মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভয়াবহ তাপপ্রবাহের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:১৭ পিএম

সম্প্রতি অ্যাণ্টার্কটিকার ‘লার্সেন-সি’ আইস শেল্ফের ‘এ-৬৮’ হিমশৈল ভেঙ্গে পড়ার পরে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে অশনি সংকেত দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও ‘ভয়ঙ্কর’ এক সতর্কবার্তা বিজ্ঞানীদের। এ বার তারা আশঙ্কা প্রকাশ করলেন ভয়াবহ তাপপ্রবাহের। আর এই তাপপ্রবাহের মধ্যে পড়তে চলছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, উত্তর ভারত এবং তার সংলগ্ন এলাকা।

সম্প্রতি আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির একদল গবেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এই শতাব্দীর শেষে ভয়াবহ তাপপ্রবাহের মূল কারণ হতে চলেছে–কার্বন নির্গমনের হার সন্তোষজনক ভাবে না কমা। পাশাপাশি মাটির স্বাভাবিকতা নষ্ট হওয়াকেও অন্যতম কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন তারা। গবেষকরা জানাচ্ছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সিন্ধু-গাঙ্গেয় অববাহিকা অঞ্চলে কৃষিকাজ মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ওই এলাকায় জলস্তর শুকিয়ে যাবে। তীব্র খাদ্যাভাব দেখা দেবে। উষ্ণতা বাড়বে বাংলাদেশসহ পাকিস্তান ও ভারতের কয়েকটি রাজ্যে।

এ বিষয়ে পুণের ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের গবেষক ডক্টর এ কে শ্রীবাস্তব বলেন, ভারতে স্বাধীনতার পর ১৯৫১ সালে মাথাপিছু কৃষিজমির পরিমাণ ছিল ০.৪৮ হেক্টর। ২০০১ সালে তা দাঁড়ায় ০.১৪ হেক্টরে। তিনি বলেন, ‘এই অত্যাধিক জনসংখ্যার চাপ জমির উর্ব্বরতা, স্থানীয় জলবায়ুর উপর মৃত্তিকার প্রভাব ও সামগ্রিক খাদ্য সুরক্ষাকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’ তিনি জানান, বর্তমানে ভারতে মাথাপিছু বন সম্পদের পরিমাণ মাত্র ০.৫ হেক্টর, যেখানে আন্তর্জাতিক গড় মান ২ হেক্টর। বন সম্পদের এই স্বল্পতা বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যহীনতাকে আরও প্রকট করে দিচ্ছে।

বিজ্ঞানীলা বলছেন, অত্যাধিক জনসংখ্যার চাপে স্বাভাবিক পানিচক্র নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ওই সব এলাকায় পানিতে আর্সেনিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। এ জন্যই পাঞ্জাব-তৎসংলগ্ন অঞ্চলের মানুষজনের মধ্যে আর্সেনিক আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণ। বিশ বছর আগের তুলনায় জনসংখ্যা কয়েকগুণ বাড়লেও, বাড়েনি জমির পরিমাণ। জনসংখ্যার অত্যাধিক চাপের জন্য এক ফসলি, দোফসলি জমির উপর চাপ বেড়েছে। পাশাপাশি, পানির অভাব তৈরি হচ্ছে।

পরিসংখ্যানে জানা গেছে, ভারতে ২০১১ সালে মোট পানির চাহিদা ছিল ৮২ হাজার কোটি কিউবিক মিটার। ২০৫০ সালে এই চাহিদা পৌঁছাবে ১ লাখ ৪৫ হাজার কিউবিক মিটারে। এর একটা বিপুল পরিমাণ খরচ হবে কৃষিকাজে। আর ওই বিপুল পরিমাণ পানির চাহিদা মেটাতে গেলে নষ্ট হবে মাটির নিচের পানিচক্র।

গবেষকরা উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরেছেন উত্তর চীনের প্রসঙ্গ। তাদের মতে, ১৯৪৯ সালের বিপ্লবের পর গোটা বিশ্বে একা হয়ে গিয়েছিল মাও সে তুং-এর দেশ। সেই পরিস্থিতিতে দ্রুত নিজেকে সব দিক থেকে ‘শ্রেষ্ঠ’ করে তুলতে লড়াই শুরু হয় চীনে। ফল স্বরূপ, কয়েক বছরের মধ্যেই চীনে কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে। কিন্তু, সেই ঘটনার ‘কুফল’ ভুগতে হচ্ছে বর্তমান প্রজন্মকে। সে সময় মাটির উপর অত্যাধিক ‘চাপ’ দেয়ার ফলে নষ্ট হয়ে গিয়েছে জমির স্বাভাবিক চক্র। নষ্ট হয়েছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। প্রতি বছর চীনে (বিশেষ করে উত্তর প্রান্তে) বন্যা, খরা কখনও বা অত্যাধিক তুষার পাতের জন্য এই প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়াকেই দায়ী করা হচ্ছে।

এক আর্ন্তজাতিক গবেষণায় বলা হয়েছে, স্বাভাবিক রোগ-বালাইয়ের তুলনায় ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে ২০২১ সালে নিরক্ষীয় অঞ্চলের নিকটবর্তী দরিদ্র দেশগুলোতে বেশি মানুষের মৃত্যু হবে। সমৃদ্ধ দেশগুলোতে এয়ার কন্ডিশনার ও তাপের স্থিতিস্থাপক অবকাঠামোর কারণে মৃত্যুহার কম হলেও এ জন্য তাদেরকে আরও বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে। সূত্র: এবিপি, লাইভমিন্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Visvarup chakravarti ১ অক্টোবর, ২০২০, ৩:১৮ পিএম says : 1
ভারত, বাংলাদেশ কি ভাবছেন?!কিছু ভাবছেন কি?
Total Reply(0)
মোঃ ইকবাল হোসেন ২ অক্টোবর, ২০২০, ৭:৩৪ পিএম says : 0
নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহার না করা। অঅপরিকল্পিত নগরায়ন অতি মুনাফার লোভ আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের বেঁচে থাকাকে কঠিন করে দেবে। ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশকে এখনই এব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে না হলে কপালে খারাবী আছে।
Total Reply(0)
মোঃ ইকবাল হোসেন ২ অক্টোবর, ২০২০, ৭:৩৫ পিএম says : 0
নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহার না করা। অঅপরিকল্পিত নগরায়ন অতি মুনাফার লোভ আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের বেঁচে থাকাকে কঠিন করে দেবে। ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশকে এখনই এব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে না হলে কপালে খারাবী আছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন