সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ইরফান ও তার দেহরক্ষীর ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন

নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধর-হত্যাচেষ্টা মামলার শুনানি আজ পুরান ঢাকায় স্বস্তি : ইরফান ও তার সহযোগীর বিরুদ্ধে র‌্যাবের চার মামলা : কারাগারে কোয়ারেন্টিনে সহযোগীসহ ইরফান : সেই দিপু গ্

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০১ এএম

ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইরফান সেলিমের ও তার সহযোগিদের গ্রেফতারে রাজধানীর পুরান ঢাকার বাসিন্দারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। এছাড়া ওই এলাকার সর্বস্তরের মানুষকে উচ্ছাস প্রকাশ করতেও দেখা গেছে। একই সাথে গ্রেফতারকৃতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও করেছেন সবাই।

গতকাল চকবাজার, লালবাগ, দেবীদাস ঘাট লেনে ঘুরে এবং ওই এলাকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। অন্যদিকে কলাবাগানে নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধর ও হত্যাচেষ্টা মামলায় ইরফান সেলিম এবং তার দেহরক্ষী জাহিদের সাত দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক (নিরস্ত্র) আশফাক রাজীব হায়দার দুই আসামিকে গ্রেফতার দেখানোসহ রিমান্ড আবেদন করেন। আজ বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূরের আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে আবেদনের ওপর শুনানি হবে। এছাড়া হাজী সেলিমের মালিকানাধীন মদীনা গ্রুপের প্রটোকল অফিসার এবি সিদ্দিক দিপুকে (৪৫) তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। এছাড়া মাদক, অস্ত্র ও ওয়াকিটকিসহ গ্রেফতার ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে র‌্যাব। এছাড়া তার সহযোগী এমডি জাহিদের বিরুদ্ধেও মাদক ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, গত সোমবার রাতে কাউন্সিলর ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী এমডি জাহিদকে গ্রেফতারের পর মঙ্গলবার দুজনের নামে পৃথক চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সব মামলায় অস্ত্র ও মাদক আইনে হয়েছে। র‌্যাব বাদী হয়ে চকবাজার থানায় মামলাগুলো করেছে।

পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইরফান সেলিম দীর্ঘদিন থেকে ওই এলাকায় রাজ্যত্ব কায়েম করছিলেন। তার বাহিনীর সদস্যরা চাঁদাবাজি, নির্যাতন, জমিদখল ও বিভিন্ন অবৈধ কাজের সাথে জড়িত ছিল। তাদের বিরুদ্ধে কেই কথা বললে নিয়ে যাওয়া হত টর্চার সেলে। সেখানে নির্যাতন করে হতো। এমনকি রাতে মদ পান করে এলাকায় ঘোরাঘুরি করতেন কাউন্সিলর ইরফান সেলিম। এসময় তার সঙ্গে থাকতো তিন লাখ টাকায় কেনা দুটি বিদেশি কুকুর ও আট থেকে দশজন দেহরক্ষী। এদিকে, এতদিন ইরফানের ভয়ে ভীত থাকলেও তার বাসায় র‌্যাবের অভিযানের পর মুখ খুলতে শুরু করেছেন স্থানীয়রা। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বস্ত্র চলছে ইরফান কান্ডের আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।

গতকাল সরেজমিনে ওই এলাকা গিয়ে দেখা গেছে, এলাকার প্রতিটি দোকানে চার-পাঁচজন করে লোক জড়ো হয়ে পত্রিকা পড়ছেন। এছাড়াও ইফরানের অতীতের কর্মকান্ড নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা করছেন।
দেবীদাস ঘাট লেনের চাঁন সরদার দাদা বাড়ীতে গিয়ে দেখা গেছে, ওই বাড়ির গেটে তালা ঝুলানো রয়েছে। ভেতরে কয়েকজন লোক বসে আসেন। এছাড়া ওই বাড়ি থেকে কয়েকটি বাসা পরেই বড় কাটারাস্থ চাঁন সরদার ভবনের অবস্থান। সেই ভবনে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইরফান সেলিমের কার্যালয় রয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকজন লোক ভবনের বাহিরে ও ভেতরে অবস্থান করেছেন। তাদের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা অপারগতা প্রকাশ করেন এবং সেই এলাকা থেকে চলে যেতে বলেন। তবে স্থানীয়রা জানান, অভিযানের পর থেকে ইরফান বাহিনীর লোকজন ওই এলাকায় অবস্থান করেছেন এবং ইফরান বাহিনীর বিরুদ্ধে যাতে কেউ কথা না বলতে পারে সেই ব্যবস্থা করেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম রাতে মদপান করতো। তিন লাখ টাকায় কেনা দুটি বিদেশি কুকুর নিয়ে প্রায় সময় রাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করতো। সেসময় তার সঙ্গে থাকতো দেহরক্ষীরা। কাউন্সিলরকে রাস্তায় মদ্যপ অবস্থায় দেখার পর কারও কিছু বলার সাহস ছিল না।

ইরফান সেলিমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা দিপু গ্রেফতার:নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধর ও হত্যার হুমকির মামলায় সেলিমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এবি সিদ্দিকী দিপুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ডিএমপির রমনা গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল টাঙ্গাইল থেকে তাকে গ্রেফতার করে।

পুলিশ জানায়, গোয়েন্দা তথ্যে অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর টাঙ্গাইল থেকে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি এবি সিদ্দিকী দিপুকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে ধানমন্ডি থানায় তাকে সোপর্দ করা হয। এরপর গতকাল তাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। পরে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সত্যব্রত শিকদার তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

কারাগারে কোয়ারেন্টিনে ইরফান:ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার পর ইরফান সেলিমকে কেরানীগঞ্জের কারাগারে পাঠানো হয়। সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল রকিবুল হাসান।

গতকাল ঢাকার জেলার মাহবুবুল ইসলাম জানান, করোনাভাইরাস মহামারীকালে কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো নতুন বন্দিকে একটি সেলে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। তাই কারাগারে পাঠানোর পর ইরফান সেলিম ও জাহিদুল ইসলামকেও ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, করোনার শুরু থেকেই আমরা নতুন আসা বন্দিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে দুই সপ্তাহের কোয়ারেন্টিনে রাখি। ইরফান সেলিম ও জাহিদুল ইসলামকেও দুই সপ্তাহের কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। কোনও উপসর্গ পেলে করোনা টেস্ট করা হবে।

উল্লেখ্য, গত রবিবার রাতে ধানমন্ডি এলাকায় সংসদ সদস্যের স্টিকারযুক্ত হাজী সেলিমের একটি গাড়ি থেকে নেমে নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মো. ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন সোমবার ধানমন্ডি থানায় দায়ের করা মামলায় ইরফান সেলিম ছাড়াও হাজী সেলিমের প্রোটোকল অফিসার এবি সিদ্দিক দিপু, ইরফানের দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদ এবং গাড়িচালক মিজানুর রহমানের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও তিনজনকে আসামি করা হয়।

তাদের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে পথরোধ করে সরকারি কর্মকর্তাকে মারধর, জখম ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগ আনেন মামলার বাদী ওয়াসিফ আহমেদ খান। মামলা হওয়ার পরপরই গাড়ির চালক মিজানুরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আর কয়েক ঘন্টার মধ্যে পুরান ঢাকায় হাজী সেলিমের ওই বাড়ি ঘিরে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। এ সময় অস্ত্র ও বিপুল পরিমান মাদক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত মোহাম্মদ ইরফান সেলিমকে ১৮ মাসের সাজা দিয়েছেন।

এদিকে, গতকাল দুপুরে ধানমন্ডি থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানান থানার ওসি ইকরাম আলি মিয়া জানান, সাজাপ্রাপ্ত ইরফান সেলিম ও জাহিদকে নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় পুনগ্রেফতার দেখানো হবে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই মামলায় অজ্ঞাত আরও ২-৩ আসামিকে চিহ্নিত করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
কে এম আরিফুল ইসলাম ২৮ অক্টোবর, ২০২০, ১:২২ এএম says : 0
Alhamdulillah
Total Reply(0)
দুর্বার ২৮ অক্টোবর, ২০২০, ১:২৩ এএম says : 0
নৌ কর্মকর্তার ওপর হামলার কারনে এখন সব অপকর্ম বেড়িয়ে আসতছে।তার আগে প্রশাসন কোথায় ছিলো।।আর তার বাসায় অস্ত্র পেয়েছে।তাহলে এটা কে কেনো জঙ্গি আস্তানা বলা হচ্ছে না।
Total Reply(0)
Abdul Barek ২৮ অক্টোবর, ২০২০, ১:২৪ এএম says : 0
যে সব ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতাদের হাতে একজন সামরিক কর্মকর্তা নিরাপদ নয় তাদের হাতে দেশের সাধারণ জনগণ কি ভাবে নিরাপদ থাকবে?
Total Reply(0)
Zahangir Khan ২৮ অক্টোবর, ২০২০, ১:২৫ এএম says : 0
এই বিচার টা শুধু মাত্র নৌবাহিনী বলে সম্ভব হইছে, অন্য কোন বাহিনী বা প্রশাসনের মানুষ হলে এতো দ্রুত বিচার সম্ভব হতো না। সাধারণ মানুষ হলে তো উল্টো বিচার হতো।
Total Reply(0)
sohel Rana ২৮ অক্টোবর, ২০২০, ১:২৫ এএম says : 0
What about landlord haji Selim?
Total Reply(0)
Sheikh Solaiman ২৮ অক্টোবর, ২০২০, ১:২৬ এএম says : 0
এত সব অপরাধ করেও সাময়িক বরখস্ত,,,লজ্জা লাগতেছে শুনে,,এতেই বুঝা যায় আইন শুধু আওয়ামীলীগের জন্য,,সাধারন জনগনের জন্য নয়।করোনা সাহেদের যদি অস্র মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়,,তাহলে এর তো ফাঁশি হওয়া উচিৎ।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন