বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মিন্নী সহ ৬ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত,এ ছাড়াও ৪ জনকে খালাসের আদেশ প্রদান করেছেন।ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন আয়শা আক্তার মিন্নী,রিফাত ফরাজী, মোহাইমিনুল ইসলাম শিফাত,রাব্বী আকন,টিকটিক হ্রদয়,ও মোহাম্মদ হাসান ।
খালাস প্রাপ্তরা হচ্ছেন পলাতক মো: মুসা,রাফিউল ইসলাম রাব্বি মো: সাগর ও সাইমুন।
হত্যা কান্ডের ১ বছর ৩মাস ৪ দিনে আজ ৩০ সেপ্টেম্বর বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষনা করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো.আছাদুজ্জামান।
এদিকে রাস্ট্রপক্ষের আইনজীবী ভূবন চন্দ্র হালদার বলেন,ফাসির দন্ড প্রাপ্ত আসামীদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমানিত হওয়ায় ফাসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড সহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ হয়েছে।রায়ে আমরা খুশী,তবে রায়ের পূর্ন কপি পাওয়ার পরে যদি মনে করি খালাসের আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা দরকার.তবে আমরা পরবর্তীতে পদ:ক্ষেপ গ্রহন করবো।
এ দিকে মিন্নীর বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, আইনের প্রতি আস্থাশীল আমাদের ভক্তি শ্রদ্ধা আছে,কিন্তু আমাদের প্রতি অন্যায় অবিচার করা হয়েছে,আমরা উচ্চ আদালতে যাব।
আসামী পক্ষে মিন্নীর আইনজীবী বলেন,মামলা হলে রায় হবে,রায় মেনে নিতে হবে,আমরা রায়ে সংক্ষুদ্ধ ,আমরা সাজাপ্রাপ্তদের পরিবারকে পরামর্শ দেবো,দ্রুত সই মহর তুলে উচ্চ আদালতে যেন আপীল করেন।
রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ বলেন,রায়ে আমি যথেষ্ট খুশী ,কোন নিরপরাধ ব্যক্তি সাজা পাবে এটা তিনি কখনই চাইনি। আদেশ যেটা হয়েছে এটা যেন দ্রুত কার্যকর হয়।
বিকেল তিনটার দিকে ফাসির অদেশ প্রাপ্ত পুরুষ ৫ জনকে প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।এর আগে মিন্নীকে পৃথক ভাবে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের গেটে কিশোর গ্যাং নয়ন বন্ড বাহিনী প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যা করে কলেজে ছাত্র রিফাত শরীফকে। এ ঘটনায় নিহত রিফাত শরিফের বাবা দুলাল শরীর বাদি হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫/৬ জন অজ্ঞাত আসামির নামে ২৭ জুন বরগুনা থানায় এজাহার দায়ের করেন। তার দায়েরকৃত মামলায় নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি ছিল এক নম্বর সাক্ষী। পরবর্তীতে পুলিশ তদন্তে এ হত্যাকান্ডের প্ররোচনার সাথে মিন্নির সম্পৃক্ততা পেয়ে তাকে আসামি করে এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। রিফাত হত্যাকান্ডের ২০ দিন পর ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রধান সাক্ষী থেকে মিন্নি আসামি হয়ে যাওয়ায় মামলাটি মোড় নেয় অন্যদিকে।
রিফাত হত্যাকান্ডের দুই মাস ছয়দিন পর গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ভাগে বিভক্ত করে দুটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এদের মধ্যে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক আসামি এবং ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামী। প্রাপ্ত বয়স্ক আসামীদের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর জন্য ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত চার্জ গঠন করেন।
পরবর্তিতে ৮ জানুয়ারি থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করে ২৫ ফেব্রæয়ারি এ মামলার ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ স¤পন্নের মধ্য দিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিরুদ্ধের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করেন আদালত। ১৬ সেপ্টেম্বর উভয়পক্ষের যুক্তি-তর্ক শেষে প্রাপ্ত বয়স্ক ১০ আসামীর রায় ঘোষনার জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করেন আদালত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন