শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

বিএসএফের গুলিতে তিন বাংলাদেশি নিহত, মহানন্দায় লাশ ভাসছে

শিবগঞ্জ( চাঁপাইনবাবগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০২০, ৫:৪৮ পিএম

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে মহানন্দা নদীতে ভাসছে বিএসএফের গুলিতে নিহত তিন বাংলাদেশির মৃতদেহ। গত ১ অক্টোবর গভীর রাতে বিএসএফের গুলিতে ওই তিন বাংলাদেশি নিহত হন বলে স্থানীয়রা জানান। এরপর থেকে ভোলাহাটের বজরাটেক আলীসাহাসপুর সীমান্তের মহানন্দা নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে ৭-৮ জনের একটি চোরাকারবারি দল ভোলাহাটের বজরাটেক আলীসাহাসপুর সীমান্তের ওপারে ভারতের সূখনগর সীমান্তে গরু আনতে যায়। এ সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী সূখনগর বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। কয়েকজন নদী সাঁতরে পালিয়ে এলেও গুলিবিদ্ধ হন ৩-৪ জন। এরপর থেকে ওই এলাকার জেলেদের নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি।
রোববার বিকালে জেলেদের বিছানো জাল তুলে আনার জন্য ১ ঘণ্টার সময় দেয় বিজিবি। জাল তুলতে গিয়ে মহানন্দা নদীর সীমান্তের আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলারের (৪১ ও ৪২) কাছে দুটি স্থানে পানির মধ্যে দুটি লাশ একসঙ্গে বাঁধা এবং অপর লাশটি ভাসমান অবস্থায় দেখতে পান জেলেরা। এ সময় আতঙ্কিত জেলেরা দ্রুত ফেরত আসেন।
স্থানীয় জেলে সানাউল হক, আমিন আলী, মোহন আলী বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে দুটি গুলির শব্দ আমরা শুনেছি। এরপর শুক্রবার সকাল থেকে স্থানীয় জেকে পোলাডাঙ্গা বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা আমাদের নদীতে মাছ ধরতে দেয়নি। গত রোববার এক ঘণ্টার মধ্যে আমাদের জালগুলো তুলে আনার অনুমতি দেয়।
জেলে আবদুল জলিল বলেন, জাল তুলে আনতে গিয়ে নদীর শেষ সীমানায় একটি লাশ ভাসতে দেখেছি।
জেলে সাদিকুল ইসলাম বলেন, নদীর শেষ সীমানায় বেগুনের ক্ষেতের পাশে দুটি লাশ একত্রে বাঁধা অবস্থায় দেখেছি। এরপরই ভয়ে দ্রুত ওই এলাকা থেকে চলে আসি।
এদিকে ভোলাহাটের কয়েকজন চোরাকারবারি নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে চোরাকারবারি দলের হোতা নামোপাঁচটিকরী গ্রামের সাজেদ আলীর ছেলে মিজানুর রহমান ইঞ্জিল (৩৫) ও একই এলাকার দুরুল হোদার ছেলে নুরু মোহাম্মদ ওরফে নুরুদ্দীন (২৮) নিখোঁজ রয়েছেন।
মিজানুর রহমান ইঞ্জিল ও তার পরিবার আত্মগোপনে রয়েছে। আর নুরুদ্দীনের পরিবারের দাবি কাউকে কিছু না জানিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি থেকে বের হয় নুরুদ্দীন।
নিখোঁজ নুরু মোহাম্মদ ওরফে নুরুদ্দীনের পিতা দুরুল হোদা এবং ভাই দেলোয়ার হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় চৌকিদারের মাধ্যমে জানতে পারি বিএসএফের গুলিতে নুরুদ্দীনের মারা গেছে। তারপর থেকে বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করেছি কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ পায়নি। এখন যে যাওয়ার সে তো চলে গেছে, যদি লাশটা ফেরত পেতাম তাহলে কাফন-দাফন দিতে পারলে শান্তি পেতাম। তবে কী কারণে তারা ভারতের সীমান্তে গিয়েছিল সে বিষয়ে তারা কোনো তথ্য দিতে পারেনি তারা।
ভোলাহাট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, বিএসএফের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনা শোনার পর নিখোঁজ নুরুদ্দীনের পিতার সঙ্গে আমি বিজিবি ক্যাম্পে যাই। সেখানে নিখোঁজের বিষয়টি অবহিত করলে বিজিবি বিষয়টি অনুসন্ধানের আশ্বাস দেয়।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৫৯ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহমুদুল হাসান জানান, ঘটনাটি জানার পর থেকে মহানন্দা নদীতে লাশ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা এ ধরনের কোনো ঘটনা জানা নেই বলে জানিয়েছে।
তিনি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর থেকেই আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। নিরাপত্তাজনিত কারণে আমরা বজরাটেক আলীসাহাসপুর সীমান্তে মহানন্দা নদীতে মাছ ধরা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন