উৎপত্তিস্থল ও উজানে তিব্বতসহ চীন, ভারতে অতিবৃষ্টিতে ভাটির দিকে তীব্র ঢলের ফলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পানির সমতল আবারো বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা অব্যাহত থাকতে পারে আগামী ৭২ ঘণ্টায়ও। গতকাল (মঙ্গলবার) সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তিস্থল চীনে স্যাংপো নদীর পানি তীব্র বেগে বেড়েই চলেছে।
চীন পানির চাপ কমাতে ভারতের দিকে সিয়াং-ব্রহ্মপুত্র নদে ব্যাপকহারে পানি ছেড়ে দিয়েছে। এতে করে ব্রহ্মপুত্রের উজানে ভারতের সিয়াং নদী অববাহিকা এলাকার অরুণাচল প্রদেশের তিনটি জেলায় এবং ভাটিতে অবস্থিত রাজ্য আসামে বন্যা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের উজান থেকে অতিরিক্ত পানির প্রভাব ভাটিতে বাংলাদেশেও পড়তে পারে এবং দেশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
টানা ভারী বর্ষণের কারণে ব্রহ্মপুত্রের উৎসে চীনের স্যাংপো নদীর পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। এক পর্যায়ে গত সপ্তাহে ভারতের অরুণাচলে সিয়াং ও আসামে ব্রহ্মপুত্র নদের দিকে পানি ছেড়ে দেয় এবং চীন এ বিষয়ে ভারতকে আগাম তথ্য জানায়। উজানের পানি ধেয়ে আসায় সিয়াং-ব্রহ্মপুত্র নদে স্রোত অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে চলে। এ কারণে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করছে অরুণাচল ও আসাম রাজ্য প্রশাসন। অরুণাচল ও আসামে আগাম সতর্কতা বহাল রয়েছে।
চীনা সরকারী সূত্র জানায়, অতি বর্ষণের কারণে স্যাংপো নদী পানিতে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। নদীতে পানিবৃদ্ধি গত ৫০ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে। পানির চাপে ঢল নামছে উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচল ও আসাম হয়ে ভাটিতে বাংলাদেশের দিকে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের গত ৩১ আগস্ট প্রকাশিত দশ দিনের সম্ভাব্য পূর্বাভাসে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পানির সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। ঢাকার চারপাশের নদ-নদীসমূহের পানির সমতলও বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে পূর্বাভাসে বলা হয়, নদ-নদীর বিপদসীমা অতিক্রমের সম্ভাবনা নেই।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, গতকাল দেশের ৯৪টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৪৯টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি এবং ৩৬টিতে হ্রাস পায়। গত সোমবার ৫৮টি পয়েন্টে পানি এবং ৩০টিতে হ্রাস পায়। গত রোববার ৪৬টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৪০টিতে হ্রাস পায়। গত শনিবার ৪১টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৪৬টিতে হ্রাস পায়। গত শুক্রবার ৩২টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৫৪টিতে হ্রাস পায়। সবক’টি নদ-নদীর প্রবাহ এখনো বিপদসীমার নিচে রয়েছে।
গতকাল ব্রহ্মপুত্র নদের পানির সমতল দু’টি পয়েন্টে এবং যমুনা নদ ৬টি পয়েন্টে স্থানভেদে ১০ থেকে ১৭ সেন্টিমিটার করে বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
বন্যা কবলিত আসামের চার জেলা
উৎসে চীনের স্যাংপো নদীর পানি ছেড়ে দেয়ার ফলে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ভারতের অংশে সিয়াং-ব্রহ্মপুত্র নদপাড়ে বন্যা কবলিত হয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতের আসামের চারটি জেলা। এতে করে বাংলাদেশেও পড়তে পারে অরুণাচল-আসামে পানি বৃদ্ধির চাপ। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানায়, চীনের স্যাংপো নদীর ঢলের পানির তোড়ে তলিয়ে গেছে ভারতের আসাম রাজ্যের চার জেলা। বন্যা কবলিত হয়েছেন ১২ হাজারেরও বেশি লোক। আসামের নিম্নাঞ্চলগুলো একে একে প্লাবিত হচ্ছে।
আসাম রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এএসডিএমএ) বলছে, ব্রহ্মপুত্রের পানিতে আসামের ধেমাজি, বিশ্বনাথ, গোলাঘাট ও শিবসাগর জেলার ৪৮টি গ্রামের কমপক্ষে ১২ হাজার ৪২৮ জন লোক এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অন্তত ৬৭৬ হেক্টর জমি তলিয়ে গেছে। তবে এখনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। বন্যায় চার জেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ধেমাজি জেলায়। বন্যা কবলিত লোকজনকে নিরাপদ উঁচু জায়গায় সরিয়ে নিচ্ছেন ত্রাণকর্মীরা। বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ শুরু হয়েছে।
এদিকে গত সোমবার বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর মাসিক পূর্বাভাসে বলেছে, চলতি সেপ্টেম্বর (ভাদ্র-আশ্বিন) মাসে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে। এ মাসের শেষ দুই সপ্তাহে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বা বৃহত্তর সিলেটে এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল তথা বৃহত্তর চট্টগ্রামে হতে পারে সাময়িক এ বন্যা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন