ভারতের উজান থেকে ঢল বেড়েই চলেছে। গতকাল রোববার পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র প্রধান এই তিন অববাহিকার নদ-নদীতে পানি একযোগে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের নদ-নদীসমূহের ৬৪টি পয়েন্টে পানি বেড়েছে। এরমধ্যে যমুনা, ধরলা, করতোয়া, আত্রাইসহ ৯টি নদ-নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দেশের উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, অরুণাচল, সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন হিমালয় পাদদেশীয় অঞ্চলসমূহে ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে তিব্বতসহ চীন, নেপাল ও ভারতের বিহারেও অতিবৃষ্টি হচ্ছে।
উজানে ভারত গঙ্গায় ফারাক্কাসহ অনেক বাঁধ ও ব্যারেজ একযোগে খুলে দিয়েছে। এতে করে উজানের ঢল-বান আসছে তীব্র বেগে। তাছাড়া বৃষ্টিবাহী মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ অনেক জায়গায় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ, কোথাও কোথাও অতিবৃষ্টি ঝরছে। এরফলে প্রধান নদ-নদীসমূহের উজান অববাহিকা থেকে ভাটি পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক জায়গায় নদ-নদী ফুঁসে উঠেছে। আবারও সর্বত্র তীব্র আকার ধারণ করছে নদীভাঙন।
ভারতের উজানের ঢলে গতকাল যমুনা, ধরলা, যমুনেশ^রী, করতোয়া, গুড়, আত্রাই, আপার আত্রাই, টাঙ্গন ও সোমেশ^রীসহ ৯টি নদ-নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাছাড়া বিভিন্ন নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি নিচে অবস্থান করছে। দীর্ঘস্থায়ী এবারের বন্যায় দেশের অনেক এলাকা পঞ্চম ও চতুর্থ দফায় বন্যা কবলিত হচ্ছে। প্রায় মধ্য-আশি^নে অর্থাৎ শরৎ ঋতুর শেষ দিকে এসেও অকাল বন্যার ধাক্কায় দিশেহারা অগণিত মানুষ। সেই সাথে বন্যার্ত অসংখ্য মানুষের দুঃখ-কষ্ট, দুর্ভোগ বাড়ছেই।
পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভ‚ঁইয়া গতকাল জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানির সমতল স্থিতিশীল বা অপরিবর্তিত রয়েছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেতে পারে। অন্যদিকে যমুনা নদে পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে। যমুনায় পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। পদ্মা নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল থাকতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র আরও জানায়, দেশের নদ-নদীর ১০১টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৬৪টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৩২টিতে হ্রাস পায়। ৫টি পয়েন্টে পানি অপরিবর্তিত থাকে। ৯টি নদ-নদী ৯টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার নদ-নদীর ৬০টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৩৬টিতে হ্রাস পায়। শুক্রবার ৬৬টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৩২টিতে হ্রাস পায়। বৃহস্পতিবার নদ-নদীসমূহের ৫৫টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৪৪টি পয়েন্টে হ্রাস পায়।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে গতকাল বিকেল পর্যন্ত নদ-নদী প্রবাহের সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তে জানা গেছে, যমুনা নদের পানি হ্রাস, স্থিতিশীল হয়ে আবারও বৃদ্ধির দিকে রয়েছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। কুড়িগ্রাম জেলায় ধরলা নদীর পানি আরও বেড়ে দিয়ে বিপদসীমার ৩৩ সে.মি. উপরে, বদরগঞ্জে যমুনেশ^রী নদীর পানি আরও বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার ৪৭ সে.মি. উপরে, চক রহিমপুরে করতোয়া নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৭ সে.মি. উপরে, ঠাকুরগাঁওয়ে টাংগন নদীর পানি বিপদসীমা বরাবর, সিংড়ায় গুড় নদীর পানি আবারও কিছুটা বেড়ে বিপদসীমার ৭২ সে.মি উপরে, দিনাজপুরে আপার আত্রাই নদী বিপদসীমার ৮ সে.মি উপরে, নওগাঁ জেলার আত্রাইয়ে আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ২৫ সে.মি. উপরে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কলমাকান্দায় সোমেশ^রী নদীর পানি বিপদসীমার ১০ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থানে থাকা নদ-নদীসমূহের মধ্যে উত্তরাঞ্চলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কাউনিয়া পয়েন্টে গতকাল বিপদসীমার ১৩ সে.মি. নিচে, গাইবান্ধায় ঘাগট নদী বিপদসীমার ৬ সে.মি. নিচে প্রবাহিত হয়। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া ও চিলমারী পয়েন্টে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার যথাক্রমে ৭৮ ও ৩৫ সে.মি. নিচ দিয়ে বইছে। মধ্যাঞ্চলে ধলেশ^রী নদীর পানি অপরিবর্তিত থেকে এলাসিন ঘাটে বিপদসীমার মাত্র ৪ সে.মি. নিচে রয়েছে। নেপাল ও ভারতের বিহারে অতিবৃষ্টি এবং সেই সঙ্গে ফারাক্কা বাঁধের গেইট খুলে দেয়ার ফলে গঙ্গা-পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গোয়ালন্দে পদ্মা বিপদসীমার ১৪ সে.মি. নিচে রয়েছে।
উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে মাঝারি থেকে ভারী ও অতি ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায়ও সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় চেরাপুঞ্জিতে ১৬৩ মিলিমিটার। এছাড়া জলপাইগুড়িতে ৮০, কৈলাশহরে ৫৯ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে।
সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে দেশের অনেক জেলায় মাঝারি থেকে ভারী ও অতি ভারী বর্ষণ হচ্ছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় পঞ্চগড়ে ৩১৫ মি.মি., রংপুরে ২৬৫, ডালিয়ায় ২৫৫, কুড়িগ্রামে ১৫৬, লালাখালে ১৪১, দিনাজপুরে ১২৪, ঠাকুরগাঁওয়ে ১২০, জাফলংয়ে ৮৮, কাউনিয়ায় ৭৮ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন