শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহিলা

সফল স্বাবলম্বী নারী মনোয়ারা

প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আমাদের সমাজের আনাচে-কানাচে এমন অনেক নারী আছেন যারা অর্থনৈতিকভাবে ব্যক্তি জীবনে সফল, এসব নারী কিন্তু পারিবারিকভাবে উত্তরাধিকারী সম্পদ কিংবা উচ্চ শিক্ষার সার্টিফিকেট নিয়ে সফল হননি। তাদের সফলতার পিছনে যেটি ছিল তা হলো কঠোর পরিশ্রম আর দীর্ঘ ধৈর্যের একাগ্রতা। তেমনি একজন সফল নারী জাবি ক্যাম্পাসের মনোয়ারা বেগম। তিনি বটতলায় একটি বড় ভাতের হোটেলের মালিক এবং সাত বছর যাবৎ তিনি একাই এ দোকান চালাচ্ছেন, যেখানে তিনি আরো ১০ থেকে ১২ জন নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। এখানে প্রত্যেক কর্মচারীর বেতন ৪০০০ থেকে ৮০০০ টাকা। তার আজকের এই অবস্থানের পিছনে আছে ৩২ বছরের কঠোর পরিশ্রম ও সাধনা। মনোয়ারা বেগমের গ্রামের বাড়ি ছিল মানিকগঞ্জ জেলায়। সেখানে তার স্বামীর ছিল অনেক জায়গাজমি ও সহায় সম্পত্তি। কিন্তু ভাগ্যের লীলাখেলায় সব কৃষিজমি নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়।
উপায়ান্তর না পেয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে মনোয়ারা বেগম তার স্বামীকে নিয়ে তিন বাচ্চাসহ আশ্রয় নেন সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। উপরে খোলা আকাশ আর শতখানেক টাকাই ছিল তখন তাদের সম্বল, তার স্বামী তখন পিতৃ সম্পদ হারিয়ে দিশেহারা। জীবনের এই কঠিন মুহূর্তে সংসারের হাল ধরেন মনোয়ারা, নিজে কিছু আটা কিনে পিঠা বানাতে বসেন বেগম ফয়জুন্নেছা হলের সামনে আর স্বামীকে পাঠান কাঁচামালের তরকারি নিয়ে বিক্রি করার জন্য। এভাবে তিন চার বছর চলার পর কিছু টাকা হাতে হয়, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু আবাসিক ছাত্র খালাকে বলে, খালা আমাদের জন্য ভাত রান্না করেন, তখন খালা পিঠা রেখে ভাত রান্না করা শুরু করেন এবং আস্তে আস্তে একটু বেঁচে থাকার আলো দেখতে পান এবং সন্তানদের সামান্য পড়ালেখার জন্য স্কুলে পাঠান। এভাবে ১৫ -১৬ বছর যাওয়ার পর তিনি আরো কিছু টাকা পুঁজি করে বটতলায় আরো একটু বড় দোকান দেন এবং দু-চারজন কর্মচারী নেন এবং তার সন্তানদের জন্য কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা করেন। এতদিনে তার প্রাণপ্রিয় স্বামী শারীরিকভাবে অসুস্থ হন এবং দু-তিন বছর পর মারা যান। এরপর আস্তে আস্তে তার দোকান আরো বড় হতে থাকে এবং সচ্ছলতার দিকে ফিরে যান। এভাবে তাকে আর কখনো টাকার জন্য পিছনে ফিরতে হয়নি। আজ বটতলার ৪০টি দোকানের মধ্যে একমাত্র তিনিই একজন মহিলা একটি বড় দোকান পরিচালনা করছেন এবং ক্যাম্পাসের সকলের কাছে বটতলার খালা হিসেবে পরিচিত। এরপর আরো কিছু টাকা জমানোর পর ক্যাম্পাসের পিছনে জায়গা রেখে ঘর উঠান।
আজ তার ঘর আছে টাকা আছে কিন্তু এখন খাওয়ার কেউ নেই। কারণ তিন ছেলে আর এক মেয়ে বিয়ে করে আলাদা থাকে। ছোট ছেলে মাঝে মাঝে তার কাছ থেকে টাকা নেয়। বর্তমানে মনোয়ারার দোকানে ১২ জন নারী-পুরুষ কর্ম করে জীবন নির্বাহ করছে। নদীভাঙা সহায়-সম্বলহীন নারী ৩২ বছরের কঠিন সাধনায় শুধু নিজে স্বাবলম্বী হননি বরং ছেলেমেয়েদের সুন্দর ব্যবস্থা করে আরো ১২ জন মানুষের কর্মসংস্থানেরর ব্যবস্থা করেছেন। আজ আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছেলে অনার্স মাস্টার্স করে চাকরির জন্য হন্য হয়ে খুঁজছি অথচ আমাদের সামনেই একজন শুধু সাক্ষরতাসম্পন্ন নারী জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন কঠিন পরিশ্রম করে কোনো কাজকে ঘৃণা না করে।
য় জান্নাতুল মুমিনা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
০১৭৮৮৮৭৩৭৩৩

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Md. Abdul Gaffar ১৬ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০১ পিএম says : 0
ব্ট তলার খালাকে জাতীর সামনে তুলে ধরার জন্য জান্নাতুল মুমিনা আপনাকে ধন্যবাদ
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন