচালিত হয়। এর মধ্যে রাজধানীতে আটটি ও চট্টগ্রামে তিনটি। এ অভিযানে আনুমানিক ২৭০ কোটি টাকার মতো এফডিআর ও নগদ টাকা উদ্ধার হয়। হঠাৎ করেই শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযানে একে একে ধরা পড়ে ক্ষমতাসীন দলের অনেক বড় নেতা। ক্যাসিনো অভিযানে ৩২টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। আদালত ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে ১৪টি মামলা তদন্ত করার জন্য দায়িত্ব পায় র্যাব। ১৪টি মামলার মধ্যে ১৩টি মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়েছে। বাকি একটি মামলা আদালতের নির্দেশক্রমে চার্জশিট স্থগিত আছে। আশিক বিল্লাহ বলেন, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নিয়মিত মামলা করা হয়।
ক্যাসিনোকাÐে গ্রেফতার সম্রাট ও জি কে শামীমদের মতো গডফাদার বা তাদের প্রশ্রয়দাতাদেরও চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে বলে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হলেও কার্যত দেখা যায়নি। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আশিক বিল্লাহ বলেন, মূলহোতা বা পৃষ্ঠপোষক এরকম একটি কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমেও এসেছে, যা র্যাবের নজরে আসে। এখানে মূলত র্যাব পরিষ্কার করতে চায়, ফৌজদারি অপরাধভিত্তিক যে বিষয়গুলো থাকে সেগুলোতে র্যাব চার্জশিট দাখিল করেছে। চার্জশিট দাখিল হওয়ার পর পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। বিচার প্রক্রিয়ায় যদি এরকম কোনোকিছু উপস্থাপিত হয় সেটা আদালতের নির্দেশক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অনলাইন ক্যাসিনো কয়টা গ্রæপ অথবা কারা কারা পরিচালনা করছে তাদের সম্পর্কে কোনো তথ্য র্যাব জেনেছে কি-না, জানতে তিনি বলেন, মূলত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অনলাইনভিত্তিক ক্যাসিনো সেটি র্যাবই সর্বপ্রথম আলোচনায় নিয়ে আসে এবং এর মূল আসামি কারা হেফাজতে আছে। এছাড়া বর্তমানে ছোটখাটো অভিযোগ আসে। কিন্তু সেগুলো কোনো বড় গ্রæপ নয়, ছোটখাটো বিদেশি ডোমেইন থেকে মূলত এগুলো পরিচালিত করা হয়। এরকম বেশকিছু বিষয় র্যাবের নজরে এসেছে এবং সেসব বিষয় নিয়েও র্যাব কাজ করছে বলে জানান র্যাবের ওই কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর প্রথম দিনই রাজধানীর ফকিরাপুলের ইয়াংমেনস ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় গুলশানের বাসা থেকে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ৬ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের সীমান্ত এলাকা থেকে র্যাব গ্রেফতার করা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী স¤্রাটকে। শুদ্ধি অভিযানের গণপূর্তের ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম, মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক মো. লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনো পরিচালনাকারী এনামুল হক আরমান, কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ শফিফুল আলম ফিরোজ, অনলাইন ক্যাসিনোর প্রধান সমন্বয়কারী সেলিম প্রধান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান, মোহাম্মদপুরের ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা ময়নুল হক মনজুকে গ্রেফতার করা হয়। তবে ক্যাসিনো অভিযান শুরুর পর অনেকেই গা ঢাকা দেন। কেউ কেউ থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতে আত্মগোপন করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন