শসা কে না পছন্দ করে। শসার দাম কম। সহজলভ্য। এখন প্রায় সারা বছর পাওয়া যায়। ডায়েটে একটি জনপ্রিয় খাবার শসা। শসা খেলে ক্ষুধা কম লাগে। শসা দিয়ে হয় রূপচর্চা। শসার আসলে গুনের শেষ নেই। শসায় ৯০ শতাংশেরও বেশি পানি। ক্যালরি নেই বললেই চলে। শসা পানি শুণ্যতা দুর করে। শরীরের মধ্যে জ্বলাপোড়া, ত্বকে অসস্থি, একটুখানি শসা কেটে ত্বকে ঘষে দিন। আরাম লাগবে। যদি নিয়মিত শসা খান, কিডনির পাথর হবে না। তাই বলা যায় দেহের বর্জ্যে অপসারণেও শসার ভুমিকা আছে।
শসায় আছে ভিটামিন এ, বি ও সি, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও শক্তি বাড়ায়। শসায় উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও সিলিকন আছে, যা ত্বকের পরিচর্যায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। এ জন্য ত্বকের পরিচর্যায় গোসলের সময় শসা ব্যবহার করা হয়। শসার সিলিকা চুল, নখকে সতেজ করে। খাদ্য হজমে শসা ভুমিকা রাখে। নিয়মিত শসা খেলে দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠ-কাঠিন্য দূর হয়। যারা ডায়েট করতে চান, তাদের খাদ্য তালিকায় শসা রাখতে হবে। হোক সালাদ কিংবা কাঁচা চিবিয়ে খাওয়া। চোখের জ্যোতি বাড়ায় শসা। ক্যান্সারের মত জটিল রোগ, তাও প্রতিরোধে শসার ভুমিকা আছে। শসায় সিকোইসোলারিসিরেসিনোল, ল্যারিসিরেসিনোল ও পিনোরেসিনোল নামক তিনটি আয়ুর্বেদিক উপাদান আছে। জরায়ু, স্তন ও মূত্রগ্রন্থিসহ বিভিন্ন স্থানে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমানোর সঙ্গে এই তিন উপাদানের জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। মুখে দুর্গন্ধ? এক টুকরো শসা জিহবার নিচে কিছুক্ষন রাখুন।
শসার প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য অংশে ৯৬% জলীয় অংশ, ০.৬ গ্রাম আমিষ, ২.৬ গ্রাম শ্বেতসার, ১৮ মিঃ গ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.২ মিঃ গ্রাম লৌহ, ক্যারোটিন ৪০ মাইক্রোগ্রাম, খাদ্যপ্রাণ সি ১০ মিঃ গ্রাম রয়েছে। ক্যালরি ২২ কিলো ক্যালরি আছে। শসা একটি ভাল মানের এন্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার। শসাতে কিছু পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেলস এবং আঁশ থাকে। শসা খাওয়ার সঙ্গে পানি খাওয়া উচিত নয়। যেসব ব্যক্তির অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে তাদের খাদ্য-তালিকায় শসা রাখা প্রয়োজন। শসায় প্রচুর মাত্রায় পানি থাকে।
শসা ওজন কমাতে সহায়ক খাবার। তাই বলে তিনবেলা শুধু শসা খাওয়া যাবে না। এতে শরীরের পুষ্টি উপাদান যতটুকু দরকার। তার অভাব হবে। বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিবে। ডায়টেশিয়ানরা ডয়েট চার্টে শসা রাখে। কিন্তু শসা তারা শুধু শসা খেয়ে ওজন কমাতে বলে না। অতিরিক্ত পরিমানে শসা খেলে বদহজম, গ্যাসের সমস্যাসহ পেট ফাঁপা, পেট ব্যাথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিন শুধু শসা খেলে শরীরে খুব খারাপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
সকালের নাস্তার পর, দুপুরের খাবারের সঙ্গে সালাদ হিসাবে,বিকালে নাস্তার সঙ্গে যেমন- টক দইয়ের সঙ্গে, রাতের খাবারের সঙ্গে শসা খেতে পারেন। খাবারের সঙ্গে শসা খেলে মজাই লাগবে। বিরক্তি আসবে না।
বিভিন্নভাবে শসা রূপ চর্চায় ব্যবহার করা হয়। শসার টুকরা ছেঁচে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ১৫ মিনিট পর ঠান্ড পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করুন এটি। ত্বক মসৃন ,কোমল হবে। ৩ টেবিল চামচ শসার রসের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ দুধের সর মিশিয়ে গলা ও মুখের ত্বকের লাগিয়ে রাখুন। ১৫ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি রুক্ষ ও শুষ্ক ত্বকের প্রাণ ফেরাবে। তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দেখা যায় বেশি। ৩ টেবিল চামচ শসার রসের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ বেসন ও ১ টেবিল চামচ বাটার মিল্ক মেশান। ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ভালো করে নেড়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। ৩০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দূর হবে ত্বকের অতিরিক্ত তেল।
১ টেবিল চামচ শসার রসের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ ডিমের সাদা অংশ ও ১ টেবিল চামচ দই মিশিয়ে রোদে পোড়া ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। রোদে পোড়া দাগ থাকলে দুর হয়ে যাবে। চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল দুর করতে চান, তাহলে ফ্রিজের ঠান্ডা শসা স্পাইস করে চোখের ওপর দিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। প্রতিদিন এভাবে ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে কমে যাবে ডার্ক সার্কেল।
জায়গা থাকলে আপনিও শসার অবাদ করতে পারেন। টবে, ড্রামে শসার গাছ লাগানো যায়। ছাদ কিংবা বেলকোনিতে হবে। মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত বীজ বপন করার ভাল সময়। দেশের কৃষিবিদ ও কৃষি বিশেষজ্ঞরা উচ্চফলনশীল চাইনিজ গ্রীণ, পুচা সংযোগ, পইনসেটী, এএইউসি ২, এএইউসি ৩ এবং এএইউসি ৪ জাতের শসা গাছ লাগাতে বলেন। শসার বীজ লাগানোর পূর্বে মাটি ঝুরঝুরা করে নিতে হবে। সার হিসাবে ব্যবহার করতে হবে ইউরিয়া, সুপার ফসফেট, পটাস ইত্যাদি।
মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
মুনালয়, দক্ষিন নাজিরপুর
ডাক ও থানা বানারীপাড়া, বরিশাল-৮৫৩০
Safiq69@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন