হাজী সেলিম পুত্র ইরফান সেলিমের বাসায় অভিযানে যা পাওয়া গেছে তাই র্যাব মামলায় দেখিয়েছে এবং সেভাবেই মামলা করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ তাদের তদন্তে যা পেয়েছে তারা তাই দাখিল করেছে। বর্তমানে ইরফান সেলিমের মামলাটি আদালতে বিচারাধীন, সেটি আদালত বুঝবে। আদালতের বিষয় নিয়ে এখনই মন্তব্য করা উচিত নয়। গতকাল মঙ্গলবার র্যাব সদর দফতরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন র্যাব ডিজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে র্যাব সেবা সপ্তাহে রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করে র্যাব। অন্যদিকে বর্তমানে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও মাদক অভিযানে গিয়ে হামলার শিকার হচ্ছেন। মাদকবিরোধী অভিযান যেকোনো সময় বড় ধরনের সহিংসতায় রূপ নিতে পারে। একই অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, গত সোমবার ৪জানুয়ারি ময়মনসিংহে একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। একজন র্যাব সদস্য মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়েছিলেন। সেখানে মাদক কারবারীদের হাতে ওই র্যাব সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। ঘটনার ভয়াবহতা এমনই ছিল মাদককারবারীরা র্যাব সদস্যের মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছেন। ওই র্যাব সদস্য এখন একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে। মাদকের পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যেকোনো মাদকবিরোধী অভিযানে বড় ধরনের সহিংসতার রূপ নিতে পারে। এই বাস্তবতায় কেবলমাত্র আসামিপক্ষের নয় সশস্ত্র র্যাব সদস্যরাও মাদকব্যবসায়ীদের দ্বারা হামলার শিকার হচ্ছেন। তারই একটি নজির সোমবার ময়মনসিংহে ঘটলো।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ইরফানের বাসায় আমরা অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানে যে সব মালামাল পাওয়া যায় বিশেষ করে ওয়াকিটকি— এসবের ভিত্তিতে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছেন। সেগুলো লিপিবদ্ধ করে আমরা থানায় মামলা করি। পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্মকর্তা যে প্রতিবেদন দিয়েছেন সে বিষয়ে আমরা অবহিত নই। তিনি তার বাস্তবতা ও অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে যা পেয়েছেন তার ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে কী আছে সেটা আমরা পেলে এ বিষয়ে পরবর্তীতে জানাতে পারব।
পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে ইফরান সেলমিকে দায়মুক্তি দেয়ায় র্যাবের অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, র্যাব যে অভিযানটি পরিচালনা করেছিল সে সময় বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অভিযানে যেসব আলামত পাওয়া গিয়েছিল তার ভিত্তিতে মামলাগুলো করা হয়েছে। পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্মকর্তা যেসব বিষয় বিবেচনা করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন, এ বিষয়ে র্যাব অবহিত নয়।
তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব নারাজি দেবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আশিক বিল্লাহ বলেন, পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন আমাদের হাতে আসার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন নাকি র্যাবের অভিযান, জনগণ কোনটাকে বিশ্বাস করবে এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, র্যাব বাংলাদেশ পুলিশেরই একটি বিশেষায়িত বাহিনী। বাংলাদেশ পুলিশের যেসব শাখা আছে তার মধ্যে র্যাব অন্যতম। এ রকম একটি বাস্তবতায় আমরা অভিযানে যেসব আলামত ও মালামাল পেয়েছি সেগুলো সুনির্দিষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। র্যাব সব অভিযানে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে যেসব আলামত পাওয়া যায় তা এজাহারে উল্লেখ করে। যে সময় ঘটনা ঘটে তার বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করে মামলা করা হয়। সুতরাং র্যাবের সকল কার্যক্রম এক ধরনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে হয়ে থাকে। এ বাস্তবতায় র্যাব নিরপেক্ষ ও চাপমুক্তভাবে অভিযান পরিচালনা করে।
পুলিশের তদন্ত প্রশ্নবিদ্ধ কিনা জানতে চাইলে লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, পুলিশের তদন্তের বিষয়ে র্যাব মনে করে পুলিশের যারা তদন্ত করেছেন তারা এই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারবেন। নতুন বছরে র্যাবের কর্মপরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে র্যাবের জন্ম হয়েছিল। তিনটি ম্যান্ডেটের মধ্যে রয়েছে জঙ্গিবাদ দমন, মাদক, ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার। এই তিনটি ম্যান্ডেটকে সামনে রেখে র্যাবের জন্ম হয়ে়ছিল। র্যাব প্রতিষ্ঠার গত ১৪ বছর ধরেই এই অগ্রযাত্রায় সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে র্যাব। চলতি বছরে র্যাবের লক্ষ্য হবে যে এই তিনটি বিষয়ে যেন জনগণের আস্থা ধরে রাখতে পারি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন