বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে অটো প্রমোশনের ব্যবস্থা সরকারের ‘ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত’। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ শিক্ষক সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে ‘পরীক্ষা ছাড়াই এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট: শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর প্রভাব পর্যালোচনা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক কামরুল আহসান।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, কেউ বলেছেন অটো পাস, কেউ বলেছেন করোনাকালে করুনার পাস। প্রথম প্রশ্ন যে, পরীক্ষাটা নেওয়া হবে না কেনো? যে যুক্তি দেখানো হয়েছে এই সরকারের মুখে এই যুক্তি শোভা পায় না। এই অটো প্রমোশন এটা সরকারের ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত। কারণ তারা (সরকার) অফিস আদালত চালু করে দিয়েছেন, কল-কারখানা চালু করে দিয়েছেন, তারা গণপরিবহন চালু করে দিয়েছেন, দোকানপাট চালু করে দিয়েছেন-সব কিছু চালু করে দিয়েছেন। কোথাও কোনো বাধা নেই। সবই চলতে পারবে শুধু পরীক্ষা নেওয়া চলতে পারবে না-এই যুক্তি ধোপে টিকবে না।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের স্কুল-কলেজ সব কিছু বন্ধ এখন। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অডিটোরিয়াম আছে, অনেক কমিউনিটি সেন্টার আছে- এসব কাজে লাগাতে পারতাম স্বাস্থ্য বিধি মেনেই আমরা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিতে পারতাম, সংক্ষেপে নিতে পারতাম, আ্ংশিকভাবে নিতে পারতাম। এমনকি হিসাব তো বলে যেটা একযোগে নেওয়া সম্ভব ছিলো। এগুলো সমস্ত কিছু বাদ দিয়ে আমরা কী দেখলাম একটা সময়ে সরকার বলে দিলেন না পরীক্ষা দেওয়া লাগবে না- সব পাস। এই যে সবাই পাস- এই কথাটা যদি আরো আগে বলা হতো তাহলে এই যে প্রায় কোটি কোটি টাকা যে অভিভাবকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এটা কিন্তু আর দরকার হতো না। কিন্তু এই টাকাটা নিয়ে নেওয়া হলো এবং এটা ফেরত দেয়া হবে না কিনা এব্যাপারে এখন পর্যন্ত স্পষ্ট কিছু বুঝা যাচ্ছে না।
পাকিস্তানের আমলে একবার অটোপাসে শিক্ষার্থীদের দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, অটো পাস বা বিনা পরীক্ষা পাসে কোনো মর্যাদা নাই। এটা পাকিস্তান আমলে যারা পাস করেছিলো- আমরা তো নিজেরা দেখেছি যে, তাদের কোনো মর্যাদা ছিলো না, যারা সেসময়ে অটো দিয়ে পাস করে এমএ পরীক্ষা দিতে গেছে বা ভর্তি হতে গেছে তাদের সেখানে কোনো মর্যাদা ছিলো না, সমাজে কোনো মর্যাদা ছিলো না। এমনকি বিযে-সাদী এটা নিয়ে কথা হতো আর কি অটোপাস। এবারও তাই হবে এবং এবার আরো বেশি হবে এই কারণে যে, এটা এইচএসসি। এরপরে গ্রাজুয়েশন আছে, মাস্টার্স আছে। সবটা সময়ে তাদেরকে সমস্যায় পড়তে হবে। প্রাকটিক্যালি তাদের সম্পর্কে কিছুই জানা গেলো না যে তারা কে কতটা মেধাবী, কোন বিষয়ে কে কতটা ভালো বা মন্দ এর কিছু বুঝা গেলো না। ফলে উচ্চতর শ্রেনীতে তাকে ভর্তি করা বলেন বা কাজ দেয়া বলেন কোনো ব্যাপারে তার মেধার বা তার সামর্থের কোনো বিবেচনা করার সুযোগ রাখলো না। অটো প্রমোশনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিরপেক্ষ শিক্ষাবিদদের পরামর্শ নেওয়া উচিত ছিলো।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, অনেকে বলেছেন, যদি নিরপেক্ষ ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের ডেকে তাদের মতামত নেওয়া হতো তাহলে সম্ভবত একটা ভালো পথ বেরিয়ে আসতো যে পথে আমরা দেশকে এই সংকট থেকে মুক্ত করতে পারতাম। তাদের মতামত নেওয়া হয় নাই। সরকার প্রয়োজন মনে করে নাই। অর্থাৎ অর্থ উপার্জন যতখানি গুরুত্বপূর্ণ সমাজে মানুষরা যাতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ না জানায় যাতে সেটা যতখানি গুরুত্বপূর্ণ আমাদের শিক্ষা সরকারের কাছে ততখানি গুরুত্বপূর্ণ না। আগামী দিনের নাগরিক যারা তাদেরকে যথাযথভাবে তৈরি করা, প্রস্তুত করা সরকারের কাছে ততখানি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় নাই।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, পৃথিবীর বহু দেশে প্রবৃদ্ধি কম হয়ে যাচ্ছে তখন আমাদের দেশে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। এই প্রবৃদ্ধি কার? আমাদের তথ্য তো বলে বাংলাদেশে শতকরা ৫ ভাগ মানুষের হাতে রাষ্ট্রের শতকরা ৯৫ভাগ সম্পদ রয়েছে। রেকর্ড তো বলে, আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণা বলে যে, নতুন কোটিপতি তৈরির সবচেয়ে বড় কারখানা হলো বাংলাদেশ। এখানে প্রতিবছর দেশী নতুন কোটিপতি সৃষ্টি হচ্ছে। আবার একটাই সেই দেশ যে, এই কোবিড কালে এক কোটি ৬৪ লক্ষ মানুষ নতুন করে গরীব হয়েছে-এই রিপোর্ট এসছে। দেশের এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে জনগনকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবানও জানান তিনি।
সংগঠনের আহবায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়ার পরিচালনায় আলোচনা সভায় সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রইস উদ্দিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সোহেল রানা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, শিক্ষক কর্মচারি ঐক্যজোটের জাকির হোসেন, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির অধ্যাপক কাজী মাইনুদ্দিন, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির মাওলানা মো. দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন