মিউচ্যুয়াল ফান্ড সেক্টরের কাঠামোগত বা আইনগত কোনো সমস্যা নেই। আসল সমস্যা শেয়ারবাজারের দীর্ঘমেয়াদি মন্দা। যদিও গত কয়েকমাসে তা থেকে অনেকটা উত্তরণ ঘটেছে। দেশের মিউচ্যুয়াল ফান্ডের কাঠামো ভারত ও আমেরিকা থেকেও শক্তিশালী। দীর্ঘমেয়াদে বাজার নিম্নমুখী হলে লভ্যাংশ দিতে পারেন না মিউচ্যুয়াল ফান্ডস। শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অভাব রয়েছে। এজন্য পুঁজিবাজারে স্পেশাল ফান্ড প্রয়োজন। আর আগামীতে মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতটি শেয়ারবাজারের মেরুদন্ডে পরিণত হবে।
‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ উপলক্ষে অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডস (এএএমসিএমএফ) এর আয়োজিত এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
গতকাল এএএমসিএমএফ ‘শেয়ারবাজার ও দেশের অর্থনীতিতে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের গুরুত্ব’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন এএএমসিএমএফ-এর সভাপতি ড. হাসান ইমাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এশিয়ান টাইগার ক্যাপিটাল পার্টনার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাফিজ আল তারিক। অনুষ্ঠান মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন অরুনাষ্ণু দত্ত। এছাড়া বক্তব্য রাখেন অ্যালায়েন্স ক্যাপিটাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের এমডি ও সিইও খান আসাদুল ইসলাম রিপন।
ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, আগামিতে মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতটি শেয়ারবাজারের মেরুদন্ডে পরিণত হবে। এছাড়া আগামী ৫ বছরের মধ্যে বাজার মূলধনের ২০ শতাংশ হবে এই খাতের। যা বাস্তবায়নে আমাদের অনেক সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের মন্দাবস্থা অন্যদেশের তুলনায় দীর্ঘস্থায়ী ছিল। দেশের মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো ২০০১ সালের একটি আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
ড. হাসান ইমাম বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডে কাঠামোগত সমস্যা আছে বলে অনেকে বলেছেন। অথচ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের কাঠামোতে কোনো সমস্য নেই। বাংলাদেশ এবং ভারত, আমেরিকা ও ইউরোপের মিউচ্যুয়াল ফান্ডের কাঠামোতে কোনো পার্থক্য নেই। বরং ভারত ও আমেরিকা থেকে আমাদের ট্রাস্টি রুলস অনেক কঠিন। আসলে আমাদের দেশের মিউচ্যুয়াল ফান্ড আইনে বড় কোনো সমস্যাও নেই এবং বড় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নেই। এটা আন্তর্জাতিক বেস্ট প্রাকটিস ফলো করে তৈরি করা হয়েছে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে শেয়ার হিসেবে ভুল ধারণা থেকে বেশ কিছু ইমেজ সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে। নেতিবাচক মন্তব্য মিউচ্যুয়াল ফান্ড সেক্টর সর্ম্পকে বিরুপ ধারণা তৈরি করেছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। যা ক্যাপিটাল মার্কেটের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
তিনি বলেন, এই ফান্ডের ইউনিট দর সম্পদ বিবেচনায় হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের বাজারে আরেকটি দর নির্ধারণ হয়। যাতে করে ১০ টাকার সম্পদের একটি ইউনিট ৪ টাকায়ও লেনদেন হয়। অথচ ওই ইউনিটের সম্পদ ১০ টাকাই রয়েছে। তারপরেও দরপতনের কারণে অনেকের ধারণা মিউচ্যুয়াল ফান্ড ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন মার্কেট যদি ভালো হয় অবশ্যই মিউচ্যুয়াল ফান্ড ভালো রিটার্ন দেবে। জুন মাসে আমাদের ফান্ডগুলোর ইউনিট প্রতি সম্পদ ১০ টাকার নিচে ৭ টাকায় চলে গিয়েছিল। কিন্তু এখন সবগুলো ১১ টাকার কাছাকাছি চলে এসেছে এবং কয়েক মাসেই ৪% থেকে ৫% লভ্যাংশ দেয়ার সক্ষমতা ফেরত পেয়েছে। বাজার ভালো থাকলে মিউচ্যুয়াল ফান্ড ডিভিডেন্ড দিতে পারবে ভালো।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদি মন্দাবস্থার কারণেই মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশ ও এনএভিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) আয়োজিত অপর এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কমিশনার ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিদেশিরা দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী। এ জন্য প্রযুক্তি আরও উন্নত করার আহ্বান জানান বিএসইসির এই কমিশনার। তিনি বলেন, টেকনোলজিকে আরও উন্নত করতে পারলে শেয়ারবাজারকে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বাহিরে নিয়ে যাওয়া যাবে। বিদেশিরা দেশের ক্যাপিটাল মার্কেটে বিনিয়োগে গভীরভাবে আগ্রহী। কারণ তারা তাদের দেশে ১ শতাংশও রিটার্ন পায় না। আমরা তাদের সুযোগ করে দিলে বিনিয়োগ আসবে। এ নিয়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করেছি।
শেখ সামসুদ্দিন বলেন, একসময় ৫০ লাখ টাকার লেনদেন হলেই অনেক মনে করা হতো। তবে এখন সেই পরিমাণ চলে এসেছে হাজার কোটিতে। এটা সম্ভব হয়েছে টেকনোলজির উন্নতির কারণে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির ওয়েবসাইট না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৫ শতাংশের ওয়েবসাইট নেই বা কাজ করে না। এছাড়া ওয়েবসাইট থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৭ শতাংশের সর্বশেষ আর্থিক হিসাব নেই। অথচ এগুলো থাকা বাধ্যতামূলক। কারণ একটি কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্য ওই কোম্পানির ওয়েবসাইটসহ অন্যান্য তথ্য থাকা উচিত। তিনি বলেন, ৩২টি কোম্পানির ৬২ পরিচালক মারা গেছেন। কিন্তু ওই কোম্পানিগুলোর ওয়েবসাইটে তার আপডেট নেই। এসবের কারণে বিনিয়োগকারীরাও সঠিক তথ্য পাচ্ছে না।
বিএমবিএর সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন আকন্দ ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন অংশ নেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএমবিএর সদস্য মীর মাহফুজ উর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএমবিএর সাধারণ সম্পাদক মো. রিয়াদ মতিন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন