উত্তর জনপদের অন্যতম প্রধান নদ যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে করে যমুনা পাড়ের বন্যার্তদের দুঃখ-কষ্ট ও দুর্ভোগ আবারো বৃদ্ধি পেয়েছে। পানিবৃদ্ধির সাথে সাথে জনমনে নদীভাঙনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে বৃহত্তর সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা ও খোয়াই নদীর পানি ভারতের উজানের ঢলের তারতম্যের কারণে কখনও বাড়ছে, কখনও হ্রাস পাচ্ছে। গতকাল (মঙ্গলবার) ৬টি নদ-নদী ৯টি পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে ঢল-বর্ষণ কমলে আকস্মিক এই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
উত্তরের জনপদের নদ যমুনায় এখনও বাড়ছে পানির সমতল। গতকালও যমুনার দু’টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপরে পানি আরও বৃদ্ধি পায়। একটি স্থানে ঠিক বিপদসীমা বরাবর রয়েছে। তবে উত্তরে প্রধান নদ ব্রহ্মপুত্রে সোমবার পর্যন্ত পানি বাড়লেও গতকাল ছিল কিছুটা কমতির দিকে। তবে উত্তর জনপদের বিভিন্ন নদীতেও পানি বৃদ্ধির দিকে রয়েছে।
পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তে জানা যায়, যমুনা নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার কারণে সিরাজগঞ্জে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার, কাজীপুরে ১১ সেমি উপর দিয়ে এবং সারিয়াকান্দিতে বিপদসীমার ঠিক বরাবর প্রবাহিত হচ্ছিল। আর বাহাদুরাবাদে মাত্র ১৩ সেমি নিচে রয়েছে। গত সোমবার যমুনা দু’টি পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করে। অপরদিকে ব্রহ্মপুত্র নদে পানির সমতল কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রামে চিলমারী পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ৩৬ সেমি নিচে দিয়ে প্রবাহিত হয়। সোমবার ছিল ২৭ সেমি নিচে। পাউবোর নদ-নদী বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাসে জানা গেছে, যমুনা নদের পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এরপর থেকে ক্রমেই হ্রাস পেতে পারে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানির সমতল হ্রাস আগামী ৪৮ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানির সমতল হ্রাস পেতে পারে এবং এ সময় কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। গঙ্গা নদীর পানির সমতল হ্রাস আগামী ৭২ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। আর পদ্মায় পানির সমতল অপরিবর্তিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে মধ্যাঞ্চলে ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইলে এলাসিনঘাটে ধলেশ্বরী নদীর পানি আরও কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার মাত্র তিন সেমি নিচে দিয়ে প্রবাহিত হয়।
বৃহত্তর সিলেটে সুরমা নদীর পানি আরও হ্রাস পেয়েছে। তবে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। সুরমা নদী কানাইঘাট পয়েন্টে পানি হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ১৪ সেমি উপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। কুশিয়ারা নদী অমলশীদ, শেওলা ও শেরপুর-সিলেট এই তিনটি পয়েন্টে বিপদসীমার যথাক্রমে ১১, ২২ ও ৮ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। হবিগঞ্জে খোয়াই নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় অনেক হ্রাস পেয়েছে। হবিগঞ্জে বিপদসীমার ৫০ সেমি নিচে নেমেছে এবং বাল্লাহ পয়েন্টে ৩৭ সেমি উপরে রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় তিতাস নদীর পানি কিছুটা হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ৮ সেমি উপরে রয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানিয়েছে, দেশের নদ-নদীসমূহের ৯০টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল পানি বৃদ্ধি পায় ৪৬টিতে ও হ্রাস পায় ৩৯টিতে। গত সোমবার পানি বৃদ্ধি পায় ৪৫টি ও হ্রাস পায় ৪২টি স্টেশনে। আর গতকাল ৬টি নদী ৯টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, যা আগের দিনে ছিল ১০টিতে। গত রোববার পানি বৃদ্ধি পায় ৩৯টি পয়েন্টে, হ্রাস পায় ৪৮টি এবং ৬টি স্থানে বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হয়।
গতকাল দেশের নদ-নদী অববাহিকায় বিভিন্ন স্থানে ভারী বর্ষণ হয়েছে। এরমধ্যে সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বান্দরবানে ৯০ মিলিমিটার, যশোরে ৬৩ মিমি, ভাগ্যকুলে ৫৭ মিমি ও পরশুরামে ৪৫ মিমি মিমি বৃষ্টিপাত হয়। পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ সূত্রে জানা গেছে, হিমালয় পাদদেশীয় অঞ্চল চীন তিব্বত, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, মেঘালয়, অরুণাচলে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারী বর্ষণ হয়। গতকালও বেশকিছু অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত ভারী বর্ষণ হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশের অনেক স্থানে ভারী বর্ষণ হয়েছে। এরফলে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়। তবে ভারতের উজানের ঢল এবং দেশের অভ্যন্তরে বৃষ্টিপাত কমে গেলে আকস্মিক এই বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা নেই।
যমুনায় আবারও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিরাজগঞ্জে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর তীরবর্তী পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলে আবারো বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে নতুন নতুন অঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। সদ্য রোপনকৃত রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসল ডুবে গেছে। এনিয়ে সিরাজগঞ্জে তৃতীয় দফায় বন্যায় সংশ্লিষ্ট কৃষকদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। বন্যা ও দফায় দফায় বর্ষণে বিশেষ করে চর ও দূর্গম অঞ্চলে অনেক পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে। বর্তমানে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১৭ সেঃ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদীর তীরবর্তী শাহজাদপুর, চৌহালী, বেলকুচি, কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের অঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাট বাজারসহ বহু বাড়িঘর ডুবে গেছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ ইমাম হাসান জানান, প্রবল বর্ষণও পাহাড়ী ঢলে যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১৭ সেঃ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদীর তীরবর্তী ৫টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। অনেক স্থানে ভাঙন প্রতিরোধে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। ভারতের মেঘালয় ও আসামে প্রবণ বর্ষণে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। একারণে সিরাজগঞ্জে তৃতীয় দফায় বন্যার আশংকা করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন