অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তৃতীয় দফাল বন্যায় শেরপুর জেলার ৩টি উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে পানি না কমায় আমন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখন আর আমন ধানের চারা রোপণ করার সময়ও নাই। অনেক কৃষক ব্যাংক ঋণ ও দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে আবাদ করলেও তাদের স্বপ্নের ফসল বন্যার পানিতে ক্ষতি হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে তারা।
অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও ভোগাই এবং মহারশী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধ ভেঙ্গে সৃষ্ট তৃতীয় দফার বন্যায় শেরপুর জেলার ৩টি উপজেলার আটটি ইউনিয়নের অন্তত সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমির আমন আবাদ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ ইউনিয়ন গুলোর মধ্যে রয়েছে, শেরপুর সদর উপজেলার ধলা, নকলা উপজেলার নকলা সদর, নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি, যোগানিয়া, কলসপাড় ও মরিচপুরান, ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতিবান্দা ও মালিঝিকান্দা ইউনিয়ন। মহারশী ও ভোগাই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধ ভেঙ্গে সৃষ্ট বন্যার পানিতে অন্তত সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমির আমন ধানের ফসল ডুবে গেছে।
নকলার ধনাকুশার কৃষক জামের আলী জানান, আমরা এর আগে আমন ধানের চারা নষ্ট হলে, অনেক কষ্টে আমন চারা সংগ্রহ করে আমন ধানের আবাদ করি। এখন আবার এ ফসল ঢলের ও বৃষ্টির পানিতে নষ্ট করছে। একই এলাকার জিয়াউর রহমান জানান, আমরা এখন কির করবো। আমাদের তো কোন উপায় নেই। নালিতাবাড়ীর তালুকপাড়ার কৃষক
শহিদুল ইসলাম জানান, ভোগাই নদীর ভাঙ্গনে এবার পানি এসে আমাগো সব শেষ করে দিলো। এখন আমরা কি করবো। আমাদের তো আর উপায় নেই। এখন সরকারের সাহায্য ছাড়া আমাদের চলার পথ নেই।
অন্য সময় পাহাড়ী ঢলের পানি দ্রুত নেমে গেলেও এবার দীর্ঘসময়েও পানি না কমায় কৃষকের স্বপ্নের ফসল পানির নীচে পচে যাচ্ছে। এর আগে বন্যায় আমনের বীজতলার ক্ষতি হওয়ায় কৃষকরা নানা জায়গা থেকে আমন চারা সংগ্রহ করে তা রোপন করে। কিন্তু এখন সময়ও নেই আমন চারাও নেই। ফলে এবছর আমনের আবাদ করা আর সম্ভব নয়। এতে দিশেহারা কৃষক।
একই এলাকার কৃষক আফজাল ও খোকন জানান, এর আগে ঢলের পানি সকালে আসতো বিকেলে চলে যেতো। কিন্তু এবার পানি আইসা আর যাচ্ছে না। দুই সপ্তাহেও পানি কমে নাই। তাই যেসব ধান ডুবে গেছে, এসব ধান আর টিকবে না। এখন আমাদের আর কিছুই করার নেই।
বিভিন্নস্থান থেকে ধার দেনা করে ধানের আমন আবাদ করেছে কৃষক। কিন্তু ধানের আবাদ নষ্ট হওয়ায় এখন তারা কি দিয়ে তা পরিশোধ করবে। এ জন্য তারা সরকারের সহায়তা চায়।
কৃষানী জহুরা ও রুনা বেগম জানান, আমরা ঋণ করে আমন ধানের আবাদ করেছি। এখন ফসল তো নষ্টই হলো। আমরা কিভাবে ঋণ পরিশোধ করমু আর খামুই কি।
এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড: মুহিত কুমার, জানান, পানি নেমে গেলে কৃষকরা আগাম জাতের সবজীর আবাদ করে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।
স্থানীয় কৃষকসহ কৃষিবিদরা জানান ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা করে কৃষি পূনর্বাসনের আওতায় সহায়তা করা প্রয়োজন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন