যশোর শহরে ব্যাংকের সামনে দিনে দুপুরে বোমা ফাটিয়ে এবং একজনকে ছুরিকাঘাত করে ১৭ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় জড়িত ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। উদ্ধার ছিনতাইকৃত টাকার অংশবিশেষ। পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন পিপিএম এর কঠোর মনোভাবে ২৪ঘন্টার মধ্যেই ছিনতাইকারী আটক ও টাকা উদ্ধারের ঘটনা যশোরের বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। এসপি তার সকল উইংকে কাজে লাগিয়ে নিজে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করে যশোরে একের পর এক সাফল্য দেখিয়ে চলেছেন।
বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে চাঞ্চল্যকর এই ছিনতাইয়ের ঘটনা নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার। তিনি জানান, পুলিশ ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ চিহ্নিত অপরাধীকে আটক করে। উদ্ধার করা হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৫শ’ টাকা, ২টি চাকু, ব্যাগ ও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল। চিহ্নিত আরও দু’জনকে আটকের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। একজন গডফাদারের ছত্রছায়ায় এই অপরাধীরা থাকে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে।
ব্রিফিংকালে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন পিপিএম বলেন, আরএন রোড এলাকার আগমনী মোটরস্’র মালিক ইকবাল হোসেনের মোটরপার্টস ও ফলের আড়তের ব্যবসা রয়েছে। তার ভাই এনামুল হক ফলের আড়তের ১৭ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দেয়ার জন্য যাচ্ছিলেন। এই আড়তের দীর্ঘদিন শ্রমিকের কাজ করতো টিপু। মাঝে মাধ্যেই এনামুল মোটরসাইকেলে করে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে যায়। বিষয়টি জানা ছিল তার। টিপুই এই টাকা লুটের পরিকল্পনা করে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পাশের ফল ব্যবসায়ী রাজ্জাক ফকির ওরফে জামাই রাজ্জাককে সাথে নেয়। জামাই রাজ্জাকই বাকী অপরাধীদের যুক্ত করে। পুলিশ সুপার জানান, ঘটনার সময় টিপু রাস্তার বিপরীত পাশে থেকে টাকা বহনকারী এনামুলকে সঙ্গীদের চিনিয়ে দেয়। এরপর তারা উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে ককটেল ফাটিয়ে মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়।
পুলিশের চৌকষ গোয়েন্দা পুলিশ এবং কোতোয়ালি পুলিশ অপরাধীদের সনাক্ত করে অভিযান শুরু করে। বুধবার বিকেল থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত সদরের ধর্মতলা, বসুন্দিয়া আলাদিপুর, বারান্দি মোল্লাপাড়া, সিটি কলেজ ব্যাটারিপট্টি ও পুুলিশ লাইন টালিখোলায় অভিযান চালিয়ে ৫জনকে আটক করে। টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়ে যাওয়ায় এদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৫শ’ টাকা। এছাড়াও ছিনতাইকালে ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল, ১টি স্কুল ব্যাগ ও ২টি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকেই হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন মামলার আসামি বলে জানিয়েছেন এসপি।
পুলিশ সুপার আশরাফ হোসেন জানান, পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী জামাই রাজ্জাক পিরোজপুরের কবির ফকিরের ছেলে। তার বিরুদ্ধে পিরোজপুর ও যশোরে একাধিক মামলা রয়েছে। যদিও সে ওই এলাকায় ফলের ব্যবসা করতো। এই জামাই রাজ্জাকসহ চিহ্নিত আরও দু’জনকে আটকের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এদের কাছেই বাকী টাকা রয়েছে। অপরাধীরা একজন হোয়াইট কালার ক্রিমিনাল বা গডফাদারের ছত্রছায়ায় থাকে। ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা পেলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
আটককৃতরা হলো, যশোর শহরের পুলিশ লাইন টালিখোলা এলাকার শফি দারোগার বাড়ির ভাড়াটিয়া ফরিদপুর জেলার মুনসুর মোল্যার ছেলে টিপু (২৪), শহরের বারান্দি মোল্লাপাড়া এলাকার রবিউল ইসলামের ছেলে সাঈদ ইসলাম ওরফে শুভ (২৪), ধর্মতলা হ্যাচারিপাড়া এলাকার রুহুল আমিনের ছেলে বিল্লাল হোসেন ওরফে ভাগনে বিল্লাল (২২), সিটি কলেজ ব্যাটারিপট্টি এলাকার নিজাম উদ্দিনের ছেলে রায়হান (২৮) ও পূর্ব বারান্দি মালোপাড়া এলাকার মুফতি আলী হুসাইনের ছেলে ইমদাদুল হক (২১)।
প্রেস ব্রিফিংকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন শিকদার, জেলা বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম পিপিএম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক’ সার্কেল গোলাম রব্বানি ও ডিএসবির অফিসার ইনচার্জ মারুফ আহম্মদ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন